বাজারে ধর্ষিতা নারীকে মারধর করে তিন ইউপি সদস্যের ‘দ্রুতবিচার’

বান্দরবানের লামায় অন্তঃসত্ত্বা ধর্ষণ

বান্দরবানের লামা উপজেলা মদ্যপান করিয়ে এক নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। ওই নারী ছয় মাসের অন্তঃসত্ত্বা এবং কিছুদিন আগে তাঁর স্বামী তাকে ছেড়ে চলে যান বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন। এদিকে ধর্ষণের অভিযোগে মঙ্গলবার দিবাগত রাত একটায় নূর হোসেন নামের একজনকে আটক করছে পুলিশ।

জানা গেছে, বৈশাখী মেলায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলে মঙ্গলবার দুপুরে একটি ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলে করে অন্তঃসত্ত্বা ওই নারীকে উপজেলার অংহারীপাড়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। বেলা আড়াইটার দিকে অংহারিপাড়ায় থোয়াই সাচিং মারমার ঘরে বসে চার-পাঁচজন মিলে জোর করে দেশীয় মদ পান করায় ওই নারীকে । পরে ওই এলাকার শ্মশানসংলগ্ন তামাক ক্ষেতে নিয়ে গিয়ে গণধর্ষণের এই ঘটনা ঘটে। বদুঝিরি এলাকার নূর হোসেন, বড় ছনখোলা এলাকার নূর মোহাম্মদ ও কুমারী এলাকার মো. রুবেলসহ ৪-৫ জন মিলে জোর করে মদ খাইয়ে তাঁকে ধর্ষণ করেন বলে অভিযোগ উঠে।

জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার দিকে পাশের এলাকার লোকজন এই নারীকে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে পায়। পরে ওই নারীকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসার সময় স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. কামাল উদ্দিন ও তাঁর ছেলে কাফি উদ্দিন ওই নারীকে বিচারের নামে মারধর করেন।

জানা গেছে, বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ধর্ষকদের পক্ষ অবলম্বন করে তিনজন জনপ্রতিনিধি। এরা হলেন ৮ নম্বর ইউপি সদস্য মো. সহিদুজ্জামান, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের কামাল উদ্দিন ও সংরক্ষিত নারী সদস্য আনাই মারমা। পরে ওই নারীকে উপজেলার ইয়াংছা বাজারে নিয়ে প্রকাশ্যে বিচারে বসেন।

এই ব্যাপারে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ৮ং ইউপি সদস্য মো. সহিদুজ্জামান বলেন, আমরা ঘটনার পর কোন বিচার করিনি। মেয়েটিকে তার মায়ের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। পরে শুনলাম তাকে রাতে পুলিশ হেফাজতে নিয়েছে।

ওই নারী বলেন, মেম্বাররা আমার কোন কথা না শুনে সাদা কাগজে টিপসই নিয়ে যায়। আর আমাকে বলেন যা হয়েছে তা ভুলে যাওয়ার জন্য এবং কোথাও কোন অভিযোগ না করার জন্যও শাসায়।

ভুক্তভোগী ওই নারী আরো বলেন, ইউপি সদস্যরা মূল হোতা নূর হোসেন, নূর মোহাম্মদ ও রুবেলকে বাড়ি চলে যেতে বলেন। পরে আমি আমার মায়ের কাছে চলে আসি। ছয় বছর বয়সী এক ছেলে আছে আমার।

মারধরের ও বিচারের ঘটনায় অভিযুক্ত ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের কামাল উদ্দিনের সাথে ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়।

লামা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপ্পেলা রাজু নাহা বলেন, ওই নারী ধর্ষণের বিষয়টি অস্বীকারের পাশাপাশি মামলা করতে চাচ্ছে না। তবে ওই নারী ও অভিযুক্ত নুর হোসেনকে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। ওই নারী অভিযোগ করার সঙ্গে সঙ্গে মামলা নেওয়া হবে।

এদিকে ধর্ষণের শিকার নারীর মা তাঁর মেয়ের ধর্ষণের ঘটনার বিচার দাবি করেছেন।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!