কক্সবাজারের গুরুত্বপূর্ণ সড়কে ঝুঁকিপূর্ণ গর্ত : দায়িত্ব অবহেলায় পৌর কর্তৃপক্ষ!

এস এম আরোজ ফারুক, কক্সবাজার ॥

সড়ক ও জনপদ বিভাগ এবং পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারনে শহরের প্রায় সবগুলো সড়কের বেহাল দশা। রাস্তার মাঝখানে বিশাল বিশাল গর্ত আর খানাখন্দে যানবাহন চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়েছে সড়কগুলো। এই অবস্থায় সাধারণ জনগণের দূর্ভোগের কোন অন্ত না থাকলেও আক্কেল হচ্ছে না কর্তৃপক্ষের।
সদর হাসপাতালের রাস্তাটি জনসাধারণের জন্য অতি গুরত্বপূর্ণ ও ব্যস্ততম যাতায়াত মাধ্যম। এই সড়কটি ধরে প্রতিদিন শত শত মানুষ চিকিৎসা সেবা নিতে যান হাসপাতালে। কিন্তু এই সড়কেই রয়েছে বিশাল আকারের তিনটি ঝুঁকিপূর্ণ মেনহোলের গর্ত আর ছোট মাঝারি গর্ত তো আছেই।

dsc_0011

অতি গুরুত্বপূর্ণ কোন সড়কে সংস্কার কাজ চললে অথবা ঝুঁকিপূর্ণ গর্ত থাকলে সেখানে সতর্কতামূলক লাল চিহ্ন বা লাল নিশান দেয়া থাকে। কিন্তু জেলা স্টেডিয়ান ও হাসপাতালের ঠিক মাঝখানের এই সড়কটিতে ঝুঁকিপূর্ণ গর্ত থাকলেও সেখানে কোন ধরনের সতর্কতামূলক নিশান নেই। এতে করে থেকেই যাচ্ছে দূর্ঘটনার সম্ভবনা। দীর্ঘদিন ধরেই এই গর্তটি একই অস্থায় থাকলেও সেটি ঢাকার জন্য এখন পর্যন্ত কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।

 

স্থানীয় কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, অনেক দিন আগে থেকে এই গর্ত সৃষ্টি হয়েছে প্রথমদিকে গর্তটি ছোট থাকলেও বর্তমানে তা অনেক বড় হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ গর্তে পরিনত হচ্ছে। গর্তটি মূলত ড্রেনের উপরে হওয়ায় ঝুঁকির মাত্রা বেশি বলে মনে করছেন তারা।

 
স্থানীয় যুবক মামুন আহমেদ বলেন, হাসপাতাল সড়ক ও স্টেডিয়াম সড়কের মোড়ে অর্থাৎ সংযোগ স্থলে এই গর্তটি, এর ফলে গর্তে পড়ে দূর্ঘনার সম্ভবনা বেশি থাকে। অনেক সময় রিক্সাসহ বিভিন্ন যানবাহন গর্তে পড়ে দূর্ঘটনাও ঘটছে প্রায় সময়।
এদিকে কক্সবাজার পৌরসভার ভিআইপি সড়ক হিসেবে পরিচিত সার্কিট হাউস সড়কটি বর্তমানে মরণ ফাঁদে পরিণত হয়েছে। এক বছরে তিন বার কাজ করেও কাজ গুলো নি¤œমানের হওয়াতে বর্তমানে বেহাল অবস্থা বিরাজ করছে। চলতি বর্ষার শুরুতে সড়কের বিভিন্ন স্থানে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। সড়কটিতে শতাধিক খানাখন্দের সৃষ্টি হলেও পৌর কতৃপক্ষ এখন পর্যন্ত তা মেরামতের কোন ব্যবস্থা নেয়নি। সড়কটি সংস্কার না করায় খানাখন্দগুলো এখন ছোট থেকে বড় গর্তে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তবুও প্রয়োজনের তাগিতে প্রতিদিনই হাজার হাজার মানুষ বাধ্য হয়েই ঐ রাস্তা দিয়েই চলাচল করছে।
এ সড়কে রয়েছে হিলটপ, হিল ডাউন সার্কিট হাউস, বিএমএ রেষ্ট হাউস, নৌ বাহিনী ঘাটিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আফিস ও প্রতিষ্ঠান। যেখানে রাষ্ট্র ও সরকারের সর্বোচ্চ ব্যক্তি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সচিব, মন্ত্রী, এমপি সহ কক্সবাজার ভ্রমণে আসা ভিভিআইপিরা অবস্থান করেন। রয়েছে জেলার সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, নৌ ও সেনা বাহিনী, বিভাগীয় বন কর্মকর্তাসহ বেশ কিছু সরকারি উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তার বাস ভবন।

