‘এখন দইজ্জের তল দিয়ে গাড়ি চলে’, টানেল উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের কাছে ভোট নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে। আমাদেরকে ওই সমস্ত ভয় দেখিয়ে লাভ নেই। খালেদা জিয়া ভোট চুরি করেছিল। এ কারণে তাদেরকে একবার ক্ষমতা ছাড়তে হয়েছিল। আমরা বাবা-মা সব হারিয়েছি। দুই বোন বাইরে থাকায় বেঁচে গেছি। বাংলাদেশের যখন এসেছি তখন খুনিদের দল ক্ষমতায় ছিল। এখানে আসার পর অনেক বাঁধা পেয়েছি। আমাকে বার বার হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমার একটাই কাজ দেশের মানুষের কল্যাণ করা। আর কোন চাওয়া-পাওয়া নেই। শুধু আপনাদের দোয়া চাই। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আজকে কর্ণফুলী টানেল পেয়েছেন, স্বাধীনতা পেয়েছেন, উন্নয়ন পেয়েছেন। আজকে আমার কাছে ওয়াদা করেন নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আপনারা আবার আমাকে জেতাবেন কি-না?

শনিবার (২৮ অক্টোবর) চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে আয়োজিত জনসভায় এসব কথা বলেন তিনি। চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ এ জনসভার আয়োজন করে আনোয়ারা কেইপিজেড মাঠে।

এতে শেখ হাসিনা বলেন, চট্টগ্রামকে বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে বিবেচনা করে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হাতে নেওয়া হয়েছে। আমরা উন্নয়ন করছি, আর বিএনপি জ্বালাও-পোড়াও করছে। আমরা বয়স্ক, বিধবা ও প্রতিবন্ধী ভাতা দিচ্ছি। যাতে কোনো লোক কষ্ট না পায়। আজকে বিনাপয়সায় বই দেওয়া হচ্ছে। আমরা বৃত্তি-উপবৃত্তি দিচ্ছি। আজকে সকলের হাতে মোবাইল ফোন। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার ঘোষণা ২০০৮ সালে দিয়েছিলাম। আজকের সমস্ত বাংলাদেশে ডিজিটাল নেটওয়ার্ক আছে। সারাদেশে বহুমুখী উন্নয়ন প্রকল্প দিয়ে আমরা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, ২০১৮ সালে সরকারে এসে আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক দ্বারা অব্যাহত রেখেছে। যার কারণে বাংলাদেশে আজকে মানুষের ভাতের কষ্ট নেই। সবাই দুই বেলা খেতে পারছে। আমরা বিনাপয়সায় ঘর করে দিচ্ছি। ১৯৯১ সালে ঘূর্ণিঝড়ের বাড়িঘর যারা হারিয়েছে, তাদের জন্য আমরা কক্সবাজারে ফ্ল্যাট করে দিয়েছি। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর বাংলায় কেউ গৃহহীন থাকবে না। প্রত্যেক মানুষকে জীবন-জীবিকার ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। আমাদের যুব সমাজকে ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করে দিচ্ছি। যারা বিদেশে যান, আমার অনুরোধ দালালকে টাকা দিয়ে যাবেন না। আমি কর্মসংস্থান ব্যাংক করে দিয়েছি। সেখান থেকে জামানত ছাড়া ঋণ পাবেন। লোকজনকে বিভিন্ন ভাষা শেখার জন্য আমরা সুযোগ করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, ইউক্রেন ও রাশিয়ার যুদ্ধ, এখন আবার গাজা ও ইসরাইল যুদ্ধ। এ কারণে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। তবে আমরা এক কোটি পরিবারকে কার্ড দিয়েছি। এটি দিয়ে তারা স্বল্পমূল্যে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য নিতে পারছে। করোনার সময় আমরা বিনামূল্যে টিকা দিয়েছি। পৃথিবীর অনেক ধনী দেশ দিতে পারেনি। আমরা দিয়েছি, যাতে আপনারা সুরক্ষিত থাকেন। গ্রাম পর্যায়ের রাস্তাঘাট করে দিয়েছি। চট্টগ্রামের এত উন্নয়ন করেছি, এর আগে কেউ করেনি।

