ইউনিক আইডি নিয়ে চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের অন্তহীন ভোগান্তি

চট্টগ্রামে শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি ফরম পূরণে নানা জটিলতা তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পিতা-মাতার নামের ভুল থাকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকার ফলে অনেক শিক্ষার্থীই ইউনিক আইডি করতে পারছেন না। এ নিয়ে শিক্ষাবোর্ডের দায়িত্বশীলদেরও নানা জটিলতায় পড়তে হচ্ছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) চট্টগ্রামের প্রোগ্রামার তাপস কুমার সাহা বলেন, শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি করার ক্ষেত্রে নানা জটিলতার কথা আমরাও শুনেছি। তবে এখানে আমাদের করার কিছুই নেই। কারণ এ আইডি তৈরি করছে বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরো (ব্যানবেইস)। তারা সমস্যা সমাধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

মাধ্যমিক স্কুলের কয়েকজন শিক্ষক জানান, পিতামাতার জন্মনিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল থাকায় এর প্রভাব শিক্ষার্থীদের ওপর পড়ছে। অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীরা ভুল তথ্য দিয়েই ইউনিক আইডি করে নিচ্ছে। যা পরবর্তীতে আরও বেশি ভোগান্তির কারণ হবে। আবার মা-বাবার ভুল তথ্যগুলো ঠিক করতে দৌড়ঝাপ করতে হচ্ছে নির্বাচন কার্যালয়ে ও শিক্ষাবোর্ডে।

নগরের কাজেম আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সানজিদা মোস্তাক সানজি বলেন, আমরা প্রত্যেক শিক্ষার্থীর নিকট ফরম দিয়ে দিয়েছি। শিক্ষার্থীরা পূরণ করে তা আমাদের জমা দেবে। আমরা পরে সেটি অনলাইনের মাধ্যমে পোস্টিং দেব। এভাবে করা হবে শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি।

শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের এনআইডিতে ভুল থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জন্মনিবন্ধন, পাসপোর্ট, জায়গার দলিলসহ বিভিন্ন ডকুমেন্টস করতে গিয়ে প্রতিদিনই মানুষ বিভিন্ন সমস্যায় পড়ছে। এ ব্যাপারে জনপ্রতিনিধিরা অত্যন্ত আন্তরিক হলেও আইনগত কারণে কোন সমাধান দিতে পারছেন না। কিছু সচেতন ও শিক্ষিত মানুষ বিভিন্ন ডকুমেন্টস প্রদর্শন করে এনআইডি সংশোধন করলেও বেশিরভাগ মানুষ সংশোধন করতে পারছে না। তবে ভুল থাকলেও শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি মা-বাবার এনআইডি মতোই হবে।

মাইজভান্ডার রহমানিয়া আহমদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ শহিদুল আলম বলেন, শিক্ষার্থীদের অন্যান্য ডকুমেন্টস বা তথ্য ঠিক থাকলেও জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুসারে পিতা-মাতার নাম লিখতে গিয়ে অনিচ্ছাসত্ত্বেও ভুল তথ্য দিতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ২০০৮ সালে যখন প্রথম এনআইডি করেছিল, তখন সাধারণ মানুষ এটার গুরুত্ব বোঝেনি। তাই বেশিরভাগ মানুষের এনআইডি এখনও ভুল রয়েছে। একই পিতা-মাতার একাধিক সন্তানের নামে পিতা-মাতার নামের মিল নেই। আমি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডি, জন্মনিবন্ধন, ৮ম ও ৯ম শ্রেণির রেজিস্ট্রেশন করতে গিয়ে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের অনেক সমস্যা আমি নিজেই ফেস করছি।

তিনি বলেন, আমার মতে পিতা-মাতা, ভাই-বোন পরিবারের সকল সদস্যদের তথ্যগুলো সঠিকভাবে সংগ্রহ করে প্রত্যেকের এনআইডি পুনরায় হালনাগাদ করে সরকারিভাবে বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংশোধন করা প্রয়োজন। তারপর এই সংশোধিত আইডি দিয়ে পার্সপোর্ট, সার্টিফিকেট, জন্মসনদ, জায়গার দলিলসহ সকল ডকুমেন্ট সংশোধনের সুযোগ দেওয়া উচিত। অন্যথায় ভবিষ্যতে এই ভুলগুলো আরো বাড়তে পারে এবং সাধারণ নাগরিকরা হয়রানির শিকার হতে পারে।

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, ‘মা বাবার সার্টিফিকেট নাম অনুসারে সন্তানদের ইউনিক আইডি করা হচ্ছে। এটা করার ফলে কোন শিক্ষার্থী দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে না।’

বাংলাদেশ শিক্ষাতথ্য ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর (ব্যানবেইস) চিফ পরিসংখ্যানবিদ শেখ মোহাম্মদ আলমগীর চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা প্রত্যেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একজন শিক্ষককে দায়িত্ব দিয়েছি নিজ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করা জন্য। এজন্য ওই শিক্ষককে ট্রেনিং দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য একটি করে ফরম দেওয়া হয়েছে। উক্ত ফরম পূরণ করে অনলাইনে পোস্টিং দিবেন দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই শিক্ষক।’

তথ্য ভুল থাকার বিষয়ে শেখ মোহাম্মদ আলমগীর বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মা-বাবার এনআইডির নাম অনুসারেই সব তথ্য লিখতে হবে। ভুল থাকলে এনআইডি সংশোধন করতে হবে। অন্যথায় এখন ইউনিক আইডি করে ফেললেও পরবর্তীতে সব তথ্য সংশোধন করে নিতে হবে।’

তিনি বলেন, দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই একযোগে ফরম পাঠানো হয়েছে। এ বছরের শুরুর দিকে তা পূরণ করা কথা ছিল। করোনার কারণে তা বন্ধ করা হয়েছিল। এ অক্টোবর থেকে আবার চালু করা হয়েছে কার্যক্রম। তবে, তথ্য সংগ্রহ চলছে এখনও অনলাইনে পোস্টিং শুরু হয়নি। শিক্ষার্থীদের ইউনিক আইডির সাথে মিল রেখেই পরবর্তীতে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি হবে।

কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!