বাসের ভাড়া এভাবে বাড়েনি কখনও, সড়কে বাড়বে অরাজকতা

করোনা ভাইরাসের উদ্ভুত পরিস্থিতে স্বাস্থ্যবিধি মানার অজুহাতে অর্থকষ্টে থাকা দেশের অসহায় জনগণের জন্য গণপরিবহনের ভাড়া একলাফে ৬০ শতাংশ বাড়ানোয় সড়কে নৈরাজ্য বাড়বে বলে মন্তব্য করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। একইসঙ্গে তারা অবিলম্বে এই ভাড়া প্রত্যাহারের দাবি জানান।

জানা গেছে, সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন চলাচলের যুক্তিতে ৮০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)। এর ওপর ভিত্তি করে রোববার (৩১ মে) সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় গণপরিবহন (বাস-মিনিবাস) ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, এই ভাড়া সোমবার (১ জুন) থেকে কার্যকর হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দেশের গণপরিবহনের ইতিহাসে একলাফে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ার নজির এটিই প্রথম। এছাড়া গত একদশকে গণপরিবহনের ভাড়া বেড়েছে মাত্র ১০ শতাংশ। সর্বশেষ রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটি (আরটিএ) ২০১৫ সালে সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রামের গণপরিবহন (বাস-মিনিবাস) ভাড়া বাড়িয়ে প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৬০ পয়সা, ১ টাকা ৭০ পয়সা ও সর্বনিম্ন ভাড়া ৩ কিলোমিটারে ৫ ও ৭ টাকা করেছিল। বর্তমানে গণপরিবহনের ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ার ফলে বাস-মিনিবাসের প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া দাঁড়ালো ২ টাকা ৭২ পয়সা ও ২ টাকা ৫৬ পয়সা। সর্বনিম্ন ভাড়া ৩ কিলোমিটারে ১১ টাকা ২০ পয়সা ও ৮ টাকা।

গণপরিবহন খাতে ভাড়া নৈরাজ্য সবসময় লেগেই থাকে। সরকার নির্দেশিত ২০১৫ সালের ভাড়া হার মানেনি অধিকাংশ চালক-হেলপার। তারা যাত্রীদের জিম্মি করে নানা অজুহাতে দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করে থাকেন। ভাড়া নৈরাজ্যের কারণে যাত্রীকে গাড়ি থেকে ফেলে পিষে মারার অনেক ঘটনাও ঘটেছে। করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহনের যুক্তিতে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোকে নজিরবিহীন বলে মনে করেন যাত্রী অধিকার নিয়ে সোচ্চার ব্যক্তিরা। তাদের মতে- করোনাকে পুঁজি করে পরিবহন শ্রমিকেরা নজিরবিহীনভাবে ভাড়া বাড়িয়ে দাবি আদায় করে নিল। এতে সড়কে নতুন করে নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, গণপরিবহনে ৫০ শতাংশ সিটে যাত্রী পরিবহনের যুক্তিতে ৬০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। অথচ প্রতিটি বাস-মিনিবাসে ১০ থেকে ১৫টি অতিরিক্ত আসন সংযোজন করা আছে। বিশ্ববাজারে বহু আগেই তেলের দাম কমেছে। দেশে দীর্ঘদিন ধরে কম মূল্যে জ্বালানি তেল কিনে চড়া দামে বিক্রি করে বেশ মুনাফা অর্জন করেছে বিপিসি। তাই তেলের দাম কমানো ও সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করলে গণপরিবহনগুলো আগের ভাড়ায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব।

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন বলেন, দীর্ঘদিন লকডাউনে কর্মহীন মানুষ এমানিতেই আর্থিক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। সেখানে বর্ধিত হারে বাস ভাড়া আদায় হবে সড়কে ডাকাতির সামিল। এমনিতে বাস মালিক-শ্রমিকর সরকারের নির্ধারিত হারে ভাড়া আদায় না করে যাত্রীদের জিম্মি করে দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়া আদায় করে থাকেন। সেখানে আইনশৃংখলা বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে সক্ষম হচ্ছে না। নতুন করে ভাড়া না বাড়িয়ে জ্বালানির মূল্য কমানো ও সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রতিটি গণপরিবহন অর্ধেক যাত্রী পরিবহন করতে পারেন।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম আজাদ হোসাইন বলেন, এমনিতে গণপরিবহন খাতে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য লেগে থাকে। ভাড়া নিয়ে তর্কের কারণে যাত্রীকে গাড়ি থেকে ফেলে দিয়ে মেরে ফেলার ঘটনাও রয়েছে। করোনার সময় কর্মহীন মানুষের ঘাড়ে ৬০ শতাংশ বাড়তি ভাড়ার বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার ফলে সড়কে নৈরাজ্য বৃদ্ধি ও দুর্ঘটনা বাড়ার আশংকা রয়েছে।

সিএম/এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!