বিএনপির কাজ মানুষ খুন, লুটপাট ও দুর্নীতি করা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, খালেদা জিয়া এতিমের টাকা আত্মসাৎ করেছে। এ মামলায় তিনি সাজাপ্রাপ্ত। তার ছেলে তারেক রহমান বিভিন্ন মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে বিদেশে পালিয়ে আছে। সে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে মুচলেকা দিয়ে দেশ ছেড়েছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, আজকে আপনাদের জন্য আমি একটি ছোট্ট উপহার নিয়ে এসেছি। এটি হল টানেল। এখন দইজ্জার তল দিয়ে গাড়ি চলে। দক্ষিণ এশিয়ায় এত বড় আর টানেল নেই। আগামীকাল টানেল জনসাধারণ চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। এখন ঢাকা থেকে কক্সবাজার যেতে চট্টগ্রাম চট্টগ্রামের ভেতরে ঢুকে যানজট পড়তে হবে না। টানেলটি এশিয়ান হাইওয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। যা আমাদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে।

তিনি বলেন, রোদের মধ্যে অনেক কষ্ট করে আপনারা উপস্থিত রয়েছেন। এ জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি সব হারিয়েছি ৭৫ এর ১৫ আগস্ট। বাবা শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের রাজপথের রাষ্ট্রপতি ছিলেন। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমার পরিবার-পরিজনের সবাইকে হত্যা করা হয়েছে। আমি তাদের মাগফেরাত কামনা করি। আমি ও আমার ছোট বোন বিদেশে ছিলাম। তাই বেঁচে গিয়েছিলাম। ছয় বছর আমাদেরকে আসতে দেওয়া হয়নি। পরে জোর করে দেশে ফিরেছি দেশের মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে।

সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকে চট্টগ্রামেও খেলা, ঢাকায়ও খেলা। খেলা হবে তাহলে। সব রেডি। ঢাকায় ফখরুল অপশক্তিকে নিয়ে ফাউল করা শুরু করেছে। লাঠিসোঁটা, রড ও চাল-ডালের বস্তা নিয়ে তারা মাঠে নেমেছে। এরা ফাউল করছে, এদের লাল কার্ড দেখাতে হবে। এদের সাথে কোন আপস নয়। এরা দুর্নীতিবাজ। দুর্নীতির বিরুদ্ধে খেলা হবে। এর অর্থপাচারকারী। এদের বিরুদ্ধে খেলা হবে। ভোট চোরের বিরুদ্ধে, লুটপাটের বিরুদ্ধে, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে খেলা হবে। সামনে কোয়ার্টার ফাইনাল। জানুয়ারিতে ফাইনাল। আমরা সবাই প্রস্তুত, সবাই ঐক্যবদ্ধ।

তিনি বলেন, টানেল দেখে জ্বালা। দক্ষিণ এশিয়ায় হয়নি, ভারতে হয়নি, নেপালে হয়নি, শ্রীলঙ্কায় হয়নি। শুধুমাত্র বাংলাদেশে হয়েছে। বাংলাদেশের চট্টগ্রামে হয়েছে। কে করেছে? শেখ হাসিনা করেছে। যতদিন টানেল থাকবে, ততদিন শেখ হাসিনার নাম থাকবে।

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, নিজেরা নিজেদের বিরুদ্ধে চায়ের দোকানে বসে যারা সমালোচনা করবেন, তাদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দলের শৃঙ্খলা মানতে হবে। না হলে খেলায় জেতা যাবে না। আমরা আজকে তৃতীয় মুক্তিযুদ্ধে অবতীর্ণ। আজকে নতুন করে মুক্তিযুদ্ধ করতে হবে। কারণ বিজয় তো এখনো আমরা সংহত করতে পারেনি।
Mashud
Mashud Forhan Ovi
আরএম/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!