১৬ কোটি ৬৫ লাখ মানুষের দেশে গড় আয়ু এখন ৭২.৬ বছর

মুসলিম বেড়েছে, অন্য ধর্মাবলম্বী কমেছে

সরকারি হিসেবে বাংলাদেশের জনসংখ্যা বর্তমানে ১৬ কোটি ৬৫ লাখ। এছাড়া দেশের মানুষের গড় আয়ুও বেড়েছে। ২০১৯ সালের হিসাবে প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ৭২ দশমিক ৬ বছর, যা ২০১৮ সালে ছিল ৭২ দশমিক ৩ বছর। চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি, খাদ্য ও পুষ্টি গ্রহণে অগ্রগতির কারণেই মূলত মানুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু বাড়ছে— এমন অভিমত গবেষকদের।

মঙ্গলবার (৩০ জুন) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস ২০১৯’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। সারাদেশের ২ হাজার ১২টি নমুনা এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে।

মুসলিম বেড়েছে, অন্য ধর্মাবলম্বী কমেছে
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে মোট জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিম ৮৮ দশমিক চার শতাংশ, যেটি ২০১৫ সালে ছিল ৮৮ দশমিক দুই শতাংশ। হিন্দুসহ অন্যান্য ধর্মের জনসংখ্যা ১১ দশমিক ছয় শতাংশ, যা ২০১৫ সালে ছিল ১১ দশমিক আট শতাংশ।

মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে
২০১৯ সালের হিসাবে প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ৭২ দশমিক ৬ বছর, যা ২০১৮ সালে ছিল ৭২ দশমিক ৩ বছর। এছাড়া ২০১৭ সালে দেশের মানুষের গড় আয়ু ছিল ৭২ বছর, ২০১৬ সালে ৭১ দশমিক ৬ বছর এবং ২০১৫ সালে ছিল ৭০ দশমিক ৯ বছর। পুরুষের চেয়ে মহিলাদেরই প্রত্যাশিত গড় আয়ু বেশি। ২০১৯ সালে পুরুষের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৭১ দশমিক ১ বছর। ২০১৮ সালে এটি ছিল ৭০ দশমিক ৮ বছর, ২০১৭ সালে ৭০ দশমিক ৬ বছর, ২০১৬ সালে ৭০ দশমিক ৩ বছর এবং ২০১৫ সালে ছিল ৬৯ দশমিক ৪ বছর। অন্যদিকে মহিলাদের ক্ষেত্রে দেখা গেছে, ২০১৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে তাদের প্রত্যাশিত গড় আয়ু যথাক্রমে ৭৪ দশমিক ২ বছর, ৭৩ দশমিক ৮ বছর, ৭৩ দশমিক ৫ বছর, ৭২ দশমিক ৯ বছর এবং ৭২ বছর।

গ্রামে বাড়ছে বয়স্ক শিক্ষার হার
শিক্ষার হারের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, সাত থেকে তার বেশি জনসংখ্যার মধ্যে এখন শিক্ষার হার ৭৪ দশমিক চার শতাংশ। এছাড়া ১৫ বছর থেকে তার উপরের জনসংখ্যার মধ্যে শিক্ষার হার ৭৪ দশমিক সাত শতাংশ। অন্যদিকে ১৫ বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে শিক্ষার হার গ্রাম এলাকার চেয়ে শহর এলাকায় প্রায় ২০ দশমিক দুই শতাংশ বেশি। সাত বছর বা তার বেশি বয়সীদের মধ্যে শিক্ষার হার প্রায় ১৭ দশমিক দুই শতাংশ। তবে ২০১৩ সাল থেকে শহর এলাকার তুলনায় গ্রাম এলাকায় বয়স্ক শিক্ষার হার দ্রুতগতিতে বাড়ছে।

কমেছে মৃত্যুহার
মৃত্যু হারের ক্ষেত্রেও বাংলাদেশের উন্নতি হয়েছে। ২০১৯ সালের হিসাব অনুযায়ী প্রতি হাজার মানুষের মধ্যে মৃত্যু হার ছিল চার দশমিক নয়জন। ২০১৫ সালে এটি ছিল পাঁচ দশমিক একজন। এছাড়া প্রতি হাজার জীবিত জন্ম নেওয়া শিশুর ক্ষেত্রে মৃত্যু হার দাঁড়িয়েছে ২১ জনে। যেটি ২০১৫ সালে ছিল হাজারে ২৯ জন। এছাড়া ২০১৯ সালে এক থেকে চার বছর বয়সী শিশু মৃত্যু কমে হয়েছে প্রতি হাজারে এক দশমিক সাতজন। যা ২০১৫ সালে ছিল দুজন। অন্যদিকে মাতৃমৃত্যুর হারও কমেছে। এটি গত পাঁচ বছরে সমহারে কমেছে। ২০১৫ সালে মাতৃমৃত্যুর অনুপাত ছিল এক দশমিক ৮১, যেটি ২০১৯ সালে কমে দাঁড়িয়েছে এক দশমিক ৬৫-তে।

বিয়েশাদির গড় বয়স
বাংলাদেশে পুরুষদের প্রথম বিবাহের গড় বয়স কিছুটা কমেছে। তবে বেড়েছে মহিলাদের। পুরুষদের বিবাহের গড় বয়স ২০১৫ সালে ছিল ২৫ দশমিক ৩ বছর। সেটি কমে ২০১৯ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক দুই বছরে। অন্যদিকে ২০১৫ সালে মহিলাদের বিবাহের বয়স ছিল ১৮ দশমিক চার বছর। ২০১৯ সালে সেটি কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক পাঁচ বছরে।

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার বাড়ছে না
গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার বাড়েনি। এটি প্রায় একই রকম রয়ে গেছে। নমুনা এলাকায় এই হার ৬৩ দশমিক চার শতাংশ। শহর এলাকায় মহিলারা ৬৪ দশমিক চার শতাংশ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার করে। অন্যদিকে গ্রামে ৬২ দশমিক সাত শতাংশ মহিলা এই পদ্ধতি ব্যবহার করে। তবে জন্মনিয়ন্ত্রণের আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহারের হার বেড়েছে।

পরিবারের বৈশিষ্ট্য
২০১৯ সালে পরিবারের আলোর উৎস হিসেবে বিদ্যুৎ ব্যবহার করছে ৯৩ দশমিক পাঁচ শতাংশ পরিবার, যেটি ২০১৫ সালে ছিল ৭৭ দশমিক নয় শতাংশ। স্যানিটারি পায়খানা ব্যবহার করে ৮১ দশমিক ৫ শতাংশ পরিবার, যেটি ২০১৫ সালে ছিল ৭৩ দশমিক পাঁচ শতাংশ। ট্যাপ বা নলকূপের পানি ব্যবহার করছে ৯৮ দশমিক এক শতাংশ পরিবার, যেটি ২০১৫ সালে ছিল ৯৭ দশমিক নয় শতাংশ।

পরিবার প্রধান কারা
পরিবার প্রধানের ক্ষেত্রে পুরুষ ৮৫ দশমিক চার শতাংশ এবং মহিলা ১৪ দশমিক ছয় শতাংশ। যেটি ২০১৫ সালের তুলনায় মহিলাদের ক্ষেত্রে বেড়েছে। কিন্তু পুরুষদের ক্ষেত্রে সেটি কমেছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!