লকডাউনে গিয়ে ফেসবুকে করোনা রোগীর পরিচয় জানাচ্ছে পুলিশই

গণমাধ্যম বা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনুমতি ছাড়া করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর পরিচয় প্রকাশ না করার বিষয়ে বিশ্বের সব দেশেই আনুষ্ঠানিক নিষেধাজ্ঞা আছে। এজন্য শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়ে থাকে প্রায় সব দেশেই। বাংলাদেশেও স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা এ নিয়ে কঠোর নীতি মেনে থাকেন। এর বাইরে প্রায়ই অনুমতি ছাড়া রোগীর নাম-ঠিকানা ছাড়াও ফেসবুকে বাড়ির ছবি-ভিডিও প্রকাশ করে রোগীর ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ভাঙার ঘটনা ঘটছে। প্রায় ক্ষেত্রে এর মাধ্যমে রোগীর স্বজনরাও সামাজিকভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন।

চট্টগ্রামে করোনা পরীক্ষার প্রধান ল্যাব ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি থেকে করোনা শনাক্ত হওয়ার ব্যক্তির এলাকা ও বয়স জানানো হলেও রোগীর নাম, পূর্ণ ঠিকানা বা অন্য ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ করা হয় না। চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন অফিস থেকেও এ পর্যন্ত রোগীদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশে কঠোর নীতি অবলম্বন করা হয়ে আসছে।

অথচ চট্টগ্রামে পুলিশ বিভিন্ন রোগীর বাড়ি লকডাউন করতে গিয়ে অনুমতি ছাড়াই রোগীর নাম ও পূর্ণ ঠিকানা তো বটেই, এমনকি ফেসবুকে বাড়ির ছবি ও ভিডিও প্রকাশ করে যাচ্ছে নিয়মিত। এতে ওইসব রোগীর পরিবার সামাজিকভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে প্রায়ই। সর্বশেষ এমন ঘটনা ঘটেছে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ এলাকায়।

মঙ্গলবার বায়েজিদে করোনাভাইরাসে শনাক্ত হন এক নারী। তার বাড়ি লকডাউন করতে গিয়ে বুধবার (২৯ এপ্রিল) রাত ১২টা ৩৫ মিনিটে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বায়েজিদ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওই নারীর নামসহ বিস্তারিত পরিচয় এবং বাড়ির ছবি ও ভিডিও পোস্ট করেন। সেখানে তিনি লিখেছেন—

‘অদ্য মহামারী করোনা আক্রান্ত রেজিয়া বেগম(৫০) কে অফিসার ইনচার্জ জনাব প্রিটন সরকার স্যারের নির্দেশনা ও সার্বিক তত্ত্বাবধানে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে আমি এস আই/নাসিম সংগীয় এস আই/জাহাংগীর, এএসআই/অমিত, এএসআই/শরীফুল ও সংগীয় ফোর্স এ্যাম্বুলেন্স করে প্রেরন করিলাম। উধ্বর্তন কতৃপর্ক্ষের নিদর্শে পূর্বাচল হাউজিং এর জিয়া প্যালেস এবং আশ পাশের এলাকা লক ডাউন করলাম।
আল্লাহ তুমি পূর্বাচল হাউজিং জিয়া প্যালেসে করোনা আক্রান্ত রোগী রেজিয়া বেগম”কে সুস্থ করে তার পরিবার-পরিজন এর মাঝে ফিরিয়ে দাