পানির জন্য ২৭ বছরে সিডিএর কর্ণফুলী আবাসিকে উঠেনি একটি বাড়িও, ভুতুড়ে পরিবেশ

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী থানার মইজ্জারটেক এলাকায় সিডিএ কর্ণফুলী আবাসিক প্রকল্প। প্লট কেনার পর গত ২৭ বছর ধরে সেখানে কোনো বসতি গড়ে উঠেনি প্রায় পাঁচ শতাধিক পরিবারের। চড়া দামের বিনিময়ে এসব প্লট বরাদ্দ দিয়েছিল চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।

প্লট বরাদ্দের শর্ত মোতাবেক ওয়াসার পানিসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার কথা থাকলেও সেখানে দীর্ঘদিন ধরে এসব সুবিধার বাস্তবায়নে আগ্রহ নেই খোদ সিডিএরই। প্লট বরাদ্দ পাওয়ার পরও সেখানে বসতি গড়তে না পেরে প্লট মালিকরা এখন আশাই ছেড়ে দিয়েছেন।

চলতি বছরের ১৮ জুলাই সমস্যা সমাধানের জন্য সিডিএ কর্ণফুলী আবাসিক জামে মসজিদ কমপ্লেক্সের সভাপতি মো. মোজাম্মেল হক, সাধারণ সম্পাদক মো. এয়াছিন এবং সিডিএ কর্ণফুলী আবাসিক প্লট মালিক কল্যাণ সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি এডভোকেট এএম জিয়া হাবীব আহসান স্বাক্ষরিত একটি একটি চিঠি দেওয়া হয় সিডিএর চেয়ারম্যান বরাবরে।

প্রায় ৫০ একর জায়গায় ৫১৯টি প্লট সম্বলিত সিডিএর কর্ণফুলী (বামতীর) আবাসিক প্রকল্পে ওয়াসার ভান্ডালজুরী প্রকল্প থেকে সুপেয় পানি সরবরাহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে কর্ণফুলী আবাসিক প্লট মালিক নেতৃবৃন্দের চিঠির প্রেক্ষিতে গত ১৭ অক্টোবর সিডিএ কর্ণফুলী আবাসিক প্রকল্পে ওয়াসার সুপেয় পানির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবরে একটি চিঠি দেন সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস।

১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর নদীর দক্ষিণ পাড়ে কর্ণফুলী (বামতীর) আবাসিক প্রকল্প নামে ৫১৯টি প্লট বরাদ্দ দেয় সিডিএ। এ প্রকল্পের প্রজেক্ট প্রোফাইলে (পিপি) বরাদ্দকৃত স্থানে নালা-নর্দমা, রাস্তাঘাট, খেলার মাঠ, কবরস্থান, মার্কেট, নিরাপত্তা বেষ্টনী, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও ওয়াসার সুপেয় পানি সরবরাহ করাসহ যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হবে বলে উল্লেখ থাকে।

১৯৯৪ সালে চড়া দামে এসব প্লট কেনার পর সুযোগ-সুবিধা কিছুই না পাওয়ায় দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় ধরে সেখানে বসতি গড়ে উঠেনি। বসতি গড়তে না পারা প্লটমালিকদের অনেকেই ইতিমধ্যে মারা গেছেন, বর্তমানে অনেকে আবার জীবনসায়াহ্নে।

সিডিএ কর্ণফুলী আবাসিক প্লট মালিক কল্যাণ সমিতির সিনিয়র সহসভাপতি এডভোকেট এ এম জিয়া হাবীব আহসান বলেন, ‘প্লট কেনার ২৮ বছরেও ঘর বানানোর স্বপ্ন পূরণ হলো না। প্রজেক্ট প্রোফাইলে গ্যাস, বিদ্যুৎ পানি ইত্যাদি ইউটিলিটি সরবরাহের অঙ্গীকার থাকলেও তারা কথা রাখেনি। পানির অভাবে জনবসতি গড়ে উঠেনি। এ সমস্যা সমাধানে সিডিএকে বারবার বলেছি বিভিন্নভাবে। সংস্থাটির উদ্যোগ গ্রহণের কোনো আগ্রহ দেখাচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে চট্টগ্রাম নগরে তীব্র আবাসন সংকট নিরসন হওয়ার পাশপাশি আলোকিত হতো দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রবেশ পথ। ইতিমধ্যেই প্রকল্প মালিকদের অনেকেই মারা গেছেন। ১৯৯৪ সালে সর্বোচ্চ মূল্য দিয়ে এসব প্লট খরিদ করা হয়। বিষয়টি দ্রুত সমাধান করে ৫১৯ প্লট মালিককে মুক্তি দেবে সেই আশা করছি।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ মিটিংয়ে ব্যস্ততা দেখিয়ে সংযোগ কেটে দেন।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী একেএম ফজলুল্লাহ বলেন, ‘সিডিএ থেকে একটি চিঠি পেয়েছি। দীর্ঘদিন পরে ওয়াসার পানি সমস্যার কথা বললে কি তাড়াতাড়ি সমাধান হবে? যেহেতু চিঠি পেয়েছি, বিষয়টি এখন দেখব।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!