হঠাৎ ঢাকার ডাকে চট্টগ্রাম নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ, বিচার নাকি আলোচনা?

নাছির বলয়ের দাবি ‘বিচার’, নওফেল বলয় বলছে ‘আলোচনা’

দুই দশকেরও বেশি সময় পর ২০২২ সালের মার্চে ২০ সদস্যের আংশিক কমিটি পায় চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ। সংগঠনের প্রধান দুই পদ শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের কর্মীরা পাওয়ায় প্রথম দিকে ‘গোস্সা’ করেন সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলয়ের নেতারা।

এরপর কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশে মাসতিনেক একসঙ্গে কাজ করলেও আবারও দূরে সরে যায় নাছির বলয়ের নেতারা। সাংগঠনিক কাজ, থানাভিত্তিক উপ-কমিটিগুলোতে নাছিরপন্থী কর্মীদের উপেক্ষা ও পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে না পারাসহ নানা বিষয়ে কেন্দ্রের কাছে ‘বিচার’ দেন তারা। এবার সেই বিচার করতেই পুরো কমিটিকে ঢাকায় ডেকে পাঠিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।

তবে নওফেল বলয়ের নেতাদের দাবি বিচার না, সাংগঠনিক কথা বলতেই ঢাকায় ডাক পেয়েছেন তারা।

সোমবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু ও সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান আজিজকে ফোন করেন কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এই সময় তাদের আগামী ১ মার্চ কমিটির ২০ সদস্যকে নিয়ে ঢাকায় উপস্থিতির জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। ইতোমধ্যে কেন্দ্রের সেই নির্দেশ নগর কমিটির নিজস্ব হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে সদস্যকে জানানো হয়েছে।

বিষয়টি স্বীকার করেন নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক দেবাশীষ আচার্য্য বলেন, ‘আমাদের নগর কমিটির সকলকে ঢাকা যাওয়ার কথা বলা হয়েছে কেন্দ্র থেকে। তাই আমরা ১ মার্চ সবাই উপস্থিত থাকবো।’

কি কারণে হঠাৎ ঢাকায় যেতে হচ্ছে—এই বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু না জানালেও তিনি বলেন, ‘সংগঠনের সামগ্রিক বিষয়ে আলোচনার জন্যই এই ডাক।’

দেবাশীষের মতে, সাংগঠনিক বিষয়ে আলোচনা হলেও কমিটির অন্য নেতারা মনে করছেন, নাছির গ্রুপের নেতাদের দেওয়া অভিযোগের বিচার এবং কমিটি পূর্ণাঙ্গের বিষয়ে কথা বলতেই ঢাকা থেকে ডাক এসেছে নগরের নেতাদের।

এর আগে কেন্দ্রের নির্দেশে নগরীর থানা ও ওয়ার্ডগুলোতে কর্মী সংগ্রহে নামে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ। ধুমধাম করে নগরীর প্রায় সব থানাতেই কর্মী সংগ্রহের অনুষ্ঠান করে তারা। আর তখনই লাগে বিপত্তি। এই অনুষ্ঠানের আগে বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক আয়োজনে নাছির-নওফেল গ্রুপের নেতারা একাট্টা হয়ে এক ব্যানারে উপস্থিত থাকলেও কর্মী সংগ্রহের আনুষ্ঠানিকতার পর ফাটল দেখা দেয় দু’গ্রুপের।

বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নিজেদের অনুপস্থিতির বিষয়ে নাছির বলয়ের নেতারা জানান, সংগঠনের বিভিন্ন সিদ্ধান্তে স্বৈরশাসন ও একক আধিপত্য ধরে রাখার যে অপচেষ্টা, সে কারণেই নিজেদের দূরে রাখছে নেতারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা বলেন, ‘নগর কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক দু’জনই নওফেল ভাইয়ের অনুসারী। তাই ওনারা আমাদের কৌশলে দূরে রাখছেন, অপমান করছেন এবং বিভিন্ন থানা কমিটিগুলোতে যে উপ-কমিটি করা হচ্ছে সেখানেও আমাদের কর্মীদের বাদ দেওয়া হচ্ছে। তাই আমরা বাধ্য হয়েই এসব বিষয়গুলো কেন্দ্রে জানাই, কেন্দ্র আমাদের অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে সবাইকে ঢাকায় ডেকে পাঠিয়েছে। আশা করি, এবার একটা বিচার পাবো।’

তবে এসব বিষয়গুলো অস্বীকার করেন সভাপতি দেবাশীষ নাথ দেবু। তিনি বলেন, ‘আমরা কাউকেই দূরে সরাচ্ছি না। আমরা সকলকেই ডেকে অনুষ্ঠান করতে চাইছি। তবে তারা কেন, কি কারণে অনুষ্ঠানে আসেন না, সেটার ওনারাই বলতে পারবেন। ওনারা যদি নিজ থেকে না আসেন তাহলেতো আমাদের কিছুই করার নেই।’

দেবু আরও বলেন, ‘নগরীর যুবলীগ, ছাত্রলীগেও ওই বলয়ের নেতারা আলাদা থাকতে পছন্দ করেন। আপনি দেখেন, ওনারা যুব বা ছাত্রলীগেও আলাদা থেকে অনুষ্ঠান করে। এবার নতুন করে স্বেচ্ছাসেবক লীগে শুরু করেছে। তবে আমরা কাউকে বাদ দিয়ে কোনো কিছু করছি না।’

কর্মী সংগ্রহ করতে ও বিভিন্ন থানা কমিটির সম্ভাব্য সম্মেলন প্রস্তুতির উপ-কমিটিতে শ’ খানেক কর্মীর নাম ঘোষণা করেছে নগর স্বেচ্ছাসেবকলীগ। সেখানে দেখা গেছে, বেশিরভাগ নাম নওফেল বলয়ের কর্মীদের।

এছাড়া কমিটি ঘোষণার এক সপ্তাহের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার কথা থাকলেও বছর ঘুরতে চললেও কমিটি পূর্ণাঙ্গের কোনো লক্ষণ নেই। আর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণার আগে ওয়ার্ড, থানা কমিটি ঘোষণার সিদ্ধান্তে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে পড়েছেন পদপ্রত্যাশী নেতারা।

তবে নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের দুই প্রধান নেতার দাবি, ইতোমধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি জমা দিয়েছেন ওনারা। যে কোনো মুহুর্তে ঘোষণা হতে পারে কমিটি।

কবে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা হতে পারে, জানতে চাইলে সভাপতি দেবু বলেন, ‘এর আগের কমিটিতো ২০ বছর পূর্ণাঙ্গ না করে গেছে।’

তাহলে কি আগের মতোই কমিটি ঘোষণা করা হচ্ছে না—এমন প্রশ্নের উত্তরে দেবু বলেন, ‘না, কমিটিতো আমরা ঘোষণা করি না, কেন্দ্র করে। তবে আমরা ইতোমধ্যে একাধিকবার আলোচনা করেছি কেন্দ্রের সঙ্গে, যাতে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!