সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ‘সীমিত’ তামিম ইকবাল

সীমিত ওভারের ক্রিকেট খেলায় (ওয়ান ডে আর টি-টোয়েন্টি) বছর দু’য়েক ধরে “অপর প্রান্তে তামিম খেলছিলেন দায়িত্ব নিয়ে…” বা “এক প্রান্ত আগলে রেখে অপর প্রান্তের ব্যাটসম্যানকে ফ্রি খেলার সুযোগ দেন…” অথবা, ” দলের প্রয়োজনে এ্যাংকরিং এর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নেন…” ইত্যাদি শিরোনাম বেশি ব্যবহৃত হয়ে আসছিল তামিম ইকবালের ক্ষেত্রে। ব্যাটিং ধরন বদলানোর কারণে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণে লাল সবুজের জার্সি গায়ে যে মারকুটে ওপেনারকে দেখা যেত সেই তামিমকে এখন অতশী কাচের নিচে খুঁজতে হয়! তিনি অবশ্য এতোদিন বলে আসছিলেন- টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তেই নাকি তিনি ধরে খেলছেন। কিন্তু বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং কোচ নেইল ম্যাকেঞ্জি শোনালেন অন্য কথা! বাংলাদেশের কোনো প্লেয়ারকেই নাকি এমন ভূমিকা দেওয়া হয়নি। তাহলে কি বলা যায় না এতদিন নিজের লাইসেন্স নিজেই দিয়েছিলেন চট্টলার এই সন্তান?

তাতে সমস্যা ছিল না যদি তা দলের জন্য সুখকর কিছু বয়ে আনত। বরং প্রকারান্তরে তার কচ্ছপ গতির ব্যাটিং দলের রানের লাগাম টেনে ধরছে। পাওয়ার প্লে’তে ব্যাটিংয়ে নেমে ধীরলয়ের ব্যাটিংয়ে ডট বল খেলে চাপে ফেলে দিচ্ছেন উইকেটের অপর প্রান্তের ব্যাটসম্যানকে। তাতে দলের ওপরেও তৈরি হচ্ছে বিস্তর চাপ। মিডল অর্ডারে কেউ খেললে সেই চাপ জয় সম্ভবপর হচ্ছে, নয়তো হচ্ছে না।

তার এমন ব্যাটিং নিয়ে সমালোচনা আগেই হতে পারত কিন্তু হয়নি। সেটা অন্য কোনো কারণে নয়, দেশের জন্য তার অবদানের কথা ভেবেই। কিন্তু বিশ্বকাপে তার নিস্প্রভ পারফরম্যান্সের পর অনেক সংবাদ মাধ্যমই বিষয়টি সামনে এনেছে।

কেননা গেল বিশ্বকাপে মাশরাফির পর বাংলাদেশের হাহাকারের আরেক নাম ছিলেন তামিম ইকবাল। ৮ ম্যাচে তার গড় ২৯ দশমিক ৩৭ ও স্ট্রাইকরেট ছিল মাত্র ৭১ দশমিক ৬৪। এরপরে শ্রীলঙ্কায় গিয়ে হয়েছেন আরো ব্যর্থ। ৩ ম্যাচে মোটে করেছেন ২১ রান। পারেনি চলতি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতেও। ১২তম ওয়ানডেতে এসেও নিজেকে শুধরে নিতে পারেননি তামিম। তাই দেশের সংবাদ মাধ্যমগুলো তার সমালোচনায় সরব হয়েছে।

সেই সূত্র ধরেই সোমবার (২ মার্চ) সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তামিমের ব্যাটিংয়ের ধরন নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল ব্যাটিং কোচ নেইল ম্যাকেঞ্জির কাছে। সেখানে এই প্রোটিয়া সাফ জানিয়ে দেন তামিমকে এভাবে খেলতে বলা হয়নি।

‘তামিম জানে তার কি করা দরকার। এটা করে দিলে (ভূমিকা ঠিক করা) উলটো ক্ষতির কারণ। আমাদের কথা হয়েছে। আমরা অনুভব করছি তার আরো দুটো বাউন্ডারি বেশি মারা উচিত। কোনো অ্যাপ্রোচ নিতে হবে সেটাও সেই বুঝবে। কেউ তামিমের হয়ে ব্যাট করবে না। তাকেই তার খেলাটা খেলতে হবে। এটা দ্রুত বা ধীর খেলারও ব্যাপার না। আমরা জানি একটা প্লাটফর্মের জন্য তাকে কত দরকার দলে। আগে সে এটা করেছেও। আমরা জানি সে কি করতে পারে। গত বছর বিপিএলের ফাইনালে আমরা তাকে বড় সেঞ্চুরি করতে দেখেছি।’

৫০ ওভারের ক্রিকেটে লাল সবুজের জার্সি গায়ে শেষ ১২টি ওয়ানডেতে তামিমের ব্যাট থেকে এসেছে মোট ২৮০ রান। রান গড় ২৩ দশমিক ৩৩। আর স্ট্রাইক রেট ৫৫ দশমিক ৫৫! সবশেষ সেঞ্চুরিটি এসেছিল ২০১৮ সালের জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। এরপর ১শ’র ওপরে স্ট্রাইক রেটে ব্যাটিং করেছিলেন আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। বিশ্বকাপ থেকে আজ অব্দি তার ফিফটি ১টি। পাওয়া প্লে’তে শতকরা ৪৮ ভাগ ইনিংসেই তিনি ডট বল খেলেছেন। এর চাইতেও পরিতাপের বিষয় হলো দেশ সেরা ওপেনার হওয়া সত্বেও সবশেষ ১২টি ওয়ানডেতে তার ব্যাটে কোনো ছক্কা দেখা যায়নি!

তাহলে কি আমরা ধরে নেব যে তামিম তার সেরা সময় ফেলে এসেছেন? সেটির সাথে একমত নন দলের ব্যাটিং কোচ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য সবাইকে বেনিফিট অব ডাউট দেয়ার পরামর্শ দেন ম্যাকেঞ্জি। তিনি বলেন, ‘কখনও কখনও একজন খেলোয়াড়কে বেনিফিট অব ডাউট দেয়া উচিৎ। আপনারা রেকর্ড দেখুন, বুঝতে পারবেন সে (তামিম) বাংলাদেশের জন্য কত ভালো একজন ব্যাটসম্যান। তাকে খেলতে দিন। আমরা একজন খেলোয়াড়ের ওপর বাড়তি চাপ দিলে…, আপনারা জানেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট বেশ কঠিন একটা মঞ্চ। এমন নয় যে, সে চেষ্টা করছে না, সে ফিট নয়। তার ফিটনেস এখন অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। তাই তামিমকে নিয়ে আমি তেমন ভাবছি না।’

তামিমকে নিয়ে ব্যাটিং কোচের মতো সমর্থক ও ক্রিকেটপ্রেমীদের নির্ভার রাখার জন্য তামিমের ব্যাটে ফিরতে হবে ব্যাটের ঝলকানি। তাতে লাভ কিন্তু বাংলাদেশেরও। সেটি যদি মঙ্গলবার (৩ মার্চ) জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হয় তাহলে সোনায় সোহাগা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!