সীতাকুন্ডে সোনালী ধান আউশের বাম্পার ফলন : মহাখুশি কৃষক পরিবার

শেখ সালাউদ্দীন,সীতাকুন্ড প্রতিনিধি ::
চট্টগ্রামের সীতাকুন্ড উপজেলায় এবার সোনালী ধান আউশের বাম্পার ফলন হয়েছে। ফলে উৎপাদন বৃদ্ধি হওয়ায় খেটে খাওয়া কৃষক পরিবারও মহাখুশি। এছাড়া মৌসুমে সোনালী ধান আউশের বিভিন্ন জাতের ধান কাটা ও মাড়ইয়ের উৎসবে মেতেছে উপজেলার ১৮ হাজার ৬শত ৫০ কৃষক পরিবার। পরিশ্রম এবং আন্তরীক ভাবে চাষ করায় লক্ষ্যমাত্রায় অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে বলে ধারণা উপজেলার কৃষক পরিবারের।

dhan-pic-1

সীতাকুন্ডের কৃষি অফিস ও বিভিন্ন অঞ্চলের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারাও আউশের বিভিন্ন প্রজাতীর ধান উৎপাদনে তারা বেশ মুগ্ধ হয়েছেন। সীতাকুন্ড ২নং বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের কলাবাড়িয়া এলাকার কৃষক মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, চলতি মৌসুমের আষাঢ় মাসের প্রথম দিকে এক একর জমিতে হাইব্রীড ও উচ্চ ফলনশীল হাইব্রীড আউশ ধানের চাষ করেছেন। প্রতি বছর তিনি মৌসুমে বিভিন্ন জাতের ধান চাষ করে আসছেন।

 

তিনি বলেন, এ এলাকার অনেকে এবছর ধানের চাষ বাদ দিয়ে জমিতে বিভিন্ন জাতের মৌসুমি সবজির চাষ করেছেন। তার কারণ সম্পর্কে কৃষকরা জানান, বর্তমানে ধানের দাম অনেক কম এবং সবজির দাম বেশি, তাই এখানকার কৃষক পরিবারগুলো সবজি চাষের উপর ক্রমশো ঝুঁকে পড়ছেন।

 

তিনি বলেন, ২৫০টাকায় পূর্বে শ্রমিক পাওয়া যেত, বর্তমানে ৪০০ টাকায়ও শ্রমিক পাওয়া যায়না। তবে ধানের দাম কম হলেও অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর আউশের বাম্পার ফলন হয়েছে। যা বিগত কয়েক বছরেও এমনটি হয়নি।

 

একই ইউনিয়নের পূর্ব লালানগর গ্রামের কৃষক মোঃ গোলাম নবী বলেন, এবছর তার এক একর জমিতে আউশের বিভিন্ন জাতের ধান চাষকরে ভাল ফলন ঘরে তুলেছেন। গত বছর ১২ কেজি ধান ১২০ টাকায় পাইকারীতে ধান বিক্রি করেছিলেন। তখন শ্রমিক সহ সবকিছুর দাম ছিল কম। তিনি বলেন, বর্তমানে শ্রমিকসহ সবকিছুর দাম বেড়ে যাওয়ায় ১২ কেজি ধান ১৮০ টাকা করে বিক্রি করলেও সে হারে কনো লাভ হচ্ছেনা আমাদের। এছাড়া আমি নিজেও ধানের চাষ কমিয়ে দিয়ে এবার সবজির চাষ করেছি বেশি। এতে করে ধানের চেয়ে সবজিতে লাভ হয়েছে বেশি। তবে চলতি মৌসুমে আউশের উৎপাদন হয়েছে গেলো বছর থেকে অনেক অনেকগুণ বেশি।

 

এ ব্লকে দায়ীত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা গোপাল চন্দ্রনাথ জানিয়েছেন তার এলাকায় মোট ১৩৫ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের চাষ করেছেন কৃষক পরিবার। তার মধ্যে ৬৫ হেক্টরে হাইব্রীড ও ৭০ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল ধানের চাষ করেছেন এখানকার কৃষক পরিবারগুলো। গত বছর এবং তার কয়েক বছর আগে আরো বেশি জমিতে ধানের চাষ করেছিলেন। কিন্তু কৃষক পরিবারগুলো ব্যাপক ভাবে এবছর বিভিন্ন রকম সবজি চাষ করছেন। সবজি চাষে তাদের লাভ বেশি হয়বলে তাই তারা আস্তে আস্তে সবজি চাষে ঝুঁকছেন। তবে এবার আউশের ফলন হয়েছে অন্যান্য বছরের থেকে বেশি।

