হানিফ পরিবহনে চট্টগ্রাম টু ঢাকা, ‘পথেই পায়েল হত্যা’ মামলার রায় আজ

বাস থামিয়ে প্রস্রাব করতে নেমেছিলেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পায়েল। ওঠার সময় দরজায় আঘাত লেগে আহত হন তিনি। কিন্তু এসময় দায় এড়াতে চিকিৎসা না করে পায়েলকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেয় বাস চালক, হেলপার ও সুপারভাইজার। প্রথমে আহত পায়েলের মুখ থেঁতলে দেয় তারা। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে মুন্সিগঞ্জের একটি ব্রীজের উপর থেকে খালে ফেলে দেওয়া হয় পায়েলকে।

দেশজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হওয়া এ ঘটনায় দায়ের হয় মামলা। ২০১৮ সালের ২২ জুলাইয়ের এ ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার রায় ঘোষণা হবে আজ (১ নভেম্বর)।

ঢাকা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক আবু জাফর মোহাম্মদ কামরুজ্জামান এ মামলার রায় ঘোষণা করবেন।

জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২১ জুলাই রাতে দুই বন্ধু আকিবুর রহমান আদর ও মহিউদ্দিন শান্তর সঙ্গে হানিফ পরিবহনের একটি বাসে করে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার পথে রওনা হওয়ার পর নিখোঁজ হন সাইদুর রহমান পায়েল। কিন্তু ২৩ জুলাই মুন্সিগঞ্জ উপজেলার ভাটেরচর সেতুর নিচের খাল থেকে তার লাশ উদ্ধার করে গজারিয়া থানা পুলিশ। অভিযোগ রয়েছে, হানিফ পরিবহনের গাড়ি চালক, হেলপার ও সুপারভাইজার তাকে নির্মমভাবে খুন করে লাশ নদীতে ফেলে দিয়েছিলো।

পায়েলের লাশ উদ্ধারের পরদিন ২৪ জুলাই তার মামা গোলাম সরওয়ার্দী বিপ্লব বাদী হয়ে হানিফ পরিবহনের চালক, সহকারী ও সুপারভাইজারকে আসামি করে মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এর পরপর হানিফ পরিবহনের ওই বাসের সুপারভাইজার জনিকে ঢাকার মতিঝিল এবং চালক জামাল হোসেন ও তার সহকারী ফয়সাল হোসেনকে আরামবাগ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

তাদের মধ্যে জামাল হোসেন ও ফয়সাল হোসেন দুই ভাই। পায়েলকে খুন করার আদ্যপান্ত জানিয়ে এদের দুই জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে।

পায়েলের বাবা গোলাম মাওলা বলেন, ‘ছেলেকে হারিয়ে গত দু বছর আদালতের দ্বারে দ্বারে কাটিয়েছি। দীর্ঘ আইনী লড়াইয়ের আমরা এখন শেষ পর্যায়ে। ১ নভেম্বর মামলার রায় দিবেন বিজ্ঞ বিচারক।’

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবু আব্দুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ‘চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যাল আদালতে চলা মামলাটির অনেক অগ্রগতি হয়েছিল। নয় জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণও সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু আসামি পক্ষের আবেদনে মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। পরে মামলাটি চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়।’

বাদীপক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার খান খালিদ আদনান বলেন, ‘আসামীরা বিচার বিলম্বিত করার চেষ্টা করেছিলে। কিন্তু আদালত তাদের কোন সুযোগ দেয়নি। ১ নভেম্বর এই আলোচিত মামলার রায় হবে।’

মামলার বাদী গোলাম সরওয়ার্দী বলেন, ‘গত বছরের ২১ জুলাই চট্টগ্রাম থেকে হানিফ পরিবহনের ভলবো বাসে করে ঢাকা রওনা করেন পায়েল। পরদিন ২২ জুলাই ভোরে সে রাস্তায় বাস থেকে প্রস্রাব করতে নামে। বাসে ওঠার সময় দরজার সাথে ধাক্কা লেগে আহত হয় পায়েল। দায় এড়াতে চালক, সহকারী ও সুপারভাইজার মিলে আহত পায়েলের মুখ থেঁতলে দিয়ে নদীতে ফেলে দেন। পায়েল হত্যা মামলায় গজারিয়া থানা পুলিশ বাসের সুপারভাইজার জনি, চালক জামাল হোসেন ও তার সহকারী ফয়সাল হোসেনকে আসামি করে গত ৩ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র দেয়।’

গোলাম সরওয়ার্দী আরও বলেন, ‘মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার বিচার কাজ শুরু হলে তা চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইবুন্যালে স্থানান্তর করার জন্য মুন্সীগঞ্জের জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করি আমরা। পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ ২০১৮ সালের ২৪ ডিসেম্বর এক প্রজ্ঞাপনে মামলাটি চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তরের নির্দেশ দেয়। জনস্বার্থে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল আইন ২০০২ এর ৬ ধারা অনুসারে আদেশটি দেওয়া হয়। যার পর থেকে চট্টগ্রামে মামলাটির কার্যক্রম শুরু হয়।’

তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালের ২ এপ্রিল থেকে মামলাটির কার্যক্রম চট্টগ্রামের আদালতে শুরু হলে বাদী সরওয়ার্দী বিপ্লব, পায়েলের দুই বন্ধু আকিবুর রহমান আদর ও মহিউদ্দিন শান্ত, পায়েলের মা কোহিনূর বেগম, মামা ফাহাদ চৌধুরী দিপু ও ভাগ্নিপতি আইয়ুব আলী, গজারিয়া থানার এসআই ও পায়েলের সুরতহালকারী সফর আলী পোস্টমর্টেমের জন্য লাশ নিয়ে যাওয়া পুলিশ সদস্য আসাদুজ্জামান, ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক গাজীপুর জেলা হাসপাতালের আরএমও ডা. সাখাওয়াত হোসেনসহ মোট নয়জন সাক্ষ্য দেন। কিন্তু মামলা চলাকালে গত ৯ জুন এ মামলার বিচার কার্যক্রমের ওপর ছয় মাসের স্থগিতাদেশ নেন আসামিরা। পাশাপাশি মামলাটি কেন ঢাকায় স্থানান্তরিত করা হবে না তা চার সপ্তাহের মধ্যে জানাতে আইন সচিব ও স্বরাষ্ট্র সচিবকে জানাতেও আদেশ দেন আদালত। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ শুরু হয় বিচার। ৪ অক্টোবর ছিলে যুক্তিতর্ক। এটির শুনানী শেষে আদালত আসামীদের জামিন বাতিল করে কারাগারে পাঠান। আর রায়ের তারিখ নির্ধারণ করেন ১ নভেম্বর।

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!