৩১ বছর পর দুজনের সাক্ষ্য শেখ হাসিনার সমাবেশে গণহত্যা মামলায়

৩২ বছরের মাথায় এসে আদালতে আরো দুইজন সাক্ষ্য দিলেন ২৪ জানুয়ারি ১৯৮৮ সালের গণহত্যা মামলায়। বুধবার (২০ নভেম্বর) চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ আদালত মুন্সি আবদুল মজিদের আদালতে সাক্ষ্যদাতা দুজন হলেন প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট শৈবাল দাশ ও সাংবাদিক কামরুল ইসলাম। এ নিয়ে ওই মামলায় ৫২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন বলে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান আদালতের বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট মিজবাহ উদ্দিন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, অ্যাডভোকেট শৈবাল দাশ আদালতে তার সাক্ষ্য দিতে গিয়ে বলেন, ‘ঘটনার দিন চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবীদের সাথে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার মতবিনিময় সভা ছিল আইনজীবী মিলনায়তনে। আমরা তাকে আমাদের অনুষ্ঠানে নিয়ে আসার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ভবনের সামনে অবস্থান করছিলাম। নেত্রীর গাড়ি নিউমার্কেট মোড় অতিক্রম করে জিপিওর সামনে পৌঁছানো মাত্রই নেত্রীর গাড়ি বহর লক্ষ্য করে কোতোয়ালী মোড়ের দিকে থেকে পুলিশ নির্বিচারে গুলি বর্ষণ করেছিল। এতে আওয়ামী লীগের ২৪ নেতাকর্মী মৃত্যুবরণ করেছিলেন, অসংখ্য মানুষ আহত হয়েছিলেন। আমরা আইনজীবীরা মানবঢাল তৈরি করে নেত্রীকে আদালত প্রাঙ্গণে নিয়ে এসেছিলাম।’

সাংবাদিক কামরুল ইসলাম আদালতে বলেন, ‘তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রীর সমাবেশ কভারের দায়িত্ব ছিল আমার উপর। আমি তখন দৈনিক খবরের প্রতিবেদক ছিলাম। চোখের সামনে পুলিশের গুলিতে আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতা-কর্মীকে হতাহত হতে দেখলাম। তাৎক্ষণিকভাবে ২৪জন নিহত হয়েছে বলে নিশ্চিত হয়েছিলাম আমরা। এই খবরের ফলোআপ প্রতিবেদন করার জন্য পরেরদিন যখন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই তখন পুলিশ আমাকেসহ আমাদের গণমাধ্যমে কর্মরত কোন সাংবাদিককে হাসপাতালে প্রবেশ করতে দেয়নি।’

প্রসঙ্গত, ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি নগরের লালদিঘী ময়দানে সমাবেশ নির্ধারণ ছিল চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের। সমাবেশের মূল আকর্ষণ ছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিমানবন্দর থেকে কয়েকটি পথসভায় বক্তব্য দিয়ে মূল সমাবেশে আসতে বেশ কষ্ট হয়েছিল। জনস্রোতের মাঝ দিয়ে তাকে বহনকারী গাড়ির গতিও ছিল শ্লথ।

আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর গাড়িবহর তখন নিউমার্কেট মোড় অতিক্রম করে জিপিওর সামনে আসলো। আচমকা গর্জে উঠলো চট্টগ্রাম নগর পুলিশের রাইফেল। এলোপাথাড়ি গুলিতে একে একে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো মো. হাসান মুরাদ, মহিউদ্দিন শামীম, এথলেবার্ট গোমেজ কিশোর, স্বপন কুমার বিশ্বাস, স্বপন চৌধুরী, পঙ্কজ বৈদ্য, বাহার উদ্দিন, চান্দ মিয়া, অজিত সরকার, রমেশ বৈদ্য, বদরুল আলম, ডি কে চৌধুরী, পলাশ দত্ত, আব্দুল কুদ্দুস, গোবিন্দ দাশ, শাহাদাত, সাজ্জাদ হোসেন, আব্দুল মান্নান, সবুজ হোসেন, কামাল হোসেন, বি কে দাশ, সমর দত্ত, হাসেম মিয়া ও মো. কাসেম।

৬ ডিসেম্বর ১৯৯০ স্বৈরাচার এরশাদের পতনের পর ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ আইনজীবী মো. শহীদুল হুদা বাদি হয়ে এ মামলা দায়ের করেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর মামলাটি পুনরায় প্রাণ ফিরে পায়। আদালতের আদেশে মামলাটি তদন্তের ভার পড়ে সিআইডির উপর। সিআইডি ১৯৯৭ সালের ১২ জানুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে আদালতে। আবারো আদালতের নির্দেশে অধিকতর তদন্ত শেষে ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর পুলিশের ৮ সদস্যকে আসামি করে দ্বিতীয় দফায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়।
মামলার আসামিরা হলেন চট্টগ্রামের তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদা, ইন্সপেক্টর জে সি মণ্ডল, কনস্টেবল মুশফিকুর রহমান, বশির উদ্দিন, আব্দুস সালাম, প্রদীপ বড়ুয়া, মমতাজ উদ্দিন ও মো. আবদুল্লাহ। জে সি মণ্ডল ছিলেন কোতোয়ালী অঞ্চলের পেট্রোল ইন্সপেক্টর। ঘটনার পর থেকেই তার কোন হদিস নেই। ২০০০ সালের ৯ মে এই আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়।
জানা গেছে এই মামলার বাদি আইনজীবী মো. শহীদুল হুদা, প্রধান আসামী তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদা, তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি আব্দুল কাদের এবং মামলার এক আসামি পুলিশ কনস্টেবল বশির উদ্দিন ইতোমধ্যে মৃত্যুবরণ করেছেন। রকিবুল হুদা দেশের বাইরে মারা যাওয়ায় আদালতে উনার ডেথ সার্টিফিকেট জমা দেয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা তৈরি হয়েছে।
আদালত এই মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন ১২ জানুয়ারি ২০২০।

এফএম/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!