‘কব্জির জোরে’ চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ক্যান্টিন দখলে নিলেন বিমান কর্মকর্তা

দরপত্রের চুক্তিপত্র অমান্য করে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি ক্যান্টিনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের এক কর্মকর্তা। বৈধ ঠিকাদারকে উচ্ছেদ করে দরপত্র আহবান ছাড়াই নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে ওই ক্যান্টিন পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের যানবাহন শাখার ইনচার্জ রফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ উঠেছে, ‘বিশেষ সুবিধা’ পাওয়ার আশায় বিমানের যানবাহন শাখার ইনচার্জসহ কয়েকজন কর্মকর্তার যোগসাজশে বৈধ ঠিকাদারকে উচ্ছেদ করা হয়। দখলের পর ক্যান্টিনটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয় স্থানীয় আব্দুল মাবুদ নামে এক ব্যবসায়ীকে। এ নিয়ে কোনো দরপত্রও আহবান করা হয়নি বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, চলতি বছরের ১৫ মার্চ বিমান ক্যান্টিন থেকে বৈধ ঠিকাদারকে বের করে দেওয়া হয়। একই দিন বিমান কর্তৃপক্ষ একসঙ্গে দুটি চিঠি দেয় ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক বরাবরে।

প্রথম চিঠিতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেড থেকে দরপত্রমূলে নেওয়া ক্যান্টিনটির মালামাল ও চাবি হস্তান্তর করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। অপর চিঠিতে ক্যান্টিনটি পরিচালনায় চুক্তির ১১ নম্বর ধারা শর্ত ভঙ্গের কারণে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এরপর ওই চিঠি পাওয়ার তারিখ থেকে পরের এক সপ্তাহের মধ্যে জরিমানা টাকা না দিলে ঠিকাদারের নিরাপত্তা জামানত থেকে ওই জরিমানা কাটা হবে বলে উল্লেখ করা হয়।

চুক্তিতে বলা আছে, দুই বছর পর চুক্তির মেয়াদ পার হওয়ার পর নতুন ঠিকাদার নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত একই মূল্যে ক্যান্টিনের পরিচালনা কার্যক্রম আগের ঠিকাদারই চালিয়ে নেবে। কিন্তু চুক্তির বিধি না মেনে ১৫ মার্চ সন্ধ্যার দিকে ক্যান্টিন চালু থাকা অবস্থায় কর্মচারীদের বের করে আব্দুল মামুদ নামে এক ব্যক্তিকে বুঝিয়ে দেয় বিমান কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি দরপত্রের মাধ্যমে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ক্যান্টিন পরিচালনার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হয় দরপত্রদাতা চট্টগ্রামের সুমী ট্রেডিং কর্পোরেশনের স্বত্ত্বাধিকারী শোয়েব উদ্দিন মাহমুদের। প্রতি বছর এক লাখ টাকায় এই চুক্তি প্রতি দুই বছর পর পর নবায়ন করার কথা রয়েছে। গত ৭ বছর ধরে এই চুক্তি অনুযায়ী ক্যান্টিনটি পরিচালনা করে আসছেন ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

অভিযোগ রয়েছে, ২০১৯ সালে হজ ডিউটি দেখিয়ে অবৈধভাবে ওভারটাইম গ্রহণের অভিযোগে প্রায় ৭ মাস আগে ঢাকা থেকে শাস্তিমূলক বদলি হয়ে চট্টগ্রামে যোগদান করেন যানবাহন শাখার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম। এর আগে ঢাকায় কর্মরত থাকাকালীন বিমানের কেন্দ্রীয় যানবাহন শাখার কর্মচারীদের সঙ্গে অসদাচরণ, বিমানের কর্মকর্তাদের ফাইল গায়েব করাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তিনি চট্টগ্রামে এসেই ক্যান্টিন পরিচালনায় নিজের পছন্দের লোক নিয়োগের তৎপরতা শুরু করেন।

এ বিষয়ে মেসার্স সুমী ট্রেডিং কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপক মো. হুমায়ুন কবির বলেন, ‘গত ১৫ মার্চ সন্ধ্যায় ক্যান্টিন চালু থাকা অবস্থায় আমার ক্যান্টিনের কর্মচারীদের জোর করে বের করে দেন যানবাহন শাখার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম এবং সুপারভাইজার গোলাম আমানুল্লা হক সবুজসহ একদল লোক। পরে তাদের পছন্দের লোককে ক্যান্টিনটি পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২০১৩ সাল থেকে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে এটি পরিচালনা করে আসছি। আমার বিরুদ্ধে চুক্তিভঙ্গের যে অভিযোগ এনে জরিমানা করার কথা উল্লেখ করেছে, তা সঠিক নয়। চুক্তি অনুযায়ী নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ না দেওয়া পর্যন্ত দরপত্রমূলে ঠিকাদার হিসেবে ক্যান্টিন পরিচালনা করার অধিকার আমার।’

এদিকে দরপত্র ছাড়াই ক্যান্টিনের পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া আব্দুল মামুদ বলেন, ‘গত ১৫ মার্চ থেকে আমাকে ডেকে নিয়ে বিমান ক্যান্টিনটি শর্তসাপেক্ষে পরিচালনা করার জন্য দেওয়া হয়। বিমান কর্তৃপক্ষ আমাকে দিয়েছে। করোনাকালে ক্যান্টিনটি বন্ধ থাকায় সেই সময় থেকে এখন পর্যন্ত আমি পরিচালনা করে আসছি। কর্তৃপক্ষ যা সিদ্ধান্ত দেবে, তা মাথা পেতে নেবো।’

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের চট্টগ্রামের যানবাহন শাখার ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম ও সুপারভাইজার সবুজকে মুঠোফোনে একাধিবার কল করার পর সাড়া মেলেনি।

তবে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক (শিল্প সম্পর্ক) জহুরুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘বিমান ক্যান্টিনটি দখল হয়নি। আগে যিনি ঠিকাদার ছিলেন, তার চুক্তিপত্রের মেয়াদ শেষ হওয়ায় দরপত্র না হওয়া পর্যন্ত একজনকে পরিচালনার জন্য দেওয়া হয়েছে।’

মুআ/এফএমও/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!