‘বাসার নিচে আয়, দেখ তোকে কি করি’, হুমকির মুখে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক গৃহবন্দি

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাইদুল ইসলামকে বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বাসভবনের নিচে এসে হুমকি দিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির কয়েকজন সদস্যের নেতৃত্বে এই হুমকি দেওয়া হচ্ছে।

রোববার (১২ মে) সন্ধ্যায় মাইদুল ইসলাম তাঁর ফেসবুকে ‘জরুরি বার্তা’ শিরোনামের এক স্ট্যাটাসে হুমকি দেওয়ার কথা সবিস্তারে জানান। তাতে তিনি লিখেছেন, ‘আজ ১২ই মে সন্ধ্যা ৭.৫০। আবাসিক শিক্ষকদের যে ভবনে থাকি সে ভবনের সামনের খোলা জায়গায় ১০-১৫ জনের একটা দল এসে আমার নাম করে অশ্রাব্য গালিগালাজ করে। জন্তুর মত হিংস্রভাবে চিৎকার চেচাঁমেচি করতে থাকে। যার কিছু কথা এমন “মাইদুল বাসার নীচে নাম। কতবড় বিপ্লবী হইছিস দেখি, বাসার নীচে নেমে আয় দেখ তোকে কি করি।”
১০ মিনিটের দানবীয় চিৎকার, চেচাঁমেচির পর চলে যায়। এখানে দুই বিল্ডিং এর সব বাসিন্দা শুনেছেন বলে ধারণা করছি। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে প্রক্টরকে কল দিলাম, একবার রিসিভ করে দুই সেকন্ড ধরে কথা না বলে লাইন কেটে দিলেন। কয়েকবার কল করেও ফোনে পাওয়া গেল না। এই পোস্টটি করার আগে প্রক্টরকে ফোনে না পেয়ে ইমেইল করলাম। এখন বাসাবন্দি হয়ে আছি।
গত একবছর হল এসবই চলছে। এইরকম নিপীড়ন, অনিপরাপত্তা কোথায় হয়?’

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে মাইদুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আর কত সহ্য করা যায়? প্রতিদিনই এসব সহ্য করে ক্লাসে যাচ্ছি। যেখানে যাই সেখানেই এরকম হুমকি পাই। ক্লাশে যাওয়ার সময়, ঝুপড়িতে গেলে সবখানেই আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বাজে মন্তব্য করে ওরা। বিশ্ববিদ্যালয় কতৃর্পক্ষকে জানালেও অফিসিয়ালি কোনো উপকার পাইনি।’

তিনি আক্ষেপ করে আরও বলেন, ‘এক ধরনের বন্দি অবস্থায় বসবাস করছি। আমার জীবনের কোনো নিরাপত্তাই নাই। ওরা ইফতারের পর বাসার নিচে এসে এমন করে যাচ্ছে। এখনো (রাত ১০.৩০টা) তারা বাসার ছাদে অবস্থান করছে কিন্তু কতৃর্পক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

প্রক্টরকে ফোন করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি অভিযোগ করে বলেন, ‘এই অবস্থায় উনি ফোনটা পর্যন্ত ধরেননি আমার। শিক্ষক সমিতির সভাপতি আগামীকাল লিখিত অভিযোগ দিতে বলেছেন। লিখিত অভিযোগ দেবো।’

তিনি জানান, এর আগেও এমন জীবননাশের হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম।

Screenshot_2019-05-13-Maidul-Islam
ফেসবুকে মাইদুল ইসলামের স্ট্যাটাস
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সমর্থক শিক্ষক মাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারায় হাটহাজারী থানায় গত বছর মামলা করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের বিলুপ্ত কমিটির সদস্য ইফতেখারুল ইসলাম। তিনি ছাত্রলীগের আলমগীর টিপু গ্রুপের কর্মী। মামলার এজাহারে শিক্ষক মাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কটুক্তি করে পোস্ট দেওয়ার অভিযোগ করেন ছাত্রলীগ নেতা ইফতেখারুল।

এ মামলার আগে মাইদুল ইসলাম এবং যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক আলী আর রাজীকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছিল ছাত্রলীগ।

এরপর থেকে ক্যাম্পাসে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন দুই শিক্ষক। আর নিরাপত্তাহীনতার কারণে মাইদুল ইসলাম তার ক্যাম্পাসের বাসাও ছেড়ে দিয়েছিলেন। ওই অবস্থায় গত ৬ আগস্ট হাইকোর্ট থেকে তিনি আগাম জামিন নেন।

হাইকোর্টের দেওয়া আট সপ্তাহের জামিন শেষে ২৪ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন মাইদুল ইসলাম। আদালত তা নাকচ করে দিয়ে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয়। পরদিন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মাইদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে। এরপর ৯ অক্টোবর উচ্চ আদালত শিক্ষক মাইদুলকে ছয় মাসের জামিন দেন।

এমএন/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!