রুমঘাটার শিশু ধর্ষক শ্যালককে বাঁচাতে দুলাভাইয়ের চাপ

জোরাজুরির ‘আপস’ মানেননি আদালত

শিশু ধর্ষণ চেষ্টায় মামলা দায়েরের পর নাটকীয়ভাবে আপসের আবেদন জমা পড়লো চট্টগ্রাম আদালতে। তবে বুধবার (৫ ফেব্রুয়ারি) ওই আপসনামার দরখাস্তটি নামঞ্জুর করেছেন আদালত। আসামিপক্ষের টানা হুমকির জেরে বাদি এমন আবেদন করতে বাধ্য হয়েছেন বলে জানা গেছে।

কোতোয়ালী থানায় দায়েরকৃত ওই মামলার অভিযোগে উল্লেখ আছে, ৩০ জানুয়ারি দুপুরে শিশুটির মা তার মেয়েকে বাসায় রেখে গোসল করতে বাথরুমে ঢোকেন। এ সময় গোসল শেষে শিশুটিকে কান্না করতে দেখলে কারণ কী জানতে চান। ওই সময় শিশুটি জানায়, অভিযুক্ত জুয়েলের খারাপ স্পর্শে তার গোপনাঙ্গে ব্যাথা হচ্ছে। পরে শিশুকে চমেক হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করানো হয়। পরে জুয়েলকে আসামি করে থানায় মামলা করলে পুলিশ প্রাথমিক তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে তাকে ৩১ জানুয়ারি গ্রেপ্তার করে।

অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের পর থেকে আসামিপক্ষ কৌশলে হুমকি-ধমকি দিতে থাকে বাদিকে। বাদি আপস করতে অস্বীকার করলে মা-মেয়েকে হত্যার হুমকি দিয়ে জোর করে বাদিকে দিয়ে আদালতে আপসের দরখাস্ত দাখিল করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

ভয়ভীতি দেখিয়ে সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বাদিপক্ষের আপসের শর্তে আসামির জামিনের আবেদন করা হলে ওই আবেদন প্রত্যাহার করে আসামিকে মামলার বিচার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জেল হাজতে রাখার আদেশ দেন চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত।

এই বিষয়ে বাদির আইনজীবীর সাথে কথা বললে অ্যাডভোকেট খালেদ মাহমুদ রায়হান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বাদিকে জোর করে আদালতে আনা হয়েছিল আপসনামা করতে। বাদিকে বলা হয়েছিল তার মেয়ে ও স্ত্রীকে মেরে ফেলা হবে যদি আপসনামা দাখিল না করে। তারা যে আইনজীবীকে আপসনামা দাখিলের জন্য নিয়োগ দেন বাদি তাকে চিনেও না। জোরপূর্বক এনে আদালতে দাঁড় করানো হয়েছিল। কিন্তু কোর্ট বলছে নারী ও শিশু দমন ধারা আপসযোগ্য নয়। এ কারণে এই আপসনামা মঞ্জুর হয়নি।’

তিনি আরো বলেন, ‘৩ বছর ৫ মাসের বাচ্চার সাথে যেটা করা হয়েছে তাকে বিনা বিচারে যেতে দেওয়া হবে না। যার জন্য সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বাদিপক্ষের আপসের শর্তে অভিযুক্তর জামিনের আবেদন করা হয়েছিল। আজ সেটা প্রত্যাহারের জন্য আবেদন দিয়েছিলাম। এডিশনাল চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত প্রত্যাহার আবেদন মঞ্জুর করেন। এখন চার্জশিট আসলে চেষ্টা করব আসামির যাতে সর্বোচ্চ শাস্তির হয়।’

বাদি মো. আবদুল গফুরের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘আসামি জুয়েলের বোন জামাই আমাদের বিভিন্ন ধরনের হুমকি দিচ্ছে। মামলা আপস করতে বাধ্য করতে চাইছে। আমরা ভয়ে মামলার আপসনামা করি। নাহলে বউ-বাচ্চা নিয়ে ভয়ে ভয়ে দিন কাটাতে হত।’

ডিআইজির গাড়িচালক ওয়াসিম অভিযুক্ত জুয়েলের বোনের স্বামী। তিনি বলেন, আমি কাউকে হুমকি দিয়ে আপসের কথা বলিনি। আমাকে ফাঁসানোর জন্য এসব অপবাদ দিচ্ছে বাদিপক্ষ। যদি জুয়েল অপরাধী হয়ে থাকে তাহলে আইন অনুযায়ী তার শাস্তি হোক।

কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীনের সাথে এ বিষয়ে কথা বললে তিনি জানান, এ মামলাটা আপসযোগ্য ধারা নয়। আমরা আসামির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট জমা দেবো।

উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দুপুরে এই ঘটনার পর রাতে অভিযোগ পেয়ে শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম নগরীর কোতোয়ালী থানার রুমঘাটায় সাড়ে তিন বছর বয়সী এক মেয়ে শিশুকে যৌন নিপীড়নের দায়ে জুয়েল (২৭) নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছেও শিশুটিকে নিপীড়নের কথা স্বীকারও করেছে জুয়েল।

গ্রেপ্তারকৃত মোসাব্বির হোসেন প্রকাশ জুয়েল নগরীর কোতোয়ালী রুমঘাটার আফসার উদ্দিনের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। তার গ্রামের বাড়ি হবিগঞ্জের মাধবপুরে।

আরএ/এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!