স্বামীর জমানো ৩০ হাজার টাকায় খুনি ভাড়া করে স্বামীকেই খুন, যেভাবে খুলল মামলার জট

পরকীয়া করতে গিয়ে স্বামীর হাতে ধরা পড়ে মারধরের শিকার হন যে নারী, সেই তিনিই প্রতিশোধ নিতে দিনমজুর স্বামীর জমানো টাকা থেকে ৩০ হাজার টাকায় ‘খুনি’ ভাড়া করে খুন করান নিজের স্বামীকে। এমনকি স্বামীকে জবাই করে হত্যার সময় ঘটনাস্থলেই ছিলেন তিনি। পরে আবার স্বামীকে খুনের অভিযোগে নিজেই বাদী হয়ে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থানায় মামলাও করেন।

যদিও শেষ রক্ষা হয়নি উম্মে ছালমা (৩০) নামে ওই নারীর। ঘটনার এক বছর পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) তদন্তে বের হয়ে আসে পুরো ঘটনা। এরপর গ্রেপ্তার হন উম্মে ছালমা। রোববার (২০ ডিসেম্বর) রাতে বগুড়া জেলার নন্দীগ্রাম থানার আচলতা এলাকা থেকে ওই নারীকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই। পিবিআই চট্টগ্রাম জেলার পুলিশ সুপার (এসপি) নাজমুল হাসান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে এই তথ্য জানান।

জানা গেছে, উম্মে ছালমা তার স্বামী রফিকুল ইসলামসহ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারি ইউনিয়নের বিএমএ গেট এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকতেন। ২০১৯ সালের ৪ ডিসেম্বর সকালে সীতাকুণ্ড-হাটহাজারী সড়কের পাশে একটি লাউ ক্ষেত থেকে রফিকুল ইসলামের জবাই করা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় তার স্ত্রী উম্মে ছালমা বাদী হয়ে সীতাকুণ্ড থানায় মামলা দায়ের করেন।

ক্লুলেস এই মামলায় তদন্তে কোন অগ্রগতি না থাকায় এটির তদন্তভার যায় পিবিআইয়ের কাছে।

পরে নিহত রফিকুলের কললিস্ট চেক করে তার প্রতিবেশী ভাড়াটিয়া সাকিবুল ইসলাম সাকিবকে (২০) সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। যেদিন সকালে রফিকুলের গলাকাটা লাশ উদ্ধার হয়, তার আগের দিন রাত ১২টার দিকে সাকিবের সাথে তিন দফায় ফোনালাপ হয় রফিকুলের। সেটিকে সূত্র ধরেই সাকিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পরই খুলতে শুরু করে এই মামলার জট।

জিজ্ঞাসাবাদে সাকিব জানান, উম্মে ছালমার সাথে পরকীয়া প্রেম ছিল সাকিবের। তাদের মধ্যে ছিল শারীরিক সম্পর্কও। বিষয়টি স্বামী জেনে গেলে ছালমাকে মারধর করেন তার স্বামী। এর প্রতিশোধ নিতেই স্বামীকে খুন করার জন্য এমরান (২৪) নামে আরেক প্রতিবেশীর সাথে ‘চুক্তি’ করেন ছালমা।

পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০১৯ সালের ৩ ডিসেম্বর রফিকুলকে ফোন করে ঘটনাস্থলে ডেকে নিয়ে যান সাকিব। সেখানে এমরান ও সাকিব মিলে তাকে জবাই করে হত্যা করেন। এর আগে স্বামীর পিছু পিছু বের হয়ে সেখানে আসেন ছালমাও। ঘটনার সময় পাশেই দাঁড়ানো ছিলেন তিনি। পরের দিন এমরানকে চুক্তি অনুযায়ী ৩০ হাজার টাকাও দেন ছালমা।

গৃহিনী ছালমা ৩০ হাজার টাকা কোত্থেকে দিল— চট্টগ্রাম প্রতিদিনের এমন প্রশ্নের জবাবে তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কামাল আব্বাস বলেন, ‘দিনমজুর স্বামীর জমানো টাকা ছিল ছালমার কাছে। সেই টাকা থেকেই তিনি এমরানকে ৩০ হাজার টাকা দেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন।’

এই ঘটনায় উম্মে ছালমার দায়ের করা মামলাটির ফাইনাল রিপোর্ট জমা দিয়ে পিবিআইয়ের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. কামাল আব্বাস নিজে বাদী হয়ে নতুন একটি হত্যামামলা দায়ের করেছেন।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!