চট্টগ্রামে গরুর মাংস নিয়ে অরাজকতা, দায় এড়াচ্ছে সিটি করপোরেশন
চট্টগ্রামে গরুর মাংস নিয়ে অরাজকতা চলছে। নগরীর বিভিন্ন বাজারে মাংসের দাম বিভিন্ন রকম। বাজারভেদে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬৮০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত। মাংস বিক্রেতারা প্রদর্শন করছেন না মূল্যতালিকা। কোনো কোনো বাজারে মূল্যতালিকার চেয়ে অতিরিক্ত দাম হাঁকাচ্ছেন বিক্রেতারা। এ নিয়ে ক্রেতাদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ কাজ করছে।
ঢাকায় সিটি করপোরেশন গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে দিলেও চট্টগ্রামে সিটি করপোরেশন এখনো পর্যন্ত এরকম কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। সংশ্লিষ্টদের দাবি, দ্রুত বাজার মনিটরিং ও দাম নির্ধারণে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ নিতে হবে।
বুধবার (৮ মে) দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, নগরীর চউক কর্ণফুলী বাজারে হাঁড়সহ দেশি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০ টাকা আর হাঁড়ছাড়া ৬৫০ টাকা।
মাংস বিক্রেতা আবুল কালাম জানান, ভারত থেকে গরু আসছে না বলে মাংসের দাম বেশি। ভারত থেকে গরু এলে মাংসের দাম কমে যাবে।
ঢাকার চেয়ে চট্টগ্রামে গরুর মাংসের দাম বেশি কেন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ঢাকায় গাড়ি ভাড়া নেই। সে জন্য দাম কম।
কাজীর দেউড়ি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, মাংস বিক্রেতারা মূল্যতালিকা প্রদর্শন করছেন না। মূল্যতালিকায় মাংসের দাম ৬৫০ টাকা থাকলেও বিক্রেতারা ক্রেতাদের কাছে দাম হাঁকাচ্ছেন ৬৮০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা পর্যন্ত।
অন্যদিকে, রিয়াজউদ্দিন বাজারের প্রতিটি মাংসের দোকানেই হাঁড়ছাড়া গরুর মাংস বিক্রি করা হচ্ছে ৬৮০ টাকা।
অন্য বাজারগুলোর চেয়ে রিয়াজউদ্দীন বাজারে দাম বেশি কেন প্রশ্ন করা হলে এক বিক্রেতা বলেন, সবাই ৬৮০ টাকা দামে বিক্রি করছে। কমিটি যা নির্ধারণ করে দিয়েছে, আমরা সে দামে বিক্রি করছি।
রিয়াজউদ্দিন বাজারের মাংস ক্রেতা সিরাজুল ইসলাম বলেন, গরুর মাংসের দাম অনেক বেশি। তবে যেখান থেকে মাংস বিক্রেতারা মাংস সংগ্রহ করেন, সেখানে নজর দেওয়া উচিত।
রেজাউল করিম নামে এক ক্রেতা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, চট্টগ্রামে এক কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে হাঁড়সহ ৬২০ টাকা, হাঁড়ছাড়া ৭২০ টাকা। অথচ ঢাকায় একই মাংস সিটি করপোরেশনের নির্ধারণ করে দেওয়া মূল্য প্রতি কেজি ৫২৫ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে। ঢাকায় মাংসের মূল্য নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়নে ম্যাজিস্ট্রেটরা অভিযান চালাচ্ছেন। চট্টগ্রামে দাম নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। এই কারণে এখানে কসাইরা বেপরোয়া। যে যেভাবে পারছে মুনাফা করছে। এই সিন্ডিকেট কে ভাঙবে?
ডেইরি ফারমার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শাহ ইমরাম জানান, এক কেজি গরুর মাংসের উৎপাদন ব্যয় ৩৫০ টাকা। তাই বাজারে এর দাম ৪০০ টাকা থেকে ৪২০ টাকার বেশি হওয়া উচিত নয়। অথচ চট্টগ্রামে সেই মূল্য ৬২০ টাকা।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন বলেন, ঢাকায় গরুর মাংসের দাম ৬২৫ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। চট্টগ্রামে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়নি। এজন্য দাম বাড়ানোর প্রবণতা বেশি ব্যবসায়ীদের মধ্যে। আমাদের দাবি, অতি দ্রুততম সময়ে বাজার মনিটরিং এবং দাম নির্ধারণে সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।
সিটি করপোরেশন মাংসের দাম নির্ধারণ করে দিতে পারে কিনা জানতে চাইলে চসিকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আক্তার বলেন, আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সিটি করপোরেশন অবশ্যই গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে দিতে পারে।
গরুর মাংসের বাড়তি দাম প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক দেলোয়ার হোসেন বলেন, দাম বেশি হওয়ার কথা নয়। কোনো কোনো ব্যবসায়ীর কারসাজি থাকতে পারে। গত ২৮ এপ্রিল থেকে জেলা প্রশাসন বাজার মনিটরিং করছে। অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। এছাড়া পণ্যের মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করলে আমরা গোপনে অভিযান চালাবো।
এ ব্যাপারে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, জোর করে কিছু করা যায় না। দাম নির্ধারণ করে দেওয়ার জন্য আমাদের কোনো অথরিটি নেই। থাকলে তো গরুর দামই নির্ধারণ করে দেওয়া হতো। জনগণের কথা বিবেচনা করে আমরা অনেক কাজ করে থাকি। তবে গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেওয়া সিটি করপোরেশনের কাজ নয়। এটা ব্যবসায়ীদের মূল্যবোধের ওপর নির্ভর করে। সেন্টিমেন্টের বশে কোনো কাজ করা ঠিক নয়; যা পরবর্তীতে রক্ষা করা যাবে না। লোকদেখানো কোনো কিছু আমরা করতে চাই না।