যুবলীগ ফারুকের সঙ্গে দ্বন্দ্ব ছিল নিহত সৌরভের, সমঝোতা বৈঠক থানায়

হাজির ছিলেন যুবলীগ সভাপতি ছিদ্দিকুরও

চট্টগ্রামে সন্দ্বীপে হত্যার শিকার হওয়া ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা কামরুল হাসান সৌরভের সাথে এই হত্যায় গ্রেফতার হওয়া উপজেলা যুবলীগের সদস্য ওমর ফারুকের ছিল পুরানো দ্বন্দ্ব। এই দ্বন্দ্ব নিরসনে দুজনকে নিয়ে সন্দ্বীপ থানাতে মীমাংসা বৈঠকও হয়েছিল গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে। সন্দ্বীপ থানা সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

সন্দ্বীপ থানার একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে সন্দ্বীপ থানায় সৌরভ ও ফারুককে নিয়ে একটা বৈঠক হয়েছিল। ওই বৈঠকে ফারুকের পক্ষে সন্দ্বীপ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান ও সৌরভের পক্ষে জেলা যুবলীগের সদস্য নজরুল ইসলাম আকবর উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া হারামিয়া ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার জয়নাল ও সন্দ্বীপ থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহজাহান এবং এএসআই আকবর হোসেন ও জাহেদ সে বৈঠকে ছিলেন।’

‘সৌরভ তার মোবাইল চুরির অভিযোগ এনে ফারুকের হোন্ডা জব্দ করেছিল এই ধরনের একটা অভিযোগে সে বৈঠক হয়েছিল’— যোগ করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।’

তিনি বলেন, ‘বৈঠকে ফারুককে ইয়াবা ব্যবসায়ী হিসেবে উল্লেখ করে সৌরভ। সৌরভ এই কথা বলতেই ছিদ্দিক তার ওপর ক্ষেপে যায়। এ সময় ছিদ্দিক ও নজরুল ইসলাম আকবরের মধ্যে বাদানুবাদ শুরু হয়। এক পর্যায়ে সেটা অনেকটা হাতাহাতিতে রূপ নেয়। এর একপর্যায়ে এএসআই আকবর তাদের নিবৃত্ত করেন।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম আকবর বলেন, ‘এই মিটিং তো অনেক আগে হইছে। এতদিন পরে এই বিষয়ে প্রশ্ন করছেন কেন? আমি আপনাকে ওই মিটিংয়ের ব্যাপারে কোন কথা বলবো না।’

তবে এই ধরনের কোন মিটিং হয়নি বলে দাবি করেন ছিদ্দিকুর রহমান। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘এই ধরনের কোন মিটিং হয়নি। আমি সেখানে যাইওনি। আমি ফারুককে চিনি, সৌরভকে চিনিও না।’

যুবলীগ নেতা নজরুল ইসলাম আকবরের সাথে বিরোধের বিষয়ে ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা এক সাথে রাজনীতি করি। ভাইয়ে ভাইয়ে ঝামেলা হবে, আবার মিটেও যাবে। ওসব তেমন কিছু না।’

তবে ওয়ার্ড মেম্বার হাজী মোহাম্মদ জয়নাল উদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনের কাছে সেই বৈঠকের সত্যতা স্বীকার করে বলেছেন, ‘ফারুক আর সৌরভের বিষয়ে সন্দ্বীপ থানায় একটা বৈঠক হয়েছিল। যুবলীগের দুজন নেতা দুজনের পক্ষে সেখানে উপস্থিত ছিল। ওই বৈঠকে নজরুল ইসলাম আকবর ও ছিদ্দিকুর রহমানের মধ্যে ঝগড়াও হয়েছিল।’

এদিকে সৌরভকে চেনে না দাবি করলেও গত ৬ মার্চ এই হত্যামামলা নিয়ে একটি সংবাদ সম্মেলন করে উপজেলা যুবলীগ। সেখানে ফারুকের পক্ষে সাফাই গেয়ে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘ফারুকের অপরাধ এখনো প্রমাণিত হয়নি, এতোদিন পরে ফারুকের ঘর থেকে মোবাইল উদ্ধার একটি সাজানো ঘটনা এবং এই সাজানো ঘটনার সাথে সন্দ্বীপ থানার পুলিশরাও জড়িত। তারা একটি পক্ষ দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মামলাটিকে সম্পূর্ণ ভুল দিকে পরিচালিত করছে।’

তবে যুবলীগের এই অভিযোগ অস্বীকার করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সন্দ্বীপ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল হালিম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এতদিন পর এই ধরনের কথা কেন আসলো বুঝতে পারছি না। তবে ফারুকের নাম তো ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে আদালতে এসেছে।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২০ নভেম্বর মগধরা ১ নম্বর ওয়ার্ডের জনৈক আক্তার হোসেনের পুকুর পাড় থেকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় সৌরভের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় সৌরভের ভাই মেহেদী হাসান বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা ১০-১৫ জনকে আসামি করে সন্দ্বীপ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

একই বছরের ২৩ ডিসেম্বর সন্দ্বীপ থানা পুলিশ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘ক্লু-লেস (সূত্রবিহীন) এ মামলায় প্রযুক্তি ব্যবহার করে ও একাধিক অভিযান চালিয়ে জড়িত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রাব্বী নামে একজন ইতোমধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সৌরভ হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ওমর ফারুক (৩২) প্রকাশ কালা ফারুককে সাভার থেকে গ্রেপ্তার করে সন্দ্বীপ নিয়ে আসেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সন্দ্বীপ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল হালিম। ওদিনই ফারুককে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে ফারুকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে ২৫ জানুয়ারি সৌরভের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে পুলিশ।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!