 

সীতাকুন্ড পৌরসভা এলাকায় দায়ীত্বরত উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শাহ্ আলম বলেন পৌরভাস্থ এলাকার পন্থিছিলা,শেখপাড়া,নলুয়া পাড়া,মধ্যম মহাদেবপুর,ইকো পার্কসহ বিভিন্ন পৌরসভা এলাকায় আউশের চাষ হয়েছে। এসব এলাকাসহ দর্ক্ষীণ ইদিলপুর এলাকার কৃষক মোঃ আলাউদ্দিনের জমিতেও আউশ ধানের ফলন খুব ভাল হয়েছে।

 

এবিষয় সীতাকুন্ড উপ-সহকারী উদ্ভিদ সংরক্ষন কর্মকর্তা সুভাস চন্দ্র নাথ জানিয়েছেন, উপজেলার বেশির ভাগই কৃষি পরিবারগুলো কৃষির উপর নির্ভর করে আসছে অনেক যুগ ধরে। তাই ১নং সৈয়দপুর, মহানগর, ২নং বারৈয়াঢালা, শেখেরহাট, মুরাদপুর,উত্তর মাহমুদাবাদ,বাড়বকুন্ড,ভাটিয়ারী,কুমিরা,পৌরসভার এয়াকুব নগর, মোওলভীা পাড়াসহ এই সব অঞ্চলে সোনালী ধান আউশ উৎপাদন বেশি হয়েছে। তবে এবার আউশের বিভিন্ন প্রজাতির ধান উৎপাদনে কৃষকরা মুগ্ধও হয়েছেন।

dhan-pic-3

এই অঞ্চল গুলোতে  প্রায় সময় বর্ষার মৌসুমে জলবদ্ধতায় কৃষকদের ক্ষেতের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে থাকে। কিন্তু এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কোনো ধরনের সমস্যায় পড়তে হয়নি কৃষকদের। লোকসানও গুনতে হয়নি তাদের।

 

অন্যদিকে উপজেলার সরেজমিন ঘুরে একাধিক কৃষকদের সাথে কথা বলে জানাগেছে,অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর আউশের ফলন হয়েছে অনেক বেশি। যা বিগত কয়েক বছরেও এমন দেখা যায়নি। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আউশ উৎপাদন খুব ভাল হয়েছে। তাই কৃষকদের ঘরে ঘরে আনন্দ দেখা দিয়েছে। প্রতিবছর পাহাড়ী ঢলের পানিতে আউশের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। তবে চলতি মৌসুমে জলাবদ্ধতাও দেখা দেয়নি জমিতে। তাই কৃষক পরিবার খুব আনন্দে তাদের ক্ষেতের সোনালী ধান আউশ কাটা ও মাড়াই শুরু করেছেন।

 

এবিষয়ে উপজেলা কৃষি অফিসার সুশান্ত সাহা বলেন,চলতি মৌসুমে আউশ ধানের  বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানে কোন রকম রোগ বালাই দেখা যায়নি। চলতি বছরে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সোনালী ফসল আউশ ধানের উৎপাদন হয়েছে অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি।

 

এবছর ৬ হাজার হেক্টর জমিতে ১৮হাজার ৬শত ৫০ কৃষক পরিবার আউশের বিভিন্ন জাতের ধানের আবাদ করেছেন। এর মধ্যে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রীড চাষ হয়েছে ২৩শত হেক্টরে, উপশী ৩ হাজার ৬শত ৩০ ও স্থানীয় জাতের ৭০ হেক্টর জমিতে সোনালী ধান আউশের আবাদ হয়েছে। তিনি বলেন,১৭৭২৬ মেট্রিক টন চাল উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে আশা করা হচ্ছে।

 

রিপোর্ট : শেখ সালাউদ্দিন, সীতাকুন্ড প্রতিনিধি ::

এ এস / জি এম এম / আর এস পি :::

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!