অলস পড়ে থাকা ৭০৩ গাড়ির নিলামে বাধা চট্টগ্রাম বন্দর

চট্টগ্রাম বন্দরে দীর্ঘদিন খালাসের অপেক্ষায় থাকা ৭০৩টি গাড়ি নিলামে তুলতে চায় চট্টগ্রাম কাস্টমস। তবে এতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বন্দর। রিমুভাল লিস্ট (আরএল) প্রদানে চট্টগ্রাম গড়িমসি করছে বন্দর। ফলে উদ্যোগ নিয়েও ভেস্তে যাচ্ছে কাস্টম হাউজের নিলাম প্রক্রিয়া। সময়মত রিমুভাল লিস্ট না দেওয়ায় গাড়িগুলোর অবস্থানও জানতে পারছে না কাস্টম হাউজ।

এসব গাড়ির তালিকায় রয়েছে প্রাইভেট কার, সিএনজি অটোরিকশা, ইলেকট্রিক বাইক ও বাইসাইকেল।

সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হলে চট্টগ্রাম বন্দরের রিমুভাল লিস্ট প্রয়োজন হয় কাস্টম হাউজের। প্রতি মাসে রিমুভাল লিস্ট প্রদানের নিয়ম থাকলেও সময়মত তা করে না চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।

অভিযোগ উঠেছে, আমদানিকারকদের সঙ্গে যোগসাজস করে রিমুভাল লিস্ট প্রদানে গড়িমসি করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে নিলাম প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতা দেখা দেয়। সময়মত রিমুভাল লিস্ট না পাওয়ায় নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করেও তা এগিয়ে নিতে পারে না কাস্টম হাউজ। আবার দীর্ঘসূত্রতা শেষে নিলাম প্রক্রিয়া শুরু হলেও অনেক সময় আমদানিকারকরা মামলা ঠুকে দেন। এতেও বন্ধ হয়ে যায় নিলাম প্রক্রিয়া।

জানা যায়, পাঁচ বছরেও খালাস না নেওয়া বিভিন্ন ধরনের ৭০৩টি গাড়ি নিলামে তুলতে চায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। কাস্টমসের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে দুই দফায় এসব গাড়ির তালিকা করে সম্প্রতি নিলাম শাখায় পাঠানো হয়েছে। গাড়িগুলোর সর্বশেষ অবস্থা যাচাই-বাছাই করছে নিলাম শাখা। চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে এসব গাড়ি আমদানি করা হয়েছিল। তবে শুল্ক পরিশোধ করে আমদানিকারকরা গাড়িগুলো নিচ্ছে না। চট্টগ্রাম বন্দরের বিশাল জায়গাজুড়ে বছরের পর বছর গাড়িগুলো পড়ে থাকায় স্বাভাবিক পণ্য হ্যান্ডলিং ব্যাহত হচ্ছে।

কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, আমদানিকারকরা খালাস না নিয়ে বন্দরের ভেতরে বছরের পর বছর গাড়ি ফেলে রাখেন। বন্দরকে তারা একরকম গুদাম হিসেবে ব্যবহার করেন। ক্রেতা না পাওয়া পর্যন্ত গাড়িগুলো রাখা হয় বন্দরেই। ক্রেতা পেলে শুল্ক পরিশোধ করে অনেক আমদানিকারক গাড়ি ছাড়িয়ে নেন। এদিকে প্রায় দেখা যায়, নিলামে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করলে আমদানিকারকরা মামলা ঠুকে দেন। নিলামে তোলার আগেই শুল্ক পরিশোধ করে তারা গাড়ি নিয়ে যান।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার নুর উদ্দিন মিলন বলেন, ‘প্রথমবার ৫৮৭টি এবং দ্বিতীয়বার ১১৬টি নিলামযোগ্য গাড়ির তালিকা তৈরি করেছি। দুই দফায় তালিকাগুলো নিলাম শাখায় পাঠানো হয়েছে।’

নূর উদ্দিন মিলন বলেন, ‘নিয়ম অনুসারে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা পণ্য ৩০ দিনের মধ্যে ছাড়িয়ে না নিলে তা কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়। রিমুভাল লিস্ট দিয়ে তা নিলামযোগ্য ঘোষণা করে বন্দর। প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শেষে কাস্টমস সেই পণ্য নিলামে তোলে।’

রিমুভাল লিস্ট প্রদানের ক্ষেত্রে বন্দরের গড়িমসির কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার (নিলাম শাখা) মো. মাজেদুল হক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বন্দরের কাছ থেকে রিমুভাল লিস্ট পেলে আমরা আমদানিকারকদেরকে চিঠি দিয়ে ১০ দিনের মধ্যে পণ্য নিয়ে যেতে বলি। ১০ দিনের মধ্যে না নিলে আমরা নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করি। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দর আমাদেরকে সময়মত রিমুভাল লিস্ট দেয় না। তাই আমরাও নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করতে পারি না। কারণ গাড়িগুলো কোথায় আছে, তা আমরা জানি না।’

তিনি বলেন, ‘নিলামযোগ্য গাড়ির বিষয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে রিমুভাল লিস্ট পাওয়া যায়নি। এ তালিকা ছাড়া নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করা যায় না। বন্দর সময়মত আরএল দিলে আমরাও সময়মত নিলামে তুলতে পারি।’

তবে কয়েকদিন আগে বন্দর প্রায় ১০০ গাড়ির রিমুভাল লিস্ট দিয়েছে বলে জানান মাজেদুল হক।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘রিমুভাল লিস্ট সময়মত না দেওয়ার অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য। কোন পণ্য বন্দরে আসার ৩০ দিন পর আমরা রিমুভাল লিস্ট কাস্টম হাউজকে জমা দিই। শুধু তাই নয়, নিলামে তোলার জন্য আমরা বার বার কাস্টম হাউজকে রিমাইন্ডার দেই। আমদানিকারকদের সাথে যোগসাজসের কোন বিষয় এখানে নেই।’

এমএ/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!