 

আরো রয়েছে সিভিল সার্জন কার্যালয়, জেলা ও সাব রেজিষ্ট্ররের কার্যালয়, আδলিক পাসপোর্ট কার্যালয়। আবার এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন চলাচল করছে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও দেশ-বিদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতাল, ক্লিনিকে আসা মহিলা ও শিশু সহ গর্ভবতী, বৃদ্ধ ও হতাহত অসংখ্য রোগী। আদালত ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সহ বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে জরুরী কাজে আসা লোকজন।

 

বার্মিজ মার্কেট-বৌদ্ধ মন্দির সহ শহরের ভেতরে যাতায়তকারী পর্যটক। আর নিয়মিত যাতায়ত করছে অসংখ্য সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী ও স্থানীয় লোকজন। এমন গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি মাসের পর মাস ধরে এমন অবস্থা বিরাজ করলেও দেখার যেন কেউ নেই। বর্তমানে এ সড়কটির এমন অবস্থার কারণে যাদের ব্যক্তিগত গাড়ি আছে তারা অনেকেই বিকল্প সড়ক ব্যবহার করলেও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে মধ্যবিত্ত ও নিন্মবিত্ত জনগণকে।

 

দক্ষিণ বাহারছড়া এলাকার যুবক মহিম উদ্দিন বলেন, হোটেল মোটেল জোন, কলাতলী, লাইট, বাহারছড়াসহ বিভিন্ন এলাকার হাজারো মানুষ প্রতিদিন এই ভিআইপি সড়ক দিয়ে প্রয়োজনীয় কাজে শহরে যান। কিন্তু বর্তমানে এই সড়কটির বিকল্প হিসেবে অনেকে হাইওয়ে সড়ক দিয়ে শহরে প্রবেশ করছেন। তবে এর ফলে অতিরিক্ত প্রায় ৩ কিঃমিঃ রাস্তা ঘুরে শহরে প্রবেশ করতে হচ্ছে এতে করে যেমনি সময় নষ্ট হচ্ছে তেমনি টাকাও বেশি খরচ হচ্ছে। অন্যদিকে হাইওয়ে সড়ক দিয়ে চলাচল করায় দূর্ঘটনার ঝুঁকিও বাড়ছে।

 

তিনি বলেন কিছু দূর্নীতিবাজরা সড়ক মেরামতের দায়িত্ব পান যার ফলে প্রতি বছর সড়কটি সংস্কার করলেও ছয় মাস যেতে না যেতেই রাস্তাটি আবার চলাচল অযোগ্য হয়ে যায়।
লাইট হাউজের বাসীন্দা আব্দুল গফুর বলেন, এ বছর বর্ষার শুরুতে এ সড়কে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়। পুরো বর্ষা জুড়ে খানাখন্দ গুলো ভরাটে কতৃপর্ক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেনি। অন্ততপক্ষে শুরুতে ইট-খোয়া দিয়ে মোরামত করলেও আজ এ অবস্থার সৃষ্টি হতো না। পৌরসভার কাজ গুলো যে নিম্নেনমানের তা জাম্বুর মোড়ের পর থেকে সওজ’র সড়ক দেখলেই তা বোঝা যায়।
এছাড়াও শহরের অভ্যন্তরিন সড়কের দশাও বেশ নাজুক। লালদিঘী থেকে শুরু করে আলীরজাহাল পর্যন্ত রাস্তার অনেকাংশ গর্তে ভরা। খুরুশকুল সড়কের পুরোটাতে ছোট বড় শত শত গর্তে পরিপূর্ণ।
কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী জানান, হাসপাতাল সড়কটি সংস্কারের দায়িত্ব ৯ নং ওয়ার্ডের কমিশনার হেলাল উদ্দিন কবিরকে দেয়া হয়েছে। তিনি খুব দ্রুত কাজটি শুরু করবেন বলে আমাকে জানিয়েছেন।

 

আর সার্কিট হাউসস্থ সড়কটি সংস্কার করতে গিয়ে বৃষ্টি মৌসুম চরেল আসায় পুরো কাজটি শেষ করা হয়নি। তবে এবছর বৃষ্টিতে রাস্তার অনেক ক্ষতি হয়েছে। এখন বৃষ্টি শেষ আমরা অল্প সময়ের মধ্যে ভাঙ্গা রাস্তাগুলোর কাজ শুরু করবো।
তবে কমিশনার হেলাল উদ্দিন কবিরের সাথে কথা বললে তিনি জানান, এই কাজের টেন্ডার এখনো হয়নি আর আমাকেও কোন কাজের দায়িত্ব দেয়া হয়নি। হয়তো কাজটির দায়িত্ব আমাকে দেয়া হবে।

এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!