সিডিএ/ পছন্দের লোককে প্লট ইজারা দিতে দরপত্র বিতরণে কারসাজি!

দরপত্র ফরম বিতরণ না করেই পছন্দের লোককে বাণিজ্যিক প্লট ইজারা দিতে চাইছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)—এমন অভিযোগ উঠেছে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে। দরপত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে একাধিক ব্যক্তি ও ব্যবসায়ী হয়রানির শিকার হচ্ছেন। নিজের পছন্দের ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে প্লট ভাগিয়ে দিতে সিডিএর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা দরপত্র ফরম বিতরণে কারসাজি করছেন বলে দরপত্রপ্রত্যাশীরা অভিযোগ করেছেন।

ব্যবসায়ীদের দাবি, দরপত্র বিতরণে কারসাজিতে সিডিএর সিনিয়র এস্টেট অফিসার চৌধুরী আবু হেনা মঞ্জু সরাসরি জড়িত। তারা অভিযোগ করেছেন, সিডিএর বোর্ড সদস্য কেবিএম শাহজাহান এবং জসিম উদ্দিন শাহ নিজেরাই প্লটটি ইজারা নিতে চান। ক্ষুব্ধ ব্যবসায়ীরা বলেন, দরপত্র বিতরণে কারসাজি বন্ধ না হলে সিডিএর সামনে মানববন্ধনসহ তারা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। সিডিএর দুই বোর্ড সদস্যই অভিযোগ অস্বীকার বলেছেন, দরপত্র আটকানোর ক্ষমতা বোর্ড সদস্যদের নেই।

জানা যায়, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন চউক ষোলশহর পুনর্বাসন এলাকার সি-ব্লকের ১১ নম্বর প্লট সংলগ্ন ১১ (এ) ১ দশমিক ৪০ কাঠা বাণিজ্যিক প্লট সর্বোচ্চ দরদাতার অনুকূলে ৯৯ বছরের জন্য বরাদ্দ বা ইজারা দেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি সংবাদপত্রে নিলাম বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে সিডিএ। এতে বলা হয়েছে, ‘আগ্রহী দরদাতা/প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত দরপত্র ফরম পূবালী ব্যাংক লিমিটেড চউক শাখা হতে ২৩ জুন থেকে সংগ্রহ করা যাবে।’

অভিযোগ উঠেছে, নির্ধারিত সময়ের দুই দিন পার হলেও এখনো ব্যাংকে দরপত্র ফরম সরবরাহ করেনি সিডিএ। আজ সোমবার (২৪ জুন) ও গতকাল রোববার অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ব্যাংকে গিয়ে দরপত্র পাননি। দরপত্র সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা অযথা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন দরপত্র ফরমপ্রত্যাশী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেখে আমরা দরপত্র সংগ্রহ করতে গেলাম। কিন্তু ব্যাংকে এখনও দরপত্র ফরম দেয়নি সিডিএ। রোববার ও সোমবার আমরা দরপত্র ফরম নিতে পারিনি। আমাদেরকে অযথা হয়রানি করা হচ্ছে।’

তিনি বলেন, নিজের পছন্দের ব্যক্তিকে প্লট ভাগিয়ে দিতে সিডিএর কর্মকর্তারা কারাসাজি করছেন। এ কারসাজি বন্ধ না হলে আমরা সিডিএর সামনে মানববন্ধনসহ আইনগত ব্যবস্থা নেবো।’

ফজলুল হক শিকদার নামে একজন দরপত্রপ্রত্যাশী বলেন, ‘গত রোববার থেকে দরপত্র ফরম পাওয়ার কথা। অথচ ব্যাংকে এখনও দরপত্র ফরম দেয়নি সিডিএ। অনিয়ম হচ্ছে। আগামীকাল পাওয়া যাবে বলছে তারা। আরেকবার দেখবো। দরপত্র ফরম না পেলে সবাইকে জানাবো।’

পূবালী ব্যাংক লিমিটেড চউক শাখার অফিসার জামাল আহমেদ বলেন, ‘আজ সোমবার পর্যন্ত কোন দরপত্র ফরম জমা দেয়নি সিডিএ। অনেক সময় সিডিএ এই ধরনের কাজ করে। শেষ সময়ে এসে ফরম জমা দেয়।’

ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্যমতে, ব্যাংকে দরপত্র দেওয়ার দায়িত্ব ছিল সিডিএর সিনিয়র এস্টেট অফিসার চৌধুরী আবু হেনা মঞ্জুর। কিন্তু তিনি ব্যাংকে দরপত্র ফরম দেননি। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, ব্যাংকে দরপত্র দিতে হবে বলে তিনি আজকে (২৪ জুন) অফিসেও আসেননি।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে আবু হেনা মঞ্জু বলেন, ‘আমি অফিসিয়াল কাজে ঢাকায় এসেছি। যথাযথ নিয়ম মেনে দরপত্র ফরম জমা দেওয়ার মতো যোগ্য লোক না থাকায় পূবালী ব্যাংকে দরপত্রগুলো জমা দেওয়া হয়নি।’

সিডিএর বোর্ড সদস্য কেবিএম শাহজাহান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বর্তমান চেয়ারম্যানের সময়ে এ ধরনের কোন সুযোগ নেই। বোর্ড মেম্বারদের হাতেও এরকম কোন সুযোগ নেই। দরপত্র আটকানোর ক্ষমতা বোর্ড মেম্বারদের নেই। আগামীকাল অফিসে গিয়ে আমি বিষয়টি দেখবো।’

অন্যদিকে সিডিএর অপর বোর্ড সদস্য জসিম উদ্দিন শাহ বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনো প্রমাণ আছে? আমি দরপত্র ফরম না দেওয়ার কে? বাধা দিয়ে প্লট নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এটা অফিসিয়াল ব্যাপার। আমাদের বিষয় নয়। এখানে বোর্ড মেম্বারদের কোন দায়িত্ব নেই।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি এখন ঢাকায় আছি। আগামীকাল মঙ্গলবার (২৫ জুন) অফিসে গিয়ে ব্যাপারটি আমি দেখবো।’

এমএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!