সওজের রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণে ভূমি জটিলতা, আপত্তিতে কাজ বন্ধ

রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাপছড়ি এলাকায় সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল (ধারক দেয়াল) নির্মাণে ভূমি জটিলতা দেখা দিয়েছে। এ জটিলতার প্রেক্ষিতে ভূমির মালিক নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর কাজ বন্ধ রেখেছে সওজ।

সওজ এবং স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে রাঙামাটিতে ভয়াবহ পাহাড়ধসের পর ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক টেকসইকরণে ২০২০ সালে সড়কের পাশে রিইনফোর্সড সিমেন্ট কংক্রিট (আরসিসি) রিটেইনিং ওয়াল (ধারক দেয়াল) তৈরির একটি মেগাপ্রকল্প হাতে নেয় সওজ। ২৪৯ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পটিতে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম, রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি-বান্দরবান ও নানিয়ারচর-বগাছড়ি সড়কের ১৫১ স্থানে আরসিসি রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণকাজ শুরু হয়।

এরমধ্যে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ৪৯টি স্থানে রিটেইনিং ওয়ালের কার্যাদেশ পায় ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার্স (এনডিই)। এ সড়কের সাপছড়ি এলাকায় আরফান আলী নামে এক ব্যবসায়ীর নামে ভূমিতে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণকাজ শুরু করায় আপত্তি জানান আরফান আলী। ব্যবসায়ী আরফান রাঙামাটি জেলা কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্য।

সওজের নির্মাণকাজ বন্ধের জন্য গত ৫ জানুয়ারি সওজ রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবরে লিখিত চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেই চিঠির অনুলিপি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব, সওজের প্রধান প্রকৌশলী, রাঙামাটি সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও রাঙামাটির জেলা প্রশাসককেও দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, আপনার প্রতিষ্ঠান (সওজ) কর্তৃক আমার নামীয় জায়গার ওপর রিটেইনিং ওয়ালের নির্মাণকাজ করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় আমার নিজস্ব জায়গার ওপর ওয়াল নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

তবে ভূমি নিয়ে জটিলতা দেখা দেওয়ায় ও লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পর কাজ বন্ধ রাখার কথা জানান সওজ রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী।

সওজ রাঙামাটি কার্যালয় সূত্র জানা গেছে, রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কের প্রশস্ত ২৪ ফুট। আর সড়কের পাশে বিরোধপূর্ণ ভূমিতে নির্মাণাধীন রিটেইনিং ওয়ালের দৈর্ঘ্য ৭ মিটার এবং প্রস্থ ৩০ মিটার। তবে এই স্থানে রিটেইনিং ওয়াল তৈরি করায় ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গায় পড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে পরিমাপ ছাড়া নির্দিষ্টভাবে বলা যাচ্ছে না।

ভূমির মালিক মো. আরফান আলীর অভিযোগ, মহাসড়কের মাঝখান থেকে ৯০ ফুট ভেতরের তার নামীয় সাপছড়ি মৌজার ভূমি বেদখল করে ১৩৬ ফুট প্রস্থ রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ করছে সওজ। কিন্তু নির্মাণকাজ শুরুর পর তাকে কিংবা স্থানীয় মৌজা হেডম্যানকেও কোনো অবগত করা হয়নি। পরবর্তীতে লিখিত অভিযোগ দিয়ে কাজ বন্ধের অনুরোধ জানান তিনি।

আরফান বলেন, ‘আমি ভূমি বেদখলমুক্ত চাই, আর যদি সরকারি কাজে ভূমির প্রয়োজন হয়ে থাকে তাহলে আইনগতভাবে তারা বিষয়টি সমাধানে এগিয়ে আসুক। আর যে ভূমি বেদখল করে রিটেইনিং ওয়াল করা হচ্ছে, সেই ভূমি যে আমি ব্যবহার করতে পারব; তারও কোনো নিশ্চয়তা নেই। জোরপূর্বক অন্যের নামীয় জায়গাতো বেদখল করা যাবে না।’

এদিকে ধারক দেওয়াল নির্মাণ কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনডিই’র প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মমতাজের মুঠোফোনে কল দিলেও নম্বরটিতে সংযোগ পাওয়া যায়নি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহমুদ আল নূর সালেহীন বলেন, ‘আরফান আলীর আবেদনের ভিত্তিতে আপাতত রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে বলেছি। তার ভূমিতে রিটেইনিং ওয়ালের কতটুকু অংশ পড়েছে কিংবা পড়েছে কি-না সেটি পরিমাপ ছাড়া বলা যাচ্ছে না। ওই জায়গায় রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণ হলেও কোনো সমস্যা হওয়ার কথা না। তিনি সেই জায়গা নিজের মতো করেও ব্যবহার করতে পারবেন। আমরা বিষয়টি আন্তরিকভাবেই সমাধানের চেষ্টা করছি।’

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!