সাগরপাড়ে বেনামা শিপইয়ার্ড জাহাজ বানাচ্ছে বন্দরের জায়গায়

চট্টগ্রাম বন্দরের জায়গা দখল করে নামহীন শিপইয়ার্ডে বানানো হচ্ছে রীতিমতো জাহাজ। এটি নির্মাণ করতে যে ধরনের অবকাঠানো ও ছাড়পত্র নেওয়ার দরকার তা কোনোটিই নেই ওই প্রতিষ্ঠানের। এতে পরিবেশে বিরূপ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন উপকূলবাসী।

সোমবার (২ ডিসেম্বর) সকালে সরেজমিনে চট্টগ্রাম নগরের ইপিজেড থানাধীন আকমল সাগরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পতেঙ্গায় চলমান আউটার রিং রোড এলাকায় সাগরের ২০ ফিট দূরত্বে স্থায়ী গার্ডওয়াল ঘেঁষে প্রায় দেড় একর জায়গায় শিপইয়ার্ডে নির্মাণ হচ্ছে হারুন কোম্পানি নামের এক ব্যক্তির জাহাজ। চলতি বছর থেকে নির্মাণ শুরু হওয়া এ জাহাজ তৈরিতে কাজ করছেন ১০ থেকে ১২ জন শ্রমিক। নিরাপত্তা সরঞ্জাম ছাড়াই তারা ঝুঁকির মধ্যে কাজ করে যাচ্ছেন।

সূত্রে জানায়, জাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বিনিয়োগ বোর্ড ও সরকারের বেশ কয়েকটি অধিদফতর থেকে ছাড়পত্র নিতে হয়। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা যায়, নামহীন ওই শিপইয়ার্ডে এসব ছাড়াই সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও স্থানীয়দের ম্যানেজ করে জাহাজ বানানোর কাজ চলছে।

এ বিষয়ে মুঠোফোনে হারুন কোম্পানির কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়া হয়েছে আট মাস আগে। এছাড়া বন্দরের অনুমতিও আছে। সংশ্লিষ্ট সব অধিদপ্তর থেকে ছাড়পত্র নেওয়া হয়েছে।’

অনুমতিপত্র দেখতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আপনাকে কেন কাগজ দেখাব। আপনি মোবাইলে কাগজপত্র চাইছেন, এতে কি সরকারি দপ্তরের কাগজ দেখানো যায়?’

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক আজাদুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘ইপিজেড আকমল আলী বেড়িবাঁধ উপকূলে নদী তীরবর্তী এলাকায় কোনো শিপইয়ার্ডে অনুমতি নেই। কেউ যদি বলে অনুমতি আছে, তাহলে সেটা মিথ্যা তথ্য দিয়েছেন। আমি খোঁজখবর নিচ্ছি। ঘটনার সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে’।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ডেপুটি ম্যানেজার (এস্টেট) জিল্লুর রহমান বলেন, ‘ইপিজেড আকমল আলী নদী থেকে ১৫০ ফুট জায়গা বন্দরের। সেখানে নামবিহীন কোনো শিপইয়ার্ড করার অনুমতি নেই। আমি লোক পাঠাচ্ছি। শীঘ্রই ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে উচ্ছেদ করা হবে।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, জাহাজ নির্মাণেশিল্পে এক ধরনের বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়। তার ওপর রয়েছে অ্যাসবেসটস মিশ্রিত ধূলা— যা মানুষের শরীরে ঢুকে ফুসফুসে বড় ধরনের ক্ষতি করে। এছাড়া মারাত্মক বিষাক্ত বর্জ্য, বিষাক্ত রাসায়নিক টক্সিনের মতো নানা উপাদান নির্গত হয়ে বিভিন্ন রকমের প্রাণঘাতি রোগ সৃষ্টি হয়।

বিস্ফোরক আইন অমান্য করে এই ধরনের কর্মকাণ্ড চালানো দণ্ডনীয় অপরাধ উল্লেখ করে চট্টগ্রামের বিস্ফোরক অধিদফতরের পরিদর্শক তোফাজ্জল হোসেন শীঘ্রই অভিযান পরিচালনার কথা জানিয়েছেন।

এদিকে বাংলাদেশ জাহাজ পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরণ আইন (সংশোধিত) ২০১৮ এর ২৫ ধারায় বলা হয়, সরকারের অনুমতি ছাড়া কোন ইয়ার্ড নির্মাণ করা দন্ডনীয় অপরাধ। এতে অনধিক ২ বছর কারাদণ্ড বা ন্যূনতম ১০ থেকে ৩০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে। অথবা উভয়দন্ডে দণ্ডিত হতে পারে।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২৫ জুন পতেঙ্গা বিজয়নগর এলাকায় নামবিহীন অবৈধ শিপব্রেকিং ইয়ার্ড জাহাজ কাটা বিষয়ে দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরদিন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ম্যাজিস্ট্রেট গিয়ে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেন। ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর সি-বিচ এলাকায় জাহাজ কাটার দায়ে দুলাল মিয়া নামে এক ব্যবসায়ীর অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ ও জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর।

মুআ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!