হামজারবাগে চাঁদা না পেয়ে কিশোর গ্যাংয়ের হামলা, ৯৯৯-এর জোরে প্রাণে বাঁচলেন তরুণ

বিএনপির নেতার ‘গ্যাং’কে বাঁচাতে ছাত্রলীগ নেতার তদবির

চট্টগ্রামের হামজারবাগে চাঁদা না দেওয়ায় এক সিসিটিভি ব্যবসায়ীকে ডেকে নিয়ে গিয়ে মারধর করেছে কিশোর গ্যাংয়ের একদল সদস্য। পরে জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করার পর ইমন (১৯) নামের ওই তরুণকে পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে গেলেও দুদিনের মাথায় ইমনের বাড়িতে গিয়ে ফের হুমকি দিচ্ছে হামলাকারীরা।

সোমবার (৪ জানুয়ারি) হামজারবাগ রহমানিয়া স্কুলের পেছনে মজিদ শাহ মাজার গলিতে মুক্তিযোদ্ধা ফারুক সাহেবের বিল্ডিংয়ের সামনে রাত আটটার দিকে শাহরিয়ার ইমন (২০) নামে ওই ব্যবসায়ীকে ফোন করে ডেকে নিয়ে গিয়ে মারধর করে গুরুতর আহত করে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা।

হামলার শিকার ইমন এমইএস কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের কাজও করেন। আতুরার ডিপোতে নূর টাওয়ারে ফ্যাশন হাউস নামে একটা দোকানও রয়েছে তার। বেশ কিছুদিন ধরে কিশোর গ্যাং ‘লিডার’ রায়হান ও তার দলবল ইমনের কাছ থেকে চাঁদা দাবি করে আসছিল। চাঁদা না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ইমনকে ডেকে নিয়ে গিয়ে মারধর করে রায়হান ও তার গ্যাংয়ের সদস্যরা।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে ইমন বলেন, ‘৪ জানুয়ারি সন্ধ্যায় আমি আমার এক মামার বাসায় গিয়েছিলাম হামজারবাগে। এ সময় রিয়াদ আমাকে কল করে বলে আমার সঙ্গে একটা কাজ আছে। এটা শুনে আমি তাকে মুক্তিযোদ্ধা ফারুক সাহেবের বাসার ওখানে আসতে বলি। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা ১০-১৫ জন এসে আমাকে মারধর শুরু করে। একপর্যায়ে আমি দৌড়ে ফারুক সাহেবের বিল্ডিংয়ে উঠে ৯৯৯-এ কল দিই। পরে পুলিশ এসে আমাকে উদ্ধার করে। পুলিশই আমাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৌঁছে দেয়।’

এদিকে এরপরও এই হামলার জের ধরে ৬ জানুয়ারি ইমনের বাড়িতে স্থানীয় কয়েকজন গিয়ে আবার হুমকি ধামকি দিয়েছে জানিয়ে ইমন বলেন, ‘আজ সকালে এলাকার কয়েকজন আমাদের বাড়িতে এসে বলেন— এলাকায় আমাদের থাকতে হবে, ব্যবসা করতে হবে আমরা যেন মামলা না করি।’

জানা গেছে, পাঁচলাইশ থানা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আইয়ুব খানের অনুসারী হিসেবে পরিচিত রায়হান ও তার সহযোগী জিকু, বাপ্পী, রিয়াদের নেতৃত্বে হামজারবাগ এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই নানান অপকর্ম চালিয়ে আসছে কিশোর গ্যাংয়ের এই দলটি। রায়হানের নামে পাঁচলাইশ থানায় কালু কন্ট্রাক্টরের বাড়ি ভাংচুর ও চাঁদাবাজির মামলা আছে।

এদিকে বিএনপি নেতার অনুসারীদের দ্বারা পরিচালিত কিশোর গ্যাংকে মামলার হাত থেকে বাঁচাতে তদবির করার অভিযোগ উঠেছে নগর ছাত্রলীগের পদধারী এক নেতার বিরুদ্ধে। নগর ছাত্রলীগের কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক মিনহাজুল আবেদীন সানি আহত ইমনকে ফোন দিয়ে তিনি বিষয়টি মীমাংসা করে দেবেন জানিয়ে মামলা না করার জন্য তদবির করেন বলেও জানা গেছে। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মিনহাজুল আবেদীন সানি। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে এই বিষয়ে ‘কিছুই জানেন না’ বলে দাবি করেছেন সানি।

অন্যদিকে ঘটনাটিকে বন্ধুদের মধ্যকার ‘ভুল বোঝাবুঝি’ দাবি করে বিএনপি নেতা আইয়ুব খান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এরা সকলেই বন্ধু। ছোটবেলা থেকেই একসাথে চলাফেরা করে। আড্ডা দিতে গিয়ে নিজেরা নিজেরা ঝামেলা বাঁধিয়েছে। আমি ইমনকে দেখতে তার বাড়িতেও গিয়েছিলাম।’

তবে আড্ডা দিতে গিয়ে নিজেদের মধ্যে মারামারি করার বিষয়টি নাকচ করে দিয়ে ইমন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাকে তারা কল করে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল। আমার কল লিস্ট চেক করলেই এর প্রমাণ মিলবে।’

এই ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক মাসুম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। আপাতত এই বিষয়ে কোন কথা বলতে চাচ্ছি না।’

এআরটি/কেএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!