ওমানে চট্টগ্রামের নারী সাংসদ আটক, ১৮ নেতাকে ছাড়েনি রয়্যাল পুলিশ

১৮ ঘন্টা পর মুচলেকায় মুক্ত সাংসদ

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ ওমানে চট্টগ্রামের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাংসদ খাদিজাতুল আনোয়ার সনিকে প্রায় ১৮ ঘন্টা আটকে রেখেছিল দেশটির রয়্যাল পুলিশ। ওমানের স্থানীয় একাধিক সূত্র ছাড়াও ওমানে বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি সূত্র এ খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

ওমানের রাজধানী মাসকাটের বাণিজ্যিক কেন্দ্র রুয়িতে অবস্থিত হোটেল ‘হাফা হাউস’।
ওমানের রাজধানী মাসকাটের বাণিজ্যিক কেন্দ্র রুয়িতে অবস্থিত হোটেল ‘হাফা হাউস’।

মঙ্গলবার (১ আগস্ট) ওমান সময় রাত ১০টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা) ওমানের রাজধানী মাসকাটের বাণিজ্যিক কেন্দ্র রুয়িতে এই ঘটনা ঘটে। ওই সময় ওমান রয়্যাল পুলিশের ১৫-২০টি গাড়ির বহর পুরো হোটেল ঘিরে ফেলে। ওমান সময় রাত ১১টার দিকে সেখান থেকে সাংসদ সনি ছাড়াও অন্তত ১৮ জনকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয়। এর মধ্যে নিজ কন্যাসহ সাংসদ সনিকে ১৮ ঘন্টা আটকে রাখার পর বাংলাদেশ দূতাবাসের মধ্যস্থতায় মুচলেকা নিয়ে বুধবার (২ আগস্ট) বেলা ১১টায় ছেড়ে দেওয়া হয়।

এদিকে বুধবার (২ আগস্ট) বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা কোনও কিছু জানি না। আমরা জানি না যে এ রকম কোনও সংসদ সদস্য সেখানে বেড়াতে গেছেন। কোনও ব্যক্তি যদি যান, সেটি ব্যক্তিগত উদ্যোগে। সরকারিভাবে আমরা কাউকে পাঠাইনি এ মুহূর্তে এবং এই তথ্য আপনার কাছে শুনলাম।’

তবে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে আলাপে ওমানে পুলিশি বাধায় মহিলা এমপির মিটিং ভন্ডুল হওয়ার তথ্য পেয়েছেন বলে স্বীকার করেন। তার দাবি অনুমতি না নিয়ে এমপি বৈঠকে বসেছিলেন, পুলিশ এসে সেটি বন্ধ করে দেয়। আটক বা পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে তিনি বিস্তারিত জানেন না বলে দাবি করেছেন।

খাদিজাতুল আনোয়ার সনি ফটিকছড়ির সাবেক সংসদ সদস্য রফিকুল আনোয়ারের কন্যা এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য।

জানা গেছে, সোমবার (৩১ জুলাই) রাতে সাংসদ খাদিজাতুল আনোয়ার সনি এক ব্যক্তিগত সফরে ওমানের রাজধানী মাসকাটে পৌঁছান। মাসকাট বিমানবন্দরে এ সময় তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান ওমানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. নাজমুল ইসলামের পক্ষে দ্বিতীয় সচিব আছাদুল হকসহ দূতাবাসের কর্মকর্তারা। ওই সময় তাকে শুভেচ্ছা জানাতে আসেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারাও।

ওমানে স্থানীয় আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, সাংসদ খাদিজাতুল আনোয়ার সনি মূলত ব্যক্তিগত সফরে ওমানে এসেছেন। তিনি আসার পর সংবর্ধনা নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলে কয়েকটি সংগঠন এ নিয়ে উদ্যোগী হয়। কিন্তু এমন আয়োজনের খবর পেয়ে ওমানের বাংলাদেশ দূতাবাস তাতে অসম্মতি জানায়। যেহেতু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা ছিল না, এজন্য দূতাবাস সাংসদ সনিকে প্রটোকল দিতেও অস্বীকৃতি জানায়।

ওমানের বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে ওই নেতা দাবি করেন, রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ আয়োজনে ওমান কর্তৃপক্ষের কড়াকড়ির কথা উল্লেখ করে বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তারা এ ধরনের কোনো আয়োজন না করার জন্য সতর্ক করে দেয়। তারা সব আয়োজন শুধুমাত্র ঘরোয়াভাবে সীমাবদ্ধ রাখার জন্য অনুরোধ জানান সংশ্লিষ্টদের।

জানা গেছে, ওমানের রাজধানী মাসকাটের বাণিজ্যিক কেন্দ্র রুয়িতে অবস্থিত ‘হাফা হাউস’ নামের একটি হোটেলে সাংসদ খাদিজাতুল আনোয়ার সনিকে সংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজন করা হয়। আয়োজক হিসেবে ব্যানারে ‘বাংলাদেশ কমিউনিটি’র কথা উল্লেখ করা হলেও এতে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, চট্টগ্রাম সমিতিসহ কয়েকটি সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার (১ আগস্ট) ওমান সময় রাত ১০টায় (বাংলাদেশ সময় রাত ১২টা) সংবর্ধনা সভা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ পর ওমান রয়্যাল পুলিশের অন্তত ২০টি গাড়ির বহর রাজধানী মাসকাটের বাণিজ্যিক কেন্দ্র রুয়িতে অবস্থিত ‘হাফা হাউস’ নামের হোটেলটি ঘিরে ফেলে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে এ সময় সেখানে উপস্থিত অনেকে আশেপাশে পালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও সাংসদ সনি ছাড়াও অন্তত ১৮ জনকে আটক করে ওমান পুলিশ। এদের প্রায় সকলেই সংবর্ধনা সভার আয়োজক। আটকদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে যাদের নাম পাওয়া গেছে, তারা হলেন ওমান আওয়ামী লীগের নেতা সবুজ সিকদার, নোমান, তৌহিদ, মান্নান প্রমুখ। তাদের বিরুদ্ধে ওমান সরকারের অনুমতি ছাড়া রাজনৈতিক সভা আয়োজনের অভিযোগ আনা হয়েছে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।

ওমানে বাংলাদেশ দূতাবাসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করলেও বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, ‘বিষয়টি অ্যাম্বাসির সেকেন্ড সেক্রেটারি দেখছেন। আপনি উনার সঙ্গে কথা বলুন।’

পরে অ্যাম্বাসির সেকেন্ড সেক্রেটারি ছাড়াও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সফল হওয়া যায়নি।

সনির দাবি, আটকের বিষয়টি সত্য নয়
এদিকে ‘আটকের বিষয়টি সত্য নয়’ দাবি করে বাংলাদেশের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের কাছে খাদিজাতুল আনোয়ার সনি বলেন, গত ৩১ জুলাই তিনি একটি পারিবারিক সফরে ওমানে গিয়েছেন। সঙ্গে মেয়েসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা রয়েছে। তার আগমন উপলক্ষে সেখানে ওমান আওয়ামী লীগ, ওমান যুবলীগ ও বঙ্গবন্ধু পরিষদের পক্ষ থেকে একটি সভার আয়োজন করা হয়। এ ধরনের সভা করতে আয়োজকরা পূর্বে অনুমতি নেননি। ফলে পুলিশ গিয়ে সভা বন্ধ করে দেয়। এতে গ্রেপ্তারের কোনো ঘটনা ঘটেনি।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!