লকডাউনে কোটি টাকার গরু-মহিষ চুরি, গোয়ালঘরেই রাত কাটছে গৃহস্থের

লকডাউনের মধ্যেই কোরবানির জন্য লালনপালন করা অন্তত কোটি টাকার গরু-মহিষ চুরি হয়ে গেছে গৃহস্থের গোয়াল থেকে। গত তিন মাস ধরে কক্সবাজারে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে গরু চোর সিন্ডিকেট। প্রায় প্রতি রাতেই চুরি হচ্ছে কোরবানির ঈদের জন্য পালিত গবাদি পশু। নিরুপায় হয়ে মালিক ও খামারিরা রাত জেগেই শেষ সম্বল পাহারা দিচ্ছেন। তবুও ঠেকানো যাচ্ছে না চুরি। গত ৩ মাসে দুই শতাধিক গরু-মহিষ চুরির ঘটনা ঘটেছে।

জানা গেছে, শুধু কক্সবাজার সদর উপজেলার ১০ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় ৭০টি গরু ও মহিষ চুরি হয়েছে। তবে প্রশাসনের তৎপরতায় কয়েকটি উদ্ধার হলেও এখনও অনেক গরু-মহিষের খোঁজ মিলছে না। এতে হতাশ হয়ে পড়েছেন গরু-মহিষ খামারি ও মালিকেরা।

কক্সবাজার সদর উপজেলার খরুলিয়ার হাবিব উল্লাহ জানান, তিনি অস্ট্রেলিয়ান জাতের তিনটি গরু পালন করেছিলেন। সেগুলো কোরবানির হাটে বিক্রির জন্য মোটাতাজাও করেছিলেন অনেক টাকা খরচ করে। কিন্তু কিছুদিন আগে রাতের আঁধারে তার গোয়ালঘরে হানা দিয়ে ৩টি গরুই চুরি করে নিয়ে যায় চোরের দল। তিনটি গরুর আনুমানিক বাজারমূল্য তিন লাখ টাকা বলে জানান তিনি।

পিএমখালীর নয়াপাড়ার ফকির মোহাম্মদ বলেন, খেয়ে না খেয়ে কিছু টাকা জমিয়ে দুটি মহিষ কিনেছিলাম। কোরবানের হাটে বিক্রির জন্য মোটাতাজা করেছি আরও অনেক টাকা খরচ করে। কিন্তু চোরের দল আমার শেষ সম্বল মহিষ দুটি নিয়ে গেছে। এখন আমার সব শেষ।

তিনি জানান, এলাকার একটি চোর সিন্ডিকেট এবং বাইরের চোর সিন্ডিকেট মিলে তার মত অনেকের গরু-মহিষ চুরি করে সর্বশান্ত করে দিচ্ছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার সদরের ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান টিপু সুলতান জানান, মাত্র ১ মাসের ব্যবধানে ৫০টির মত গরু-মহিষ চুরি হয়েছে ঝিলংজা ও পার্শ্ববর্তী পিএমখালী ইউনিয়ন থেকে। চুরি হওয়া গরু-মহিষের মূল্য অন্তত কোটি টাকা হবে বলে দাবি করেন তিনি।

সম্প্রতি চুরি হয় ঝিলংজার মুক্তারকুলের মৌলভী আজিজুল মোক্তারের দুটি গরু, পিএমখালীর ঝিলংজার নয়াপাড়ার ফকির মোহাম্মদের দুটি মহিষ, একই এলাকার আমান উল্লাহর দুটি গরু, নুরুল হাকিমের তিনটি গরু, ডিকপাড়ার আবদু রশিদের দুটি গরু, বাংলাবাজার এলাকার রহমত উল্লাহর একটি গরু, মুক্তারকুলের মোজাফ্ফর আহমদের ২টি গরুসহ খরুলিয়ার অন্তত আটটি বাড়ির গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে।

এ বিষয়ে কক্সবাজার মডেল থানার ওসি সৈয়দ আবু মোহাম্মদ শাহজাহান কবির জানান, গরু চুরি ঠেকাতে সদা তৎপর রয়েছে পুলিশ। ইতোমধ্যে পুলিশের সাহসিকতায় কয়েকটি চুরি যাওয়া গরু উদ্ধার হয়েছে। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরু চোর সিন্ডিকেট যাতে তৎপর হতে না পারে সেজন্য পুলিশ কাজ করছে বলে জানান তিনি।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোহাম্মদ আশরাফুল আফসার বলেন, ইতোমধ্যে সকল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া গরু চুরি ঠেকাতে প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয়দেরও এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান তিনি।

এসএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!