চট্টগ্রাম রেলে ৭০০ যাত্রীর নিরাপত্তা পাহারায় মাত্র ৩ পুলিশ, বাড়ছে কালোবাজারি

চট্টগ্রাম থেকে যাওয়া আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেনের যাত্রী নিরাপত্তায় ঢিলেঢালা নজরদারি গভর্নমেন্ট রেলওয়ে পুলিশের (জিআরপি)। তল্লাশি জোরদার না হওয়ায় যাত্রীরা যেমন নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছেন, তেমনি ট্রেনে কালোবাজারিদের দৌরাত্ম্যও বাড়ছে নিরবে। তাছাড়া আগে জিআরপির সঙ্গে আরএনবির সদস্যরা থাকলেও দুদকের চিঠির পর তাদের ডিউটি বাতিল করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। ফলে যাত্রীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার আরও অবনতি হয়েছে।

তবে জিআরপির কর্মকর্তারা জানান, ট্রেনের তুলনায় জনবল অপ্রতুল। চট্টগ্রাম থেকে ১৩টি ট্রেন চলাচল করে। এসব ট্রেনে যাত্রী সেবায় মাত্র ৩ জন জিআরপি সদস্য ডিউটি করেন, যা যাত্রীর নিরাপত্তায় একেবারেই নগণ্য।

চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া আন্তঃনগর ট্রেনগুলো হলো সূবর্ণ, চট্টলা, মহানগর প্রভাতী, পাহাড়িকা, মহানগর গোধূলী, সোনার বাংলা, মেঘনা, উদয়ন, তূর্ণা নিশীথা এবং বিজয় এক্সপ্রেস। এছাড়াও মেইল ট্রেনের মধ্যে আছে চট্টগ্রাম মেইল, কর্ণফুলী, নাসিরাবাদ মেইল। এসব ট্রেনের প্রত্যেকেটি রেলওয়ে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন।

জানা গেছে, চট্টগ্রামের জিআরপিতে ৪২ জন কনস্টেবল এবং এসআই, ওসি মিলে রয়েছেন ১৪ জন। সেই হিসেবে এখানে মোট কর্মরত ৫৬ জন। প্রতিটি ট্রেনে ৩ জন করে রেলওয়ে পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করেন। এসব ট্রেনে গড়ে সাতশয়ের ওপর যাত্রী যাতায়াত করে থাকে। ট্রেন ছাড়ার পর রেলওয়ে পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব সন্দেহজনক যাত্রীদের ব্যাগ-মালামাল তল্লাশি করা, বিভিন্ন বগিতে নজরদারি রাখা। এছাড়া কালোবাজারি রোধে সতর্ক থাকা।

অভিযোগ রয়েছে, নজরদারির বদলে রেলওয়ে পুলিশ সদস্যরা ব্যস্ত থাকেন বিনা টিকিটে যাত্রীদের গাড়িতে তুলে সিট ব্যবস্থা করে দেওয়ায়।

চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যাওয়া আন্তঃনগর সোনার বাংলা মো. রায়হান নামের এক যাত্রী বলেন, ‘প্রায়ই সময় ট্রেনে যাতায়াত করি। কিন্তু কখনও কোনো ধরনের তল্লাশি চোখে পড়েনি। মাঝে মাঝে কিছু পুলিশ সদস্যকে বগির ভেতর দিয়ে হেঁটে যেতে দেখা যায়। আবার অনেকে যাত্রী ওঠানোর পর তাকে সিট ম্যানেজ করে দিতেও ব্যস্ত থাকেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ট্রেনগুলোতে ইদানিং নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢিলেঢালা। অনেক সময় টয়লেটে যাওয়ার সময় চোখে পড়ে দরজার কাছে রাখা বিভিন্ন বস্তা ও টেপ মোড়ানো কার্টনের। এসবের সঙ্গে কোনোও লোকজনও থাকে না। কার মালামাল, কি আছে তাতে—তাও জানা যায় না। এসব সুযোগ কাজে লাগায় কালোবাজারি ও মাদক কারবারিরা।’

ইয়ামিন আক্তার নামের চাঁদপুরগামী মেঘনা এক্সপ্রেসের এক যাত্রী বলেন, ‘বর্তমানে ট্রেনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা দুর্বল। কোনো তল্লাশি নেই। আগে যখন ট্রেনে যেতে দেখতাম, হঠাৎ পুলিশ সদস্যরা এসে সন্দেহজনক মনে হলে যাত্রীর ব্যাগ তল্লাশি করতো, জিজ্ঞাসাবাদ করতো। কিন্তু এখন সেটা চোখে পড়ে না।’

আরও জানা গেছে, রেলওয়ে পুলিশের সঙ্গে আগে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) ৪ জন সদস্য ট্রেনে যাত্রীর নিরাপত্তায় থাকতেন। কিন্তু দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে আরএনবির সদস্যদের ট্রেনের ডিউটি বন্ধ করা হয়। মূলত আরএনবির দু’জন ও জিআরপির ৬ সদস্যের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয় দুদক। কিন্তু শুধুমাত্র আরএনবির ওপরই নিষেধাজ্ঞা দেয় মন্ত্রণালয়।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জিআরপির সেকেন্ড অফিসার এসআই সানাউল খান নোমান বলেন, ‘জিআরপিতে আমাদের জনবল সংকট। ৩ জন দিয়ে একটি ট্রেনের যাত্রীর নিরাপত্তা দেওয়া কষ্টসাধ্য।’

জনবল বাড়ানোর কোনো চিঠি দেওয়া হয়েছে কি-না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষে জনবল বাড়ানোর বিষয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তারা ব্যবস্থা নিচ্ছেন বলে জানিয়েছেন।’

টিকিট বুকিংয়ে ব্যস্ত জিআরপির এএসআই

এদিকে রোববার (৮ অক্টোবর) বিকাল ৫টায় জিআরপি থানায় গিয়ে দেখা গেছে, আরএসবি শাখার এএসআই নুরুল আমিন চেয়ারে বসে মুঠোফোনের অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তিকে টিকিট বুকিংয়ের নির্দেশনা দিচ্ছেন।

এই সময় তিনি অপরপ্রান্তে থাকা ব্যক্তিকে চট্টলার ১৬টি টিকিট, সোনার বাংলার ১৫টি টিকিট, মহানগর এক্সপ্রেসের ১২-১৩টি টিকিট রাখতে বলেন। এরপর অপরপ্রান্ত থেকে উত্তর এলে তিনি আবার বলেন, ‘টিকিট না থাকলে ব্লক করে রাখা টিকিট থেকে বুকিং করে রাখেন’।

ওই এএসআইয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে জিআরপি থানার ডিউটি অফিসার এসআই তন্ময় ভট্টাচার্য বলেন, ‘পুলিশের বিভিন্ন পদের কর্মকর্তাদের টিকিট কাটেন তিনি (এএসআই নুরুল আমিন)।’

এই বিষয়ে জানতে চাইলে জিআরপি চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার মো. হাসান চৌধুরী বলেন, ‘এভাবে টিকিট নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যদি সত্যতা মিলে তাহলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জিআরপির এএসআইয়ের টিকিট বুকিংয়ের বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ে (পূর্ব) মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেবো।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!