সিটি কর্পোরেশনের নজরদারিতে আসছে পুরো চট্টগ্রাম

৪৯২ কোটি টাকার ‘স্মার্ট সিটি প্রকল্প’

চট্টগ্রাম মহানগরীর বাসিন্দাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা উন্নত করতে আসছে ‘স্মার্ট সিটি প্রকল্প’। জনসাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা ছাড়াও অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক স্বার্থে নজরদারি করার লক্ষ্য নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। এটি বাস্তবায়িত হলে নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে নিজেদের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নগর ভবনে বসেই মনিটরিং করতে পারবে চসিক। প্রকল্পের অধীনে নগরীর ৫০০ পয়েন্টে বসানো হবে এক হাজার সিসি ক্যামেরা। এর মাধ্যমে একসঙ্গে ৩০০ জনকে শনাক্ত করা যাবে।

সিটি করপোরেশন আশা করছে, এর ফলে নগরীতে অপরাধ দমন ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কাজে ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতাও কমে আসবে। সবমিলিয়ে চসিকের নজরদারিতে আসবে পুরো নগরী। নগর ভবনে বসেই হবে মনিটরিং।

কেমন হবে ‘স্মার্ট সিটি প্রকল্প’?

জানা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাস্তবায়নযোগ্য বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) অন্তর্ভূক্ত ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন স্মার্ট সিটি’ শীর্ষক প্রকল্পটির ‘উন্নয়ন প্রকল্প ছক (ডিপিপি)’ গত মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে চসিক। প্রকল্পটির প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৯১ কোটি ৯৯ লাখ ৭১ হাজার টাকা। যার পুরোটাই সরকার থেকে আদায় করতে চায় চসিক। প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয়েছে চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে ২০২১ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় নগরের প্রধান প্রধান এলাকাগুলোর নজরদারি ডিজিটাল পদ্ধতিতে সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় আরও রয়েছে ২৪ বাই ৭ কম্প্রিহেনসিভ সার্ভিলেন্স সিস্টেম ডিজাইন ও স্থাপন; যানবাহন, মানুষের অবস্থান, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দুর্যোগ কিংবা সংকটপূর্ণ সময়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা; তালিকাভুক্ত অপরাধী বা দুর্ঘটনায় দায়ী ব্যক্তি বা যানবাহন ট্র্যাকিং; গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর নিরাপত্তার স্বার্থে ফেইস রিকগনিশন সিস্টেম চালু করা; নগরের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গের সুরক্ষা নিশ্চিত করা; রাষ্ট্রীয় বা ধর্মীয় বা অন্যান্য অনুষ্ঠানস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা; শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য স্মার্ট এডুকেশন সিস্টেম চালু করা; স্বাস্থ্যসেবার মান উন্নয়নের জন্য আধুনিক স্মার্ট হেলথ কেয়ার সিস্টেম সরবরাহ করা।

যা যা উদ্দেশ্য

এদিকে ডিপিপিতে এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যমাত্রা সম্পর্কে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম শহরের নেটওয়ার্ক অবকাঠামো বৃদ্ধি, নাগরিক ও সরকারের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপন, নগরকে সুরক্ষিত করার জন্য ভিডিও সার্ভিলেন্সের আওতায় আনা ও জনসাধারণের জন্য আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার দ্বার উন্মোচন করা; মেয়র হটলাইন সিস্টেম তৈরি যার মাধ্যমে জনগণের অভিযোগ ও পরামর্শ জানা এবং যথাথভাবে নাগরিক সেবা প্রদান; চট্টগ্রাম নগরের প্রধান এলাকাগুলো একটি নেটওয়ার্ক সিস্টেমের আওতায় আনা যাতে সিটি করপোরেশনের সকল ওয়ার্ড কার্যালয়, স্কুল-কলেজ, হাসপাতাল ও অন্যান্য কার্যালয়গুলোকে একটি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংযুক্ত করা।

নগর ভবনে বসেই মনিটরিং

প্রকল্প সম্পর্কে জানতে চাইলে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মঙ্গলবার প্রকল্পটি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। চট্টগ্রাম শহরকে স্মার্ট সিটিতে রূপান্তরের লক্ষ্যে এই প্রকল্পের আওতায় নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে। পুরো শহরের কোথায় কী হচ্ছে, কে কোথায় কখন অবস্থান করছে- তা আমরা নগর ভবনে বসেই মনিটরিং করতে পারবো। হেড অফিসে বসে ৪১টি ওয়ার্ডে চসিকের উন্নয়ন কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করতে পারবো। কোথায় যানজট হচ্ছে, কোথাও কোনো অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে কিনা তা পর্যবেক্ষণ করতে পারবো।’

মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের উদ্যোগে নেওয়া এই প্রকল্প মন্ত্রণালয় অনমোদন দেবে বলে শতভাগ আশাবাদী মো. সামসুদ্দোহা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!