চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ এমন ঘটনা অতীতে আর কখনও ঘটেনি। নগর কমিটি বিলুপ্ত হবে— এমন খবর পেয়ে চট্টগ্রাম নগরের ওয়ার্ড, থানা ও কলেজ ইউনিট মিলিয়ে একদিনেই রেকর্ডসংখ্যক ১৩টি ইউনিটের কমিটি অনুমোদন দিল চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগ।
অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন এলাকার দাগী সন্ত্রাসী, কিশোর গ্যাং লিডারও এসব কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন। এমন কাণ্ডের জন্য নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু এবং সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরকে দায়ী করছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
বিভিন্ন কারণে সমালোচনায় থাকা নগর ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদের শেষ পর্যায়ে অনুমোদন দেওয়া এসব কমিটিতে কোন নিয়ম নীতি না মেনে অছাত্র, প্রশাসনের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসীদের নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ উঠছে সংগঠনটির নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে পাশাপাশি কমিটি গঠনে স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ এনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন মহানগর ছাত্রলীগের পদে থাকা নেতারাও।
বুধবার (১০ ফেব্রুয়ারি) মহানগর ছাত্রলীগের ১৩টি কমিটি অনুমোদন দেওয়ার কথা নিশ্চিত করেছেন নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর। এগুলো হচ্ছে— বাকলিয়া থানা, চকবাজার থানা, হালিশহর থানা, বায়েজিদ থানা, পাহাড়তলী থানা, ১৭ নম্বর বাকলিয়া ওয়ার্ড, ১৯ নম্বর বাকলিয়া ওয়ার্ড, ১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ড, ১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ড, ১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ড, ২৫ নম্বর রামপুরা ওয়ার্ড এবং হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ ছাত্রলীগ।
বাকলিয়া থানা ছাত্রলীগের কমিটিতে মিজানুর রহমানকে আহ্বায়ক করে ১১ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক ও ১৩ জনকে সদস্য করা হয়।
চকবাজার থানা ছাত্রলীগের কমিটিতে জাহিদুল ইসলাম ইরাককে সভাপতি ও জিএম তৌসিফকে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
হালিশহর থানা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক করা হয়েছে আব্দুর রহিম জিসানকে। এই কমিটির এক নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক মোহাইমিনুল হক চৌধুরী।
বায়েজিদ থানা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক পদে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে সুলতান মাহমুদ ফয়সালকে, এই কমিটির এক নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক রুবেল খান।
পাহাড়তলী থানা ছাত্রলীগের সভাপতি করা হয়েছে মো. আশিকুর রহমান প্রিন্সকে, এই কমিটির সাধারণ সম্পাদক পদে আছেন ইয়াছিন আরাফাত আরমান।
হাজী মুহাম্মদ মহসীন কলেজ ছাত্রলীগের আহ্বায়ক পদে আছেন কাজী নাঈম ও এক নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান। এই কমিটিতে ৫ জনকে যুগ্ম আহ্বায়ক এবং ৩২ জনকে সদস্য করা হয়।
১৭ নম্বর বাকলিয়া ওয়ার্ড কমিটিতে সভাপতি করা হয়েছে রিয়াজ উদ্দিন কাদেরকে এবং সাধারণ সম্পাদক
সুহৃদ বড়ুয়া শুভ।
১৯ নম্বর বাকলিয়া ওয়ার্ড কমিটির সভাপতি গোলামুর রহমান চৌধুরী রিজান, সাধারণ সম্পাদক মো. ইমতিয়াজ হোসেন রাহাত।
১৬ নম্বর চকবাজার ওয়ার্ডে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান রাসেল।
১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি মাহফুজ আহমেদ ফাহিম, সাধারণ সম্পাদক নাঈম উদ্দিন তৌসিফ।
১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ড ছাত্রলীগ সভাপতি হান্নান খান ফয়সাল, সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন ইমন।
২৫ নম্বর রামপুরা ওয়ার্ড ছাত্রলীগ সভাপতি জাবেদ রহিম মুন, সাধারণ সম্পাদক ইমরান হোসেন বাবু।
মেয়াদের শেষ পর্যায়ে নগর কমিটির কারো সাথে আলাপ আলোচনা না করে নিজেদের ইচ্ছেমত দেওয়া এসব কমিটিকে প্রত্যাখান করেছেন মন্তব্য করে নগর ছাত্রলীগের অর্থ বিষয়ক উপ সম্পাদক ইমরান আলী মাসুদ বলেন, ‘মহানগর ছাত্রলীগের কমিটির মেয়াদ গেছে অনেক বছর আগে। ইমু-দস্তগীর দুজনই বয়স্ক এবং অছাত্র। তারা নগর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে আলোচনা না করে নিজেদের মাই ম্যান দিয়ে যেসব কমিটি করেছে এসব কমিটির কোন অর্থ হয় না। আমরা এসব কমিটিকে প্রত্যাখ্যান করছি। এসবে করে তারা মূলত সংগঠনকে দুর্বল করার ষড়যন্ত্র করছে।’
এসব বিষয়ে কথা বলতে নগর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমরান আহমেদ ইমু ও সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের সাথে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও সফল হওয়া যায়নি।
এআরটি/সিপি