করোনায় কাবু এস আলম পরিবার আইসিইউ থেকে গেল কেবিনে

‘সদকা’র গরু পটিয়ার দুই এতিমখানায়

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এস আলম পরিবারের সদস্যদের শারীরিক অবস্থার আরও উন্নতি হয়েছে। এই পরিবারের করোনায় আক্রান্ত সাত সদস্যই গত শনিবার (২৩ মে) থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন ঢাকার ধানমণ্ডিতে আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। মঙ্গলবার তাদের সবাইকে আইসিইউ ওয়ার্ড থেকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়েছে বলে এস আলম পরিবারের ঘনিষ্ঠ সূত্র নিশ্চিত করেছেন। তবে ওই কেবিনগুলোতেও প্রয়োজনে আইসিইউ সুবিধা ব্যবহারের সুবিধা রাখা হয়েছে। রোববার এস আলম পরিবারের সদস্য আবদুস সামাদ লাবুকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও সোমবার (২৫ মে) তিনিও আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চলে এসেছেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে তাদের সবারই করোনার ফলোআপ নমুনা পরীক্ষা করা হবে সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে মঙ্গলবার (২৬ মে) এস আলম পরিবারের গ্রামের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ায় সুন্নিয়া মাদ্রাসাসহ দুটি মাদ্রাসার এতিমখানায় ‘সদকা’ হিসেবে দুটি গরু দেওয়া হয়েছে এস আলম চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের পরামর্শে।

গত শনিবার ও রোববার এস আলম পরিবারের সব সদস্যই চট্টগ্রাম ছেড়ে ঢাকায় চলে যান। এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যানের করোনায় আক্রান্ত মা ও বড় ছেলেকে শনিবার (২৩ মে) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর সুগন্ধা আবাসিক এলাকার ১ নম্বর রোডের বাসা থেকে সরিয়ে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর রোববার (২৪ মে) সকাল আটটায় করোনায় শয্যাশায়ী অপর চার ভাই ও এক ভাইয়ের স্ত্রীকে আইসিইউযুক্ত অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।

এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদ বাংলাদেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে ১৮ মার্চ সিঙ্গাপুরে যান। সেখানে তার সঙ্গে রয়েছেন স্ত্রী ফারজানা পারভীন পপি, মেজ ছেলে আশরাফুল আলম ও ছোট ছেলে মাহির আলম। ১৭ মে পরিবারে করোনা হানা দেওয়ার পর থেকেই তিনি সেখান থেকে তার পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার বিষয়টি প্রতিনিয়ত মনিটর করে যাচ্ছেন বলে পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে।

এর আগে সোমবার (২৫ মে) সকালেই চিকিৎসাধীন সবারই অক্সিজেন সাপোর্ট সরিয়ে নেওয়া হয়। করোনায় আক্রান্ত প্রতিটি সদস্যই বর্তমানে খাবারদাবারও করছেন স্বাভাবিকভাবেই। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকদের কোনো বিধিনিষেধ নেই জানিয়ে পারিবারিক সূত্র জানিয়েছেন, নিয়মিত ওষুধের পাশাপাশি তারা শুধু গরম পানি খাচ্ছেন ও তার ভাপ নিচ্ছেন। চিকিৎসকরা প্রত্যেককেই টেনশনমুক্ত বিশ্রামের পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের চিকিৎসার পুরো বিষয়টি সার্বক্ষণিক দেখভাল করছেন ইউনাইটেড হাসপাতালের কার্ডিওলজি ব্ভিাগের চিকিৎসক ডা. তানভীর আহমেদ। সম্পর্কে তিনি সাইফুল আলম মাসুদের ভাগ্নে।

গত এক সপ্তাহে দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতি এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম মাসুদের পরিবারের মোট আটজন সদস্য চট্টগ্রাম নগরীর সুগন্ধার বাসায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। এর মধ্যে শুক্রবার (২২ মে) রাত ১০টা ৫০ মিনিটে এস আলম পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য এবং শিল্পপতি সাইফুল আলম মাসুদের বড় ভাই মোরশেদুল আলম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ ওয়ার্ডে মারা গেছেন।

১৭ মে মোরশেদুল আলমসহ সাইফুল আলম মাসুদ পরিবারের ৬ সদস্য করোনা পজিটিভ রোগী হিসেবে শনাক্ত হন। এই পাঁচজন হলেন এস আলম গ্রুপের পরিচালক ৬০ বছর বয়সী রাশেদুল আলম, এস আলম গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান ৫৩ বছর বয়সী আবদুস সামাদ লাবু, ইউনিয়ন ব্যাংক ও এস আলম গ্রুপের পরিচালক মোহাম্মদ শহীদুল আলম এবং এস আলম গ্রুপের পরিচালক ৪৫ বছর বয়সী ওসমান গণি। এছাড়া করোনায় আক্রান্ত হন ওই পরিবারের ৩৬ বছর বয়সী এক নারীও— তিনি ওসমান গণির স্ত্রী।

এরপর ২৩ মে পাঁচ ভাইয়ের পর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন সাইফুল আলম মাসুদের মা ৮৫ বছর বয়সী চেমন আরা বেগম এবং ২৬ বছর বয়সী ছেলে আহসানুল আলম মারুফ।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!