১৬ বছর পর জানা গেল ২ হাজার টাকা ভিজিটের ‘ডাক্তার’ এসএসসিই পাস করেননি

১৬ বছর ধরে চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন ডা. মুহাম্মদ খোরশেদ আলম। চট্টগ্রামের মহানগর এলাকার বিভিন্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম ব্যবহার করে নিয়মিত রোগীও দেখেন তিনি। ভিজিট নেন ২ হাজার টাকা। তার চিকিৎসাপত্রে লেখা আছে তিনি এমবিবিএস, এফসিপিএস, ফেলো ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি ও এমডি ডিগ্রি নিয়েছেন।

অথচ বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের অভিযানে জানা গেছে, খোরশেদ কখনও চিকিৎসক ছিলেন না। তার এমবিবিএসসহ সব ডিগ্রি ভুয়া। ১৬ বছর ধরে ভুয়া ডিগ্রি দেখিয়ে নিজেকে চিকিৎসক পরিচয়ের পাশাপাশি রোগীও দেখে আসছেন খোরশেদ। তার চিকিৎসাপত্রে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার দেখে চট্টগ্রামের নাম করা চিকিৎসকরাও অবাক।

খোরশেদের দেওয়া চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও আছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টার দিকে চকবাজার এলাকার এক বৃদ্ধ মহিলা রোগীর বাসায় চিকিৎসা দিতে যান খোরশেদ।

খবর পেয়ে সেই বাসায় অভিযান পরিচালনা করেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো.মহিউদ্দীন। সেখান থেকে হাতেনাতে ধরা হয় ভুয়া চিকিৎসক খোরশেদকে। খোরশেদ ধরা পড়ার খবরে ভুক্তভোগীরাও ওই বাসায় ভীড় জমান।

খোরশেদ কক্সবাজারের রামু উপজেলার বাসিন্দা। তিনি চট্টগ্রামের সরাইপাড়া এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। এর আগে ২০০৭ ও ২০১১ সালে একই অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছিলো খোরশেদ।

খোরশেদের সঙ্গে থাকা একটি ব্যাগে ডাক্তারের প্রাথমিক সরঞ্জাম, বিভিন্ন ওষুধ, ইনজেকশন ও খালি চিকিৎসাপত্র পাওয়া গেছে। চিকিৎসাপত্রে নগরীর জামালখানের আল্ট্রা অ্যাসে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নাম রয়েছে।

ভুল চিকিৎসার শিকার বৃদ্ধ ওই মহিলার ছেলে বলেন, ‘আমার আম্মুকে ১১ সেপ্টেম্বর খোরশেদকে দেখিয়েছি। ওনার দেওয়া ওষুধ সেবন করার পর দেখি আম্মুর শারীরিক অবস্থা অবনতি হতে থাকে। এতে আমাদের সন্দেহ হয়। পরে একাধিক চিকিৎসককে বিষয়টি জানালে তারা খোরশেদকে ভুয়া চিকিৎসক হিসেবে শনাক্ত করেন। আমার মায়ের মতো যেন আর কেউ এভাবে ভুল চিকিৎসার শিকার না হয় প্রশাসনের কাছে এই আবেদন রইলো।’

সরেজমিন দেখা গেছে, চিকিৎসাপত্রে উল্লেখ করা নগরীর জামালখানের আল্ট্রা অ্যাসে ডায়াগনস্টিক সেন্টারে খোরশেদ নামে কোনো ডাক্তার বসেন না। ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের স্বত্বাধিকারী মো. শফিজুল হক শাহ বলেন, ‘খোরশেদ নামের কোনো ডাক্তারকে এখানে বসেন না।’

চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. মো.মহিউদ্দীন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অভিযোগ পেয়ে ভুয়া ডাক্তার খোরশেদকে হাতেনাতে ধরা হয়েছে। এর আগে ২০০৭ ও ২০১১ সালে একই অভিযোগে আটক হয়েছিলেন খোরশেদ। তার কোনো ডিগ্রি নাই, এমবিবিএসও পাস করেনি। তিনি কখনও বলছেন, এসএসসি পাস করেছেন, আবার বলছেন এইচএসসি পাস; আবার বলছেন, শুধু স্বাক্ষর করতে জানেন। তার বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’

আরএম/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!