করোনা মোকাবেলায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নানান উদ্যোগ

বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করার কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দুর্যোগকালীন সময়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) কর্তৃপক্ষ পরিস্থিতি সামাল দিতে বেশিকিছু উদ্যোগ গ্রহন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যা দেশব্যাপী সমাদৃত হয়েছে।

জানা যায়, বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাস বাংলাদেশে শনাক্ত হওয়ার পর থেকেই পরিস্থিতি সামাল দিতে উদ্যোগ নিতে করে শুরু করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কোভিড-১৯ এর বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা থেকে শুরু করে দুঃস্থদের ত্রাণ বিতরণ, প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অসহায়দের জন্য অর্থ সহায়তা, করোনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর মেশিন প্রদান সব কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে কর্তৃপক্ষ।

চিকিৎসকদের পিপিই প্রদান
গত ২৯ এপ্রিল নিজেদের সুরক্ষিত রেখে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (গাউন, মাস্ক, হ্যান্ড সেনিটাইজার ও গ্লাবস) বিতরণ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার।

করোনা নিয়ে গবেষণা
কোভিড-১৯ এর জিন ও উৎপত্তিগত বিষয় ও জনসাধারণের সচেতনতার প্রকৃতি এবং তা কার্যকর করার পদ্ধতি নির্ণয়, দেশ ও দেশের সংস্কৃতিকে কিভাবে প্রভাবিত করছে কোভিড-১৯- তা নিয়ে গবেষণায় নেমেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ঝাঁক গবেষক দল। ভাইরাসটির অবস্থান ও প্রকোপ নির্ণয়ে ট্র্যাকিং অ্যাপসও তৈরি করেছেন তারা।

ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম গঠন
এর আগে গত ৮ এপ্রিল ভাইরাসটি মহামারি আকার ধারণ করার কারণে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) পরিবারের পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার লক্ষ্যে ‌‌‌‌’ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম’ নামের একটি টিম গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিআইটিআইডিকে করোনা শনাক্তের মেশিন প্রদান
এর আগে গত ৭ এপ্রিল বাংলাদেশ ইনিস্টিউট অফ ট্রপিক্যাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজের (বিআইটিআইডি) কাছে করোনাভাইরাস শনাক্তকরণের কাজে ব্যবহৃত রিয়েল-টাইম পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশন (আরটি-পিসিআর) মেশিন হস্তান্তর করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া বিআইটিআইডির সাথে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণে সমন্বিতভাবে কাজ করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি টিম।

প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে অনুদান প্রদান
গত ৬ এপ্রিল করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর কল্যাণ ও ত্রাণ তহবিলে এককোটি টাকার আর্থিক অনুদান দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

নমুনা শনাক্তকরণে চবি শিক্ষার্থীরা
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭ শিক্ষার্থী বর্তমানে দেশের সাতটি ল্যাবে নমুনা শনাক্তকরণের কাজ করছেন। প্রতিদিন ল্যাব টেকনোলজিস্টদের সংগ্রহ করে নিয়ে আসা সন্দেহভাজন রোগীদের নমুনা নিয়ে কাজ করেন তাঁরা। এই শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ বিনা পারশ্রমিকে করোনাযুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন। শুধু বিবেকের দায় ও দেশপ্রেম থেকে এই কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরা। ল্যাবে করোনা শনাক্ত পরীক্ষার শুরুর একেবারে প্রথম থেকে যুক্ত আছেন। মূলত তাঁদের অংশগ্রহণের পরেই এই ল্যাবের কার্যক্রম পায় দ্রুতগতি, বাড়তে থাকে শনাক্তকৃত নমুনার সংখ্যা ও সক্ষমতা।

ক্যাম্পাসে নমুনা পরীক্ষার উদ্যোগ
চট্টগ্রামে করোনা রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলায় ক্যাম্পাসেই করোনার নমুনা শনাক্তের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। নমুনা শনাক্তের অনুমতির জন্য ১২ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের অনুমতি মিললে শীঘ্রই করোনার নমুনা পরীক্ষা করবে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

ধারাবাহিক ত্রাণ বিতরণ
বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করায় উদ্ভুত পরিস্থিতিতে লকডাউনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী, আশপাশের দুঃস্থ ও অস্বচ্ছল শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রতিনিয়তই ত্রাণ বিতরণ করে চলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য।

সর্বশেষ, ২৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ে দৈনিক ভিত্তিতে (মাস্টাররোল, খন্ডকালীন) নিয়োজিত স্বল্প আয়ের কর্মচারীদের মাঝে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ হতে ত্রাণ বিতরণ করেন উপাচার্য।

এর আগে গত ৫ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন দপ্তরে দৈনিক ভিত্তিতে নিয়োজিত কর্মচারী এবং ক্যাম্পাসে বসবাসরত স্বল্প আয়ের কর্মচারীদের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন উপাচার্য।

এছাড়াও চবি ‘ইফেসকু’ এলামনাই এসোসিয়েশন, ‘এসো মানুষের জন্য কিছু করি’ সংগঠন, চবি শিক্ষক সমিতিসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ত্রাণ বিতরণ করা হয়।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, করোনাভাইরাস ইস্যুতে ইউজিসি ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সার্বিক সহযোগিতায় বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রকল্প এ মুহুর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের গবেষকরা অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে এগিয়ে এসে এই পরিস্থিতির সঙ্গে প্রাসঙ্গিক কিছু গবেষণা প্রকল্প পরিচালনা করছেন।

উপাচার্য আরো বলেন, আমাদের অভিজ্ঞ শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন ল্যাবে করোনা শনাক্তকরণে কাজ করছে। আমরা বিআইটিআইডিকে করোনা শনাক্তের জন্য একটি পিসিআর মেশিন প্রদান করেছি। আমাদের আরো তিনটি মেশিন আছে তা দিয়ে আমরা নমুনা পরীক্ষা করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ে চিঠি দিয়েছি। অনুমতি পেলে আমরা ক্যাম্পাসে নমুনা পরীক্ষা করতে পারবো।

তিনি বলেন, আমরা আমাদের অবস্থান থেকে করোনা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছি।

এসএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!