মাশরাফির ‘মানহানি’/ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে শাস্তির মুখে চট্টগ্রাম মেডিকেলের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক

জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ও নড়াইলের সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মুর্তজার বিরুদ্ধে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে এবার শাস্তির মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের হেমাটো অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. একেএম রেজাউল করিম গত ২৮ এপ্রিল তাঁর ফেসবুক টাইমলাইনে স্ট্যাটাস দেন, ‘বাংলাদেশের ডাক্তারদের বোল্ট (বোল্ড) করতেই বড়ই আনন্দ। ম্যাশ চিকিৎসার জন্য অনেকবার ডাক্তারদের ছুরি কাঁচির নিচে গেছেন। তাঁদের অনেক তোয়াজ করতে হইছে। সেই ডাক্তারের বংশবদ পাইছি এবার।’

এ ঘটনায় সারা দেশের যে ছয় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নিতে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে তাদের মধ্যে তিনিও একজন। ডা. একেএম রেজাউল করিম ছাড়া অভিযুক্ত অন্যান্য চিকিৎসকরা হলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের রেসপিরেটরি মেডিসিনের সহযােগী অধ্যাপক ডা. মােহাম্মদ আমিনুল ইসলাম, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের নিউরােলজি বিভাগের সহযােগী অধ্যাপক,ডা. পঞ্চানন দাশ, বগুড়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেডিয়াট্রিকসের রেজিষ্ট্রার ডা. আইরিন আফরােজ, নওগাঁ জেলা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মৌমিতা জলিল জুলি ও মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মেডিকেল অফিসার ডা. ফাহমিদী হাসান ।

health-ministry-notice
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো কারণ দর্শানোর নোটিশ

সোমবার (৬ মে) স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ থেকে কারণ দর্শানোর এ নোটিশ জারি করা হয়। অভিযুক্ত চিকিৎসককে নােটিশ প্রাপ্তির তিন কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানাের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এদিকে ফেসবুক সার্চে দেখা যায়, ৭ মে রাত ১২টার পর ডা. একেএম রেজাউল করিম তাঁর নিজের ফেসবুক একাউন্ট ‘ডিঅ্যাক্টিভ’ করেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব শামীমা নাসরীন স্বাক্ষরিত ওই প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়, ফেসবুক টাইমলাইনে মাননীয় সংসদ সদস্য মাশরাফি বিন মর্তুজা সম্পর্কে অশালীন এবং অযাচিত ভাষা ব্যবহার করে পাবলিক পোস্ট দেয়া হয়েছে। একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে এ আচরণ অনুচিত ও অনভিপ্রেত উল্লেখ করে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘এসব আচরণ সরকারি কর্মচারী আচরণ বিধিমালার পরিপন্থী যা সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩(খ) মোতাবেক ‘অসদাচরণ হিসেবে গণ্য। তাই সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা, ২০১৮ এর ৩ (খ) মােতাবেক অসদাচরণের দায়ে অভিযুক্ত করে কেন উক্ত বিধিমালার অধীনে যথােপযুক্ত দণ্ড প্রদান করা হবে না তা এ নােটিস প্রাপ্তির ৩ (তিন) কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানাের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরােধ করা হল।’

প্রসঙ্গত, গত ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিএমএ শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সাল ইকবাল মাশরাফির হাসপাতাল তদারকির দিকে ইঙ্গিত দিয়ে চিকিৎসকদের কর্মবিরতির হুমকি দিয়ে স্ট্যাটাস দেন ফেসবুকে। পরে ব্যাপক সমালোচনার মুখে তিনি সেটা মুছে দিতে বাধ্য হন। যদিও ততোক্ষণে অনেকে ওই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট পোস্ট করে ফয়সাল ইকবালের কড়া সমালোচনায় মেতে ওঠেন।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের ওয়ানডে অধিনায়ক ও নড়াইল-২ আসনের সংসদ সদস্য গত ২৫ এপ্রিল বিকেলে আকস্মিকভাবে নড়াইল সদর হাসপাতাল পরিদর্শনে যান। এ সময় হাজিরা খাতায় তিন চিকিৎসকের স্বাক্ষর না দেখে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আব্দুস শাকুর এবং পরে অনুপস্থিত সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডা. আকরাম হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন মাশরাফি। কথা বলার একপর্যায়ে সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আকরাম হোসেনকে উদ্দেশ্য করে মাশরাফি মোবাইল ফোনে তাঁকে বলেন, ‘ফাইজালামি পাইছেন?….এখন বলেন আমি আপনারে কী করবো?….।

এ ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর চিকিৎসকসহ অন্যদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তবে মাশরাফির পক্ষে অবস্থান নেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে চিকিৎসকদের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ‘আপনি একজন জাতীয় ডাক্তার হতে পারেন কিন্তু একজন মাশরাফি সৃষ্টি করতে পারবেন? পারবেন আপনারা? আপনারা যাকে নিয়ে লিখছেন তার সম্পর্কে মনে রাখতে হবে কাকে নিয়ে লিখছেন। কী লিখছেন। আসলে আপনি কি অর্জন করতে চান। আপনি যা অর্জন করতে চাচ্ছেন তা সম্মান দিয়েই তো অর্জন করতে হবে। কাজের মধ্য দিয়েই তো হতে হবে। নাকি আপনি বিপ্লবী আর প্রতিবাদী কথা লেখে সম্মানি মানুষকে অসম্মান করে অর্জন করবেন। আমরা ভুল ধরিয়ে দিব অবশ্যই। ভুল ধরিয়ে দেয়ার পর সমাধানের রাস্তাও আমাদের বের করতে হবে।’

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!