অ্যাকশন শুরু চমেক হাসপাতালের অর্থোপেডিকস ওয়ার্ডে
চট্টগ্রাম প্রতিদিনে খবর প্রকাশের পর তোলপাড়
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ২৬ নম্বর অর্থোপেডিকস ওয়ার্ডে চিকিৎসা নিয়ে নৈরাজ্য ও ওয়ার্ডবয়দের সার্জারি করার মতো গুরুতর অভিযোগ ওঠার পর এবার নড়েচড়ে বসেছে কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে ওয়ার্ডে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। হাড়ভাঙা রোগীদের নিয়ে চিকিৎসা-বাণিজ্য করা এক ওয়ার্ডবয়কেও ওই ওয়ার্ড থেকে তাৎক্ষণিক সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) চট্টগ্রাম প্রতিদিনে ‘ডাক্তার নয়, চট্টগ্রাম মেডিকেলে ওয়ার্ড বয়ের হাতে ‘হাড়ভাঙা’র সার্জারি, স্লিপ লিখেই খালাস ডাক্তাররা’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশের পর নড়েচড়ে বসে চমেক হাসপাতাল প্রশাসন।
প্রতিবেদনটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে চমেক হাসপাতালের কর্মকর্তা, কর্মচারী, চিকিৎসাধীন রোগীদের নজরে আসে। জানা গেছে, ওইদিন সকাল সাড়ে ১১টায় চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ুন কবীর ২৬ নং ওয়ার্ডের বিভাগীয় প্রধান চন্দন কুমার দাশকে ডেকে পাঠান তার কক্ষে। কিন্তু তিনি অনুপস্থিত থাকায় ওয়ার্ডবয়সহ কর্মরত কয়েকজন চিকিৎসককে ডেকে পাঠানো হয়।
সহকারী রেজিস্ট্রারসহ ওয়ার্ডের অনান্য কর্মরত চিকিৎসকদের কাছে পরিচালক জানতে চান, চিকিৎসক থাকতে ওয়ার্ডবয়দের হাতে সার্জারির কাজ কেন ছেড়ে দেওয়া হয়েছে? আর মিনি ওটি থাকতে ওয়ার্ডের ভেতরে কেন সার্জারি করা হচ্ছে রোগীদের— এটিও জানতে চান পরিচালক।
চমেক হাসপাতালের একজন উর্ধ্বতন প্রশাসনিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, ‘হাসপাতালের পরিচালক সারপ্রাইজ ভিজিটে যেকোন সময় ২৬ নং ওয়ার্ডে পরিদর্শনে যাবেন বলেও সতর্ক করেছেন চিকিৎসকদের। আর ওয়ার্ডবয় রবিউলকে কাজ থেকে বাদ দেওয়ার কথাও জানিয়ে দেন পরিচালক।’
জানা গেছে, এর পাশাপাশি ওয়ার্ডের সহকারী রেজিস্ট্রার, ইনডোর মেডিকেল অফিসার, এমডি শিক্ষার্থী, ইন্টার্ন চিকিৎসকসহ নার্সদেরকে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করে দেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম হুমায়ুন কবীর।
এদিকে চট্টগ্রাম প্রতিদিনে সংবাদ প্রকাশের পর বদলে গেছে ২৬ নম্বর অর্থোপেডিকস ওয়ার্ডের দৃশ্যপট। অস্থায়ী চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে থাকা রবিউলকে ওয়ার্ড থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সতর্ক করা হয়েছে ওয়ার্ডের সর্দারসহ অনান্য ওয়ার্ডবয়কেও। সার্জারির নামে ওয়ার্ডবয়রা রোগীদের কাছ থেকে আদায় করে বাড়তি অর্থ। তাদের চাহিদামাফিক টাকা দিতে না পারলে রোগীদের গায়ে হাত তুলতেও দ্বিধাবোধ করত না ওয়ার্ডবয় রবিউল ও তার অনুসারী বাকি ওয়ার্ডবয়রা— এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে।
বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. মুহাম্মদ আফতাবুল ইসলাম বলেন, ‘চট্টগ্রাম প্রতিদিনে প্রকাশিত প্রতিবেদন মারফত তথ্য পেয়ে আমরা ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে খোঁজ নিয়ে ওয়ার্ডবয়দের দৌরাত্ম্যের সত্যতা পাই। একই সাথে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের অবহেলার প্রমাণও মিলেছে। আমরা রবিউলকে বাদ দিয়েছি কাজ থেকে। বাকি বিষয়ে সিদ্ধান্ত বুধবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বিভাগীয় প্রধানের সাথে বসে সমন্বয় করা হবে।’
আইএমই/কেএস/সিপি