করোনার নমুনাজটে নাজেহাল চট্টগ্রাম, চবির ওপর শেষ ভরসা

করোনার রেড জোনের মুখে চট্টগ্রামের ১৬ থানার মধ্যে ১২ থানাই। পিছিয়ে নেই উপজেলাও। করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার জন্য একটির জায়গায় হয়েছে তিনটি ল্যাব। নমুনা পরীক্ষা শুরুর অপেক্ষায় রয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও একটি ল্যাব। সন্দেহভাজন রোগীর সাথে বেড়েছে নমুনা সংগ্রহও। কিন্তু সে অনুপাতে কমেনি নমুনাজট। প্রতিদিন তিন ল্যাবে জমা পড়ছে প্রায় ৬০০ থেকে ৮০০ নমুনা। আর তিন ল্যাবের মাত্র ছয়টি আরটি-পিসিআর মেশিনেই চলছে নমুনা পরীক্ষা। সক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ পরীক্ষা করে যাচ্ছে ফৌজদারহাটের বিশেষায়িত ল্যাব বিআইটিআইডি ও চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ল্যাব। তবু নমুনাজটের চিত্র বদলায়নি একটুও।

এখন পর্যন্ত করোনার প্রধান পরীক্ষাগার ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি ল্যাবে এক হাজারেরও বেশি নমুনা জমে আছে। চমেক ল্যাবেও আছে অনেকটা একই পরিমাণের। একই সাথে নতুন করে বাড়ছে নমুনা সংগ্রহের হার। সংশ্লিষ্টদের আশা ছিল, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা শুরু হলে এই জটের সমাধান কিছুটা হলেও হবে। কিন্তু ত্রুটিপূর্ণ কিটের কারণে পিছিয়ে গেছে সেখানকার নমুনা পরীক্ষাও। তাই চট্টগ্রামের নমুনাজটের সমাধানের পথ শীঘ্রই আর কাটছে না। পিসিআর মেশিন না বাড়ালে এ নমুনা জট কমানোর সুযোগ নেই বলেও মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, প্রথমদিকে বিআইটিআইডিতে চট্টগ্রাম বিভাগের প্রতিদিন নমুনা জমা পড়তো চার থেকে পাঁচটি। এরপরে পুরো চট্টগ্রাম বিভাগ থেকে ধীরে ধীরে নমুনা সংগ্রহ বেড়ে হয় ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০। অথচ পরীক্ষার ফল জানা যায়, তার অর্ধেকেরও কম। বিআইটিআইডিতে নমুনা পরীক্ষা চালু হওয়ার দুই মাস নয় দিনে সর্বোচ্চ ফল এসেছে আড়াইশোর মতো। অন্যদিকে একইভাবে চমেক ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা চালু হওয়ার ২৬ দিনে সর্বোচ্চ নমুনা পরীক্ষার ফল এসেছে প্রায় আড়াইশো। তবে সিভাসুর ল্যাবে দিনে সর্বোচ্চ দেড়শো নমুনা পরীক্ষা করা হয়ে থাকে।

চমেক ল্যাবে নমুনা জট প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চিকিৎসক বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গা থেকে নমুনা আসছে। মাত্র দুটি আরটি-পিসিআর মেশিন কাজ চলছে। আমাদের লোড অনেক। আমাদের প্রায় তিন চারজন অসুস্থ। আরও তিনজন একটু একটু অসুস্থ। তাও তারা কাজ করে যাচ্ছে। তারাও অসুস্থ হয়ে গেলে চমেকও বন্ধ করা লাগবে। আমাদের মরণ অবস্থা কিন্তু কেউই বুঝতেছে না।’

এ বিষয়ে বিআইটিআইডির ভারপ্রাপ্ত ল্যাব ইনচার্জ অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘নমুনা জট অনেক আছে। এখন আরও নমুনা জট বাড়বে। হাটহাজারী, রাঙ্গুনিয়া, রাউজান, রাঙামাটি এগুলো যদি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়কে দেওয়া যেত তাহলে কিছুটা হলেও নমুনাজট কমতো। কিন্তু এখনও কিছু সমস্যার কারণে তারা পরীক্ষায় যেতে পারছে না। আমরা এখনও জুনের এক তারিখেরগুলো পরীক্ষা করছি। প্রতিদিন প্রায় ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ নমুনা আসছে। প্রায় এক হাজারের ওপরে নমুনা জমা আছে। তাছাড়া আমাদের যেহেতু তিন দিন বন্ধ ছিল, জুনের এক তারিখে একসঙ্গেই এসেছে ৯০০ নমুনা। এখন আমরা এবং সিভাসু মিলে সেগুলো কাভার করার চেষ্টা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘সিভাসু ১২০টার মত নমুনা পরীক্ষা করছে। আমরাও টু হান্ড্রেড প্লাস পরীক্ষা করছি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শুরু হলে হয়তো আমাদের লোড কিছু কমে যেত। কিন্তু এখন না হওয়ায় আলটিমেটলি নমুনা বাড়ছে এবং সামনে আরও বাড়বে।’

ডা.জাকির বলেন, ‘দুটি আরটি-পিসিআর মেশিন দিয়ে সক্ষমতার বেশি কাজ চলছে। এর মধ্যে একটি ধার করে আনা মেশিন। তার ওপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বলছে তাদের নমুনা পরীক্ষা শুরু হলে তাদের মেশিন নিয়ে যাবে। আমরা মেশিনের ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। উনারাও দেবেন বলেছেন, কিন্তু কবে পাবো জানি না। মেশিন না বাড়লে আসলে নমুনা জট কমানোর সম্ভাবনা নেই।’

একই প্রসঙ্গে ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মোস্তফা খালেদ আহমদ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘নমুনা জট কমানো আসলেই কঠিন। সন্দেহজনক রোগী বাড়ছে, নমুনাও বাড়ছে। আমাদের ক্যাপাসিটি কিন্তু বাড়তেছে না। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শুরু করতে গিয়েও পিছিয়ে গেছে। তাদের শুরু হলে আমাদের নমুনা জট কিছুটা কমবে। বিআইটিআইডির শাকিল সাহেব অসুস্থ থাকায় তিন দিন পরীক্ষা বন্ধ ছিল। আসলে বিভিন্ন কারণে নমুনাজট আছে। শুধু এখানে না, সব জায়গায় নমুনা জট রয়েছে।’

আরটি-পিসিআর মেশিন বাড়ানোর ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আসলে পিসিআর মেশিন সস্তা কোনো কিছু না। চমেকে আরেকটা মেশিন দেওয়ার জন্য অধিদপ্তরে অনুরোধ জানিয়েছি। অনেক জায়গায় আবার একটাও নাই। তাই উনারাও তাৎক্ষণিকভাবে কিছু দিতে পারছে না। উনাদেরকে বলা হয়েছে। কোনো এক সময় আসবে। কিন্তু কবে আসবে সেটা বলা যাচ্ছে না।’

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, ‘এখনও আমাদের বিআইটিআইডির রিপোর্ট পেতে চারদিন লাগে। চিটাগং মেডিকেল আগে একদিন বা দুইদিনে দিত। এখন চারদিনে চলে গেছে। তারাও ডেইলি আড়াইশো-তিনশো করে নমুনা সংগ্রহ করছে। ইউনিভার্সিটি চালু হলে নমুনা জট কমতে পারে। এখন দেখা যাক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কতটা সাপোর্ট দিতে পারে। তার ওপরে নির্ভর করবে। যদি ৫০০ সাপোর্ট দিতে পারে, তাহলে নমুনা জট তেমন একটা হবে না। আর বুথ থেকে দিনে ৩০টির বেশি নমুনা সংগ্রহ হবে না।’

এসআর/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!