২ সংস্থার দ্বন্দ্বে বেদখলে যাচ্ছে কর্ণফুলীতে জেগে ওঠা মাঝের চর

অধিকার নিয়ে বন্দর ও জেলা প্রশাসনের রশি টানাটানি

কর্ণফুলী নদীর মাঝের চর এলাকায় বন্দরের ৪০৪ একর ভূমি নিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সঙ্গে রশি টানাটানি চলছে চট্টগ্রাম বন্দরের। বন্দরের নামে ওই ভূমির বিএস খতিয়ান থাকার পরও জেলা প্রশাসন সেটা পরিবর্তন করে ১ নম্বর খতিয়ানভুক্ত করে— এমন অভিযোগ বন্দরের।

পরে ওই জায়গাটি নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করা হয় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। কিন্তু প্রয়োজনীয় দলিলপত্র দাখিল করতে না পারায় মামলা ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সেই মামলা খারিজ হয়ে যায়। এতে বন্দরের পক্ষে ডিক্রি দেন আদালত।

জানা গেছে, কর্ণফুলী ফার্টিলাইজার কোম্পানির (কাফকো) দক্ষিণ পাশে কর্ণফুলী নদীতে বিশেষ বাঁধ তৈরি করে অনেকটা পানির গতিপথ পরিবর্তন করে বিশাল আকৃতির চরের সৃষ্টি করা হয়। যা মাঝের চর নামে পরিচিত। ওই এলাকাটি বন্দর কতৃপক্ষের। এখানে বেসরকারি জেটি তৈরি করে বন্দরের সক্ষমতা আরও বাড়ানোর জন্য কয়েকটি কোম্পানিকে ইজারা দেয় বন্দর। কিন্তু জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বন্দরের বিএস পরিবর্তন করে ওই জায়গা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়। বর্তমানে দুই সংস্থার টানাটানিতে অনেকটা বেদখলে চলে যাচ্ছে ওই জায়গাটি।

জানা গেছে, ওই জায়গা জেলা প্রশাসন ১ নং খাস খতিয়ানভুক্ত করে একটি তাপবিদ্যুৎ কোম্পানিকে ইজারা দেয়। কিন্তু এ তাপবিদ্যুত কেন্দ্র হলে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দরের চরম ক্ষতি হবে বলে— এ দুই সংস্থা প্রতিবেদন দেয় সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে বৈঠক হয় দফায় দফায়।

বন্দর সূত্র জানায়, ২০১১ সালে ভূমি সংক্রান্ত একটি মিস মামলা (নং ২৮/১১) করে জেলা প্রশাসন। ওই মামলায় বন্দরে পক্ষে সব ধরনের তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করা হয়। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে মামলাটির রায় বন্দরের পক্ষে আসে। এতে মাঝের চর এলাকাটি বন্দরের বলে উল্লেখ করা হয়।

সূত্র মতে, গত ২০১১ সালে বন্দরের বিরুদ্ধে মামলা করে উক্ত জায়গাটি জেলা প্রশাসনের অধিনস্থ করেন।কিন্তু মামলা চলাকালিন আদালতে কোন ডকুমেন্ট দিতে না পারায় মামলার রায় বন্দরের পক্ষে চলে আসে।

বন্দর কর্তৃপক্ষের একজন সার্ভেয়ার জানান, মাঝের চর এলাকার জায়গাটি বন্দর কর্তৃপক্ষের। সেটি আদালত কর্তৃক স্বীকৃত। কিন্তু আমরা বারবার ওই জায়গার খাজনা দিতে গেলেও খাজনার দাখিলা দেওয়া হচ্ছে না জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট শাখা থেকে। আমরা খাজনা বকেয়াসহ পরিশোধ করবো বলে জানিয়েছি। কিন্তু তা আমলে নিচ্ছে না জেলা প্রশাসন।

তিনি বলেন, এ সুযোগে ওই জায়গাটি বিভিন্নজন দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করছে। অনেকটা বেদখলে চলে যাচ্ছে জায়গাটি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াছ হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, বন্দর সরকারের, আবার জেলা প্রশাসনও সরকারের। মাঝের চরের ওই জায়গা বন্দর ব্যবহার করতে চাইলে করতে পারবে। তাতে প্রয়োজনীয় বিধি অনুসরণ করতে নিতে হবে বন্দরকে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি ম্যানেজার (ভুমি) জিল্লুর রহমান বলেন, মাঝের চরের ৪০৪.৪৪ একর ভূমির মালিক বন্দর কর্তৃপক্ষ। বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ওই জায়গা বন্দরের প্রয়োজন।

তিনি বলেন, চট্টগ্রামের আনোয়ারা অংশে ওই বিশাল জায়গায় বন্দরের জেটি ও টার্মিনাল করার জন্য বেসরকারি কয়েকটি সংস্থাকে বরাদ্দও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু জেলা প্রশাসন সেটি বরাদ্দ দিয়েছে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করার জন্য। এখন কেউই ওই এলাকায় কিছু করতে পারছে না। এতে সরকারেরই আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে। আবার তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হলে বিমানবন্দর ও সমুদ্রবন্দর— এ দুই বন্দরেরই ক্ষতি হবে।

এএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!