একটুকু অক্সিজেন চেয়েও পাননি ম্যাক্স হাসপাতালেরই করোনা উপসর্গের ডাক্তার

করোনা জানতেই ফোন কেটে দেন এমডি

ম্যাক্স হাসপাতালেরই চিকিৎসক তিনি— মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। কিন্তু যখনই ওই চিকিৎসক করোনাভাইরাসের উপসর্গে আক্রান্ত হলেন, তখনই তার নিজের কর্মস্থল মুহূর্তেই অন্য রূপ ধারণ করলো। যন্ত্রণায় যখন ওই চিকিৎসক কাতর, শ্বাসকষ্ট যখন তার তীব্র— তিনি ভাবলেন নিজের হাসপাতালে কেবিনে ভর্তি হয়ে অন্তত অক্সিজেনটা তো নিতে পারবেন। কোন ডাক্তার বা নার্সেরও সেই কেবিনে যেতে হবে না। শুধু একটি রুম আর অক্সিজেন সিলিন্ডার হলেই চলবে আপাতত। কিন্তু না, ম্যাক্স হাসপাতালের এমডি লিয়াকত আলী খান যখনই শুনলেন করোনার উপসর্গ, নিজের হাসপাতালে নিরলস শ্রম দেওয়া চিকিৎসককে ভর্তি তো নিলেনই না, এমনকি দিলেন না অক্সিজেনের একটি সিলিন্ডারও।

সেই ঘটনার ১৫ দিন পর সুস্থ হয়ে এসে এমন মর্মন্তুদ ঘটনার কথা জানালেন চট্টগ্রামের সেই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ এএসএম লুৎফুল কবির শিমুল। ম্যাক্স হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাসেবা দিয়ে থাকেন। মিরসরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এই মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডেপুটেশনে বেশ কিছুদিন কাজ করেছেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ইউনিটের কনসালটেন্ট হিসেবেও। সেখানে কর্মরত থাকাকালেই গত ১৩ মে তার মধ্যে শারীরিক অসুস্থতা ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।

শুরুর দিকের পরিস্থিতি জানিয়ে ডা. এএসএম লুৎফুল কবির শিমুল বলেন, ‘আমি তখন খুবই অসুস্থ। অক্সিজেন স্যাচুরেশন ৯০-এর নিচে নেমে যাচ্ছে। প্রথম কোভিড টেস্ট নেগেটিভ আসার পরেও দ্রুত স্যাচুরেশন নেমে যাওয়ায় আমি চিন্তা করছিলাম এটা কোভিড হতে পারে। তবে আমি জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার ব্যাপারে একটু দ্বিধাগ্রস্ত ছিলাম। চিন্তা করলাম আমার হাসপাতালের (ম্যাক্স হাসপাতাল) কেবিনে ভর্তি হয়ে অক্সিজেন নেবো। পরে আরেকটি স্যাম্পল (নমুনা পরীক্ষা) আসলে চমেক বা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হবো।’

কিন্তু এরপরই ঘটে অভাবনীয় ঘটনা। নিজের কর্মস্থল ম্যাক্স হাসপাতালের এমডি ডা. লিয়াকত আলী খানকে ফোন করে এ ব্যাপারে সাহায্য চাইলে তিনি সোজাসাপ্টা অপরাগতার কথা জানিয়ে ফোন কেটে দেন। এমন অমানবিক ঘটনার পর ঠিক সেই সময়ই ওই চিকিৎসকের সহায়তায় এগিয়ে আসে আরেকটি বেসরকারি হাসপাতাল। এমনকি তারা চিকিৎসকের বাসায় অক্সিজেনও পাঠিয়ে দেয় তৎক্ষণাৎ।

ডা. এএসএম লুৎফুল কবির শিমুল বলেন, ‘ওই প্রতিষ্ঠানের (ম্যাক্স হাসপাতাল) এমডি মিথ্যা কথা বলে আমাকে ভর্তি নিতে চাইলেন না। বিক্ষিপ্ত ও এলোমেলো কথা বলে ফোনও কেটে দিলেন। একটা অক্সিজেন সিলিন্ডারও দিলেন না। পরবর্তীতে ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাসায় অক্সিজেন পাঠালেন। আইভি ক্যানুলেশন করালাম ওখানে। ওনারা কেবিনও প্রস্তুত রেখেছিলেন আমার জন্য। যদিও ওখানে ভর্তি হইনি।’

তিনি বলেন, ‘পরদিন চমেকে ভর্তি হলাম। আমার জন্মস্থান চমেক হাসপাতাল। আমার মা বলতেন, পেয়িং বেডে আমি আমার মায়ের সাথে ছিলাম। আমি নিশ্চিত ছিলাম, আল্লাহর রহমতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আমাকে খালি হাতে ফেরাবে না।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সর্বস্তরের চিকিৎসকদের সহৃদয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সবাই প্রতিদিন আমার খোঁজ রেখেছেন। একবারের জন্যও হতাশ হইনি। মহান আল্লাহ আমার খুব কাছেই ছিলেন।’

তবে বিপদের মুহূর্তে নিজের কর্মস্থল ম্যাক্স হাসপাতালের সেই অমানবিক আচরণের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘কয়েকটি কৃমিকীটকে আমি ক্ষমা করে দিতে চাই। করোনা মানুষ চেনাবে। করোনার শিক্ষা যদি বেঁচে থাকি কাজে লাগাবো। সঠিক অনুধাবন আসছে আস্তে আস্তে। দরকার হলে গাছতলায় চেম্বার করব। রিজিক আল্লাহ দেবেন।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!