চবির সাবেক ভিসি ইফতেখারকে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদবি ব্যবহারে মানা

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীকে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদবি ব্যবহার না করার অনুরোধ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার (১১ ফেব্রুয়ারি) সকালে বিষয়টি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নুর আহমদ।

তিনি বলেন, এই সংক্রান্ত একটি চিঠি পাঠানো হয়েছে। বিস্তারিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হবে।

জানা যায়, সোমবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) কে এম নুর আহমদ স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীকে এই অনুরোধ করা হয়।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদের নীতিমালা প্রণয়নে সংক্রান্ত প্রাক্তন উপাচার্য মহোদয় গৃহীত ব্যবস্থা অনুমোদন সংক্রান্ত রিপোর্ট এখনো একাডেমিক কাউন্সিলে অনুমোদন হয়নি। উক্ত পদে নিয়োগ প্রদান সংক্রান্ত গৃহীত ব্যবস্থা অনুমোদন সংক্রান্ত সিন্ডিকেট সিদ্ধান্তটি এখনও কনফার্ম হয়নি।

এমতাবস্থায় বর্ণিত বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু চেয়ার পদবি ব্যবহার না করার জন্য আদেশক্রমে বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।

এ বিষয়ে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দীন চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, মুজিববর্ষ আমাদের জন্য অত্যন্ত পবিত্র, গৌরবের, অহংকারের। আমরা সবাই মুজিববর্ষ সফল করতে যখন ব্যস্ত, তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে থাকা রাষ্ট্র ও বঙ্গবন্ধু বিরোধী শক্তি বঙ্গবন্ধুকে অবমাননা করতেই এসব করছেন।

প্রসঙ্গত, ঢাকা ও ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রচলিত বঙ্গবন্ধু চেয়ারের নীতিমালা পর্যালোচনা করে ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর চবির ৫১০তম সিন্ডেকেট সভায় বঙ্গবন্ধু চেয়ারের অনুমোদন দেওয়া হয়। বাংলাদেশের উন্নয়ন, রাজনীতি, ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ে অধ্যাপক সমমর্যাদা সম্পন্ন একজন বিশিষ্ট গবেষক বঙ্গবন্ধু চেয়ারে অধিষ্ঠ হন।
তিনি অধ্যাপকের সমান বেতন-ভাতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার সুবিধা পান। এক বছরের মেয়াদ হলেও ক্ষেত্র বিশেষে তা দু’বছর করার সুযোগ রয়েছে।

ওই সভায় বঙ্গবন্ধু চেয়ার সৃষ্টি এবং প্রবর্তনের ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে উপাচার্যকে প্রধান এবং বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রারকে সদস্য সচিব করে সাত সদস্যবিশিষ্ট কমিটি করা হয়।

নির্দেশনা মোতাবেক কমিটি ২০১৮ সালের ৭ মে ও ৩ সেপ্টেম্বর এবং চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি তিন দফা বৈঠক করেন। সর্বশেষ সভায় সর্ব সম্মতিক্রমে পূর্ণাঙ্গ একটি নীতিমালা সিন্ডিকেটে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়।

ওই সভায় নীতিমালা অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়। একইসাথে পদের জন্য সাবেক উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দীনের নাম প্রস্তাব করা করা হয়। কিন্তু সুপারিশকৃত ওই সভায় কমিটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তৎকালীন উপ-উপাচার্য ও বর্তমান উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরিন আখতার উপস্থিত ছিলেন না। ফলে সভার সভাপতিত্ব করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী।

গঠিত কমিটির তিন দফা প্রস্তাবনা ও কার্যক্রম ২৩ ফেব্রুয়ারি নগরীর চারুকলা ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত ৫২০তম সভায় রিপার্ট আকারে তুলে ধরেন। এক্ষেত্রে বিষয়টি সিন্ডিকেটের এজেন্ডা না করে রিপোর্ট হিসেবে আনায় দুই সিন্ডিকেট সদস্য নোট অফ ডিসেন্ট দেন। পরবর্তীতে ৭মার্চ উক্ত চেয়ারের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন সাকেক উপাচার্য ড. ইফতেখার উদ্দীন। তবে একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের দাবি নিয়মকানুন ভঙ্গ করে উপাচার্য ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদে আসীন হয়েছেন। নীতিমালা অনুযায়ী, ওই পদে যিনি বসবেন, তাঁর বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ২০ বছরের গবেষণা থাকতে হবে। পাশাপাশি স্বীকৃত আন্তর্জাতিক মানের প্রকাশনা হিসেবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অন্তত ১০টি নিবন্ধ কিংবা প্রবন্ধ থাকতে হবে। কিন্তু উপাচার্যের এ বিষয়ে কোনো গবেষণা প্রবন্ধ নেই বলে দাবি করেন জ্যেষ্ঠ শিক্ষকরা।

এসএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!