সন্দ্বীপে যুবলীগ নেতার ঘরে সৌরভের মোবাইল!

মামলার জট খোলার আশা পুলিশের

সন্দ্বীপে হত্যার শিকার হওয়া কিশোর সৌরভের ব্যবহৃত সেই মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার (২৫ জানুয়ারি) উপজেলা যুবলীগ নেতা ওমর ফারুকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তার ঘরে অভিযান চালিয়ে ওই মোবাইল উদ্ধার করে সন্দ্বীপ থানা পুলিশ। এ সময় ওই ঘর থেকে সৌরভের ব্যবহৃত লুঙ্গির কিছু অংশও উদ্ধার করেছে পুলিশ।

এর আগে ২৩ জানুয়ারি (বৃহস্পতিবার) সৌরভ হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগে ওমর ফারুক (৩২) প্রকাশ কালা ফারুককে সাভার থেকে গ্রেপ্তার করে সন্দ্বীপ নিয়ে আসেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সন্দ্বীপ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল হালিম। ওদিনই ফারুককে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ড আবেদন করলে আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। রিমান্ডে ফারুকের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান পরিচালনা করে পুলিশ। ফারুকের ঘর থেকে উদ্ধার হওয়া সৌরভের মোবাইল ও লুঙ্গির অংশ শনাক্ত করেছেন নিহত সৌরভের ভাই মেহেদি হাসান।

গ্রেপ্তার হওয়া ওমর ফারুক সন্দ্বীপ উপজেলা যুবলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য। তিনি মগধরা ইউনিয়নের মোহাম্মদ আলী হাজীর বাড়ির শামসুল হকের ছেলে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এলাকায় প্রভাবশালী একজন নেতার ছত্রছায়ায় ইয়াবার ব্যবসা করতেনওমর ফারুক ও তার দলবল।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেপ্তার হওয়া ফারুকের ঘরেই হত্যা করা হয়েছিল সৌরভকে। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর সৌরভকে মোটরসাইকেলে করে নিয়ে গিয়ে আক্তার হোসেনের পুকুর পাড়ে ফেলে রেখে আসে হত্যাকারীরা। সৌরভ হত্যা মামলায় রাব্বী নামে এক আসামি আদালতে দেয়া ১৬৪ ধারার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব তথ্য জানিয়েছিল বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

ফারুকসহ গত দুই মাসে সৌরভ হত্যার অভিযোগে ৯ জনকে গ্রেপ্তার করলো সন্দ্বীপ থানা পুলিশ। ক্লু-লেস এই মামলার তদন্তে বেশ সন্তোষজনক অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে পুলিশ বলছে এই হত্যাকাণ্ডের বাকি জটগুলোও খুব দ্রুত খুলে যাবে।

এ বিষয়ে সন্দ্বীপ থানার পরিদর্শক(তদন্ত) আব্দুল হালিম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘২২ ডিসেম্বর আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে ফারুকের নাম ছিল। তাকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়ার পর তার দেওয়া তথ্যে অভিযান চালিয়ে তার ঘর থেকে সৌরভের মোবাইল ও তার ব্যবহৃত লুঙ্গির কিছু অংশ আমরা উদ্ধার করেছি। এই মামলায় এখন পর্যন্ত আমরা ৯জন আসামিকে গ্রেপ্তার করলাম। জবানবন্দিতে নাম আসা কিছু আসামিকে গ্রেপ্তার করা বাকি আছে। এছাড়া হত্যার হুকুমদাতা ও সহায়তাকারীদের গ্রেপ্তারের বিষয়েও আমরা কাজ করছি।’

প্রসঙ্গত, গত বছরের ২০ নভেম্বর মগধরা ১ নম্বর ওয়ার্ডের জনৈক আক্তার হোসেনের পুকুর পাড় থেকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় সৌরভের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় সৌরভের ভাই মেহেদী হাসান বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা ১০/১৫ জনকে আসামি করে সন্দ্বীপ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।

একই বছরের ২৩ ডিসেম্বর সন্দ্বীপ থানা পুলিশ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘ক্লু-লেস (সূত্রবিহীন) এ মামলায় প্রযুক্তি ব্যবহার করে ও একাধিক অভিযান চালিয়ে জড়িত ৭জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রাব্বী নামে একজন ইতোমধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিয়েছে। রাব্বির জবানবন্দিতে জানা গেছে, জায়গা সম্পত্তি, পরকীয়া সম্পর্ক এবং পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে সৌরভকে হত্যা করে তারা।’

তবে সে সময় পুলিশের এ দাবি নাকোচ করে দিয়েছিল সৌরভের স্বজনরা। তারা বলছেন এই মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া কারোর সাথেই সৌরভের সম্পত্তির দ্বন্দ্ব ছিল না। এমনকি সংবাদ সম্মেলনে এই মামলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আড়াল করে গেছে পুলিশ। এসব বলে মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা হচ্ছে বলেও শংকা প্রকাশ করেছিলেন নিহত সৌরভের স্বজনরা।

এআরটি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!