সম্ভবনার নতুন দিগন্ত বাংলাদেশের প্রথম প্রবাল চাষ সেন্ট মার্টিনে!

এস এম আরোজ ফারুক, সেন্ট মার্টিন থেকে ফিরে ॥

দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন রক্ষার্থে সেখানে চাষ করা হবে প্রবালের। সেন্ট মার্টিন সাগরে প্রবাল চাষের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো এই চাষ শুরু হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের পার্শবর্তী ভারত ও থাইলেন্ডে কৃত্রিম উপায়ে তারা সাগরের তলদেশে প্রবাল চাষ শুরু করেছে।

coral-pic-2

সাগর উপকূলীয় দ্বীপ রক্ষা, নানা প্রজাতীর মাৎস্যজাত প্রাণী সংরক্ষণ, জলোচ্ছ্বাস থেকে উপকূল রক্ষাসহ বিভিন্ন কারণে ভারত ১৯৯৮ সালে কৃত্রিম প্রবাল চাষ শুরু করে। অল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিনে কৃত্রিম প্রবাল চাষ প্রযুক্তি চালু হতে যাচ্ছে বলে জানা গেছে।
সেন্ট মার্টিন দ্বীপ সাগরে প্রবাল চাষ শুরু হলে এটি হবে দেশের প্রথম প্রাবাল চাষ। এর ফলে, দ্বীপটির সাগর উপকূল থেকে বিলুপ্ত প্রায় বিভিন্ন প্রজাতীর মাছ, জলজ প্রাণী প্রজননে সহায়ক হবে, সাগরের তলদেশ পরিষ্কার থাকবে, দ্বীপের ভারসম্য রক্ষা, ঢেউয়ের মাত্রা কমে দ্বীপ ভাঙ্গন হতে রক্ষা পাবে, জলোচ্ছ্বাসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষয় ক্ষতির মাত্রও কমে আসবে বলে ধারনা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সেন্ট মার্টিন দ্বীপ রক্ষার জন্য বিভিন্ন প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ‘‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ইকো-ট্যুরিজম ও জীব বৈচিত্র রক্ষা প্রকল্প’’ নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এই প্রকল্পের অধিনেই আগামী বছরে অর্থাৎ ২০১৭ সালের শেষের দিকে সেন্ট মার্টিনের সাগরে প্রবাল চাষ শুরু হবে। সূত্রমতে, আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রকল্পটি দ্বীপে কাজ শুরু করবে।

 

প্রকল্পে বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে থাকবে, দ্বীপ রক্ষায় অতি প্রয়োজনীয় কেয়াবন সংরক্ষণ, দ্বীপের জনগোষ্ঠিদের সম্পৃক্ততায় বনায়ন, স্থানীয় যারা জীবিকার তাগিদে পরিবেশ বিধ্বংসি কাজে লিপ্ত তাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, অপরিকল্পিত ট্যুরিজমকে ইকো-ট্যুরিজম সিস্টেমে আনা, দ্বীপের চতুর্দিকে অন্তত চার থেকে পাঁচটি বয় স্থাপন করা, জীব বৈচিত্র রক্ষায় কাজ করা।

 
১৯৯৫ সালের বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী সেন্টমার্টিন দ্বীপ সরকার ঘোষিত একটি প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা। দ্বীপের প্রবেশমুখেই বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদফতর পর্যটকদের কী করা উচিত হবে না তা লিখে রেখেছে বিলবোর্ডে।

 

যেমন প্রবাল, শৈবাল, শামুক, ঝিনুক ইত্যাদি সংগ্রহ করা থেকে বিরত থাকা, প্লাস্টিক-পলিথিন যত্রতত্র ফেলা থেকে বিরত থাকা, রাতে সৈকত এলাকায় আলো বা আগুন জ্বালানো থেকে বিরত থাকা, দ্বীপে মাইক বা উচ্চশব্দে গান-বাজনা না করা, স্থানীয় জনতার ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধে আঘাত দেয় এমন কাজ না করা, দ্বীপে যেহেতু মিঠা পানির উৎস সীমিত, তাই পানি ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়াসহ আরও অনেক কিছু।

coral-pic-1

কিন্তু বাস্তবে কী তা হচ্ছে ? আর এসব কারণে দিন দিন ভারসম্য হারিয়ে ঝুঁকির সম্মুক্ষিণ হচ্ছে দ্বীপটি। এর জন্য স্থানীয়রা যেমন দায়ি তেমনি কিছু পর্যটকরাও দায়ি। কিছু স্থানীয়রা জীবিকার তাগিদে ঝিনুক, শামুক কুড়িয়ে, সাগর থেকে প্রবাল উত্তলন করে, কেয়াফল কেটে তা পর্যটকদের কাছে বিক্রি করছে আর কিছু অসচেতন পর্যটকরা তা কিনে নিয়ে গিয়ে শো-কেইস’এ সাজিয়ে রাখছে। এসবের কারনে দ্বীপটি দিন দিন বিলীন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ছে।

 
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সরদার শরিফুল ইসলাম বলেন, গত সাত বছর ধরে ‘‘সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ইকো-ট্যুরিজম ও জীব বৈচিত্র রক্ষা প্রকল্প’’ নামের প্রকল্পটির কার্যক্রম বন্ধ ছিল। সম্প্রতি আমরা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে প্রকল্পটির ২য় পর্বে কিছু কর্মকান্ড হাতে নিয়েছি। যার মধ্যে সেন্ট মার্টিন দ্বীপের ভারসম্য রক্ষায় কিছু কাজ থাকবে। বিশেষ করে কেয়াবন সংরক্ষণ, নতুন করে বনায়নসহ বিভিন্ন দিকে গুরুত্ব দিচ্ছি।

 

তবে আগামী বছরের শেষের দিকে দ্বীপ রক্ষায় অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রবাল চাষ শুরু করতে যাচ্ছি। তিনি বলেন, সেন্ট মার্টিন সাগর উপকূলের আসেপাশে প্রায় ১০ প্রজাতীর প্রবাল পাওয়া যায় যা দিন দিন বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে আমরা এই প্রজাতীগুলো পুনরায় চাষ করবো।

 
পরিবেশবাদী ও জেলার সচেতন মহলের মতে দেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্ট মার্টিন রক্ষার্থে এখনই সরকারকে উদ্যোগী হওয়া উচিৎ এতে করে যা যা পদক্ষেপ নেয়া দরকার তাই করা হোক। এবং প্রবাল চাষ এর মধ্য দিয়ে দ্বীপ রক্ষায় সম্ভবনার এক নতুন দিগন্তের সূচনা হবে বলেও তারা মনে করেন।

 

এ এস / জি এম এম / রাজীব প্রিন্স :

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!