খেলোয়াড়দের ফিটনেসে নাখোশ ট্রেনার, মাশরাফির প্রশ্নবিদ্ধ অন্তর্ভুক্তি

ফিটনেস ক্যাম্পের প্রথম দিনে এ দৃশ্যটা খুব পরিচিত—ক্রিকেটাররা হাসিমুখে শুরু করেন ফিটনেস টেস্ট। পরীক্ষা শেষে হাসিটা কোথাও যেন উধাও হয়ে যায়! ফিটনেস কতটা ভালো অবস্থায় আছে, সেটি প্রমাণ করতে মাঝে যে কষ্টটা করতে হয় তাতে হাসি থাকার কথা নয়। সোমবার (১৯ আগস্ট) এই পরীক্ষা বা ব্লিপ টেস্ট শেষে বাংলাদেশ দলের ট্রেনারও খুশি হতে পারেননি খেলোয়াড়দের ফিটনেস নিয়ে। একই সাথে আসন্ন আফগান টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে দলে না থাকলেও কন্ডিশনিং ক্যাম্পে মাশরাফিকে অন্তর্ভুক্তি অনেক প্রশ্নের উদ্ভব হয়েছে।

বাংলাদেশ দলের সবশেষ কন্ডিশনিং ক্যাম্প হয়েছিল গত অক্টোবরে, দেশের মাঠে জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগে। মাঝে টানা ক্রিকেটের ধকল। প্রায় আট মাস পর আবারও কন্ডিশনিং ক্যাম্পে খেলোয়াড়দের ফিটনেস নিয়ে যে খুশি নন, সেটি জানিয়েছেন বাংলাদেশ দলের ট্রেনার মারিও ভিল্লাভারায়েন, ‘আট মাস পর ওদের ফিটনেস টেস্ট হলো। গত অক্টোবর থেকে অবিরত ক্রিকেট খেলছি আমরা। খেলোয়াড় ও আমাকে বুঝতে হচ্ছে ফিটনেসের কী অবস্থা। পরের মাস থেকে এ নিয়ে আরও কাজ করতে হবে। যদি বলেন সন্তুষ্ট, তবে খুশি নই। আরও উন্নতি করতে হবে তাদের। আবারও এও বুঝতে হবে গত আট মাসে আমাদের কোনো ফিটনেস ক্যাম্প ছিল না। তবে তারা খুব যে খারাপ অবস্থায় আছে তা নয়।’

প্রথম দিন ফিটনেস পরীক্ষায় সবচেয়ে ভালো করেছেন দীর্ঘ সময় পরে জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পাওয়া জহুরুল ইসলাম। ব্লিপ টেস্টে পেয়েছেন সর্বোচ্চ ১২.৩। পেসার আবু জায়েদও ১২.৩ পেয়েছেন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২.২ পেয়েছেন ফরহাদ রেজা। ফরহাদ সবশেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন সাড়ে পাঁচ বছর আগে। লম্বা সময় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের বাইরে থাকা দুজন ক্রিকেটারের ফিটনেসে ভালো করলেও বাংলাদেশ দলের নিয়মিত ক্রিকেটাররা খুব একটা ভালো করতে পারেননি। সবারই নম্বর গড়ে ১০-১১।

কে খারাপ করেছে, কে ভালো করেছে—মারিও অবশ্য বিষয়টি এভাবে দেখতে চান না। তাঁর কথা, ‘রানিং, স্কিল, স্ট্রেংথ ফিটনেসে কে কোথায় আছে সেটা জানতে হবে। যেখানে যেখানে কাজ করা দরকার সেখানে সেখানে কাজ করতে হবে। কিছু খেলোয়াড়ের ফিটনেস নিয়ে আরও কাজ করার দরকার, আবার যারা ভালো অবস্থায় আছে তাদের আরও উন্নতি করতে হবে।’

বাংলাদেশ দল যে ধারাবাহিক বাজে ফিল্ডিং করছে—কারণ হিসেবে খেলোয়াড়দের ফিটনেসে ঘাটতির কথা আসছে। বিসিবি তাই খেলোয়াড়দের ফিটনেসে উন্নতি আনতে বিশেষ মনোযোগ দিচ্ছে। তবে মারিও মনে করেন না, ফিটনেসের কারণে একজন ক্রিকেটার ক্যাচ হাতছাড়া করেন, ‘বলতে পারি না যে এ কারণে বাজে ফিল্ডিং হচ্ছে। এটা বলা অন্যায় হবে যে ফিটনেসের কারণে ক্যাচ হাতছাড়া হচ্ছে।’

কিন্তু বিসিবি যে ফিটনেসে উন্নতি আনার উদ্যোগ নিয়েছে, সেটি কি চার দিনের এ কন্ডিশনিং ক্যাম্পে সম্ভব? বাংলাদেশ দলের ট্রেনার মনে করেন, ফিটনেসে উন্নতি করতে চার দিন মোটেও যথেষ্ট সময় নয়। অন্তত পাঁচ-ছয় সপ্তাহ তো লাগবেই। আপাতত যেহেতু সেই সময়টা পাওয়া যাচ্ছে না স্কিল অনুশীলনের পাশাপাশি ক্রিকেটারদের ফিটনেস নিয়ে বিশেষ কাজ করার পরামর্শ মারিওর।

মাশরাফি কেন কন্ডিশনিং ক্যাম্পে?

খেলোয়াড়দের ফিটনেসে নাখোশ ট্রেনার, মাশরাফির প্রশ্নবিদ্ধ অন্তর্ভুক্তি 1
কন্ডিশনিং ক্যাম্পের প্রথম দিনে খেলোয়াড়দের ফিটনেস নিয়ে খুশি হতে পারেননি ট্রেনার। একই সাথে মাশরাফিকে ক্যাম্পে অন্তর্ভক্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে অনেক।

টেস্ট খেলেন না প্রায় ১০ বছর। সেই ২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়েছিলেন টেস্ট অধিনায়ক হয়ে। প্রথম ম্যাচেই বোলিং করতে গিয়ে পা পিছলে পড়ে ব্যথা পাওয়ার মধ্য দিয়ে শেষ হয়ে যায় টেস্ট ক্যারিয়ার। পরে ২০১৭ সালের এপ্রিলে শ্রীলঙ্কা সফরের পর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাট থেকেও অবসর নিয়েছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা

যার মানে তিনি টেস্ট আর টি-টোয়েন্টি কোন ফরম্যাটেই এখন আর জাতীয় দলে খেলেন না। তাহলে তাকে কেন কন্ডিশনিং ক্যাম্পে ডাকা হয়েছে? প্রশ্ন উঠলো কন্ডিশনিং ক্যাম্পের প্রথম দিনই।

যাকে এ প্রশ্ন করা হয়েছে, সেই প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু অবশ্য মূল বিষয়টি পাশ কাটিয়ে গেছেন। আসলে নির্বাচক ও টিম ম্যানেজমেন্টের ধারণা ছিল, যেহেতু নিকট ভবিষ্যত ও আগামী বেশ কয়েক মাসে ওয়ানডে নেই, তাই মাশরাফি হয়তো ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ওয়ানডে সিরিজ খেলেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে পারেন।

কিন্তু মাশরাফি তা করেননি। উল্টো সময় চেয়েছেন। তারপরও তাকে কেন কন্ডিশনিং ক্যাম্পে ডাকা হলো? আসলে এটা কী ক্যাম্প? এ প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে খানিক বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেছেন নান্নু।

পাশ কাটানো জবাব দিতে গিয়ে বলেন, ‘এটা আসলে আফগানিস্তানের সাথে টেস্ট আর পর জিম্বাবুয়েকে সঙ্গে নিয়ে তিন জাতি টি-টোয়েন্টি সিরিজের কথা মাথায় রেখে আহ্বান করা ক্যাম্প। এটা একটা কন্ডিশনিং ক্যাম্পই মূলত। তাই মাশরাফিকেও ডাকা হয়েছে।’

এ কথা জানিয়ে প্রধান নির্বাচক বলেন, ‘মাশরাফির ইনজুরি নিয়ে আমরা ফিজিও থেকে কোনো আপডেট পাইনি। আপডেট পাওয়ার পর ওর ফিটনেস দেখার জন্যই মূলত ওকে ডাকা হয়েছে। আগে ডেকেছি ওইটা কোনো বড় বিষয় না। ডাক্তারের থেকে আপডেট না পেয়ে তাঁকে সরিয়ে নিয়েছিলাম। পরে ডাক্তারের সঙ্গে আলোচনা করে তাঁকে নিয়েছি। আমাদের যে কন্ডিশনিং ক্যাম্প সেটা কিন্তু আফগানিস্তান সিরিজের জন্য আলাদা কিছু নয়, শুধু কন্ডিশনিং ক্যাম্প।’

তাই যদি হবে, তাহলে প্রায় তিন ডজন ক্রিকেটার ডাকার অর্থ কী? এবারে নান্নু সব গুলিয়ে ফেলেন। বলেন, ‘এই কন্ডিশনিং ক্যাম্প টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টিকে মাথায় রেখে করা হয়েছে। কন্ডিশনিং ক্যাম্প করা হয়েছে কারণ অনেকদিন ধরে আমাদের প্লেয়াররা ফিটনেসের বাইরে। এই চারদিনে কিছু খেলোয়াড়কে দেখা হচ্ছে। আমাদের যারা প্লেয়ার আছে সবাই এখানে যোগ দিয়েছে। ফিটনেসের স্ট্যান্ডার্ড দেখার জন্য, যেটা মারিও ভিল্লাভারায়ন দেখছে। এটা নিয়ে আমরা কাজ করছি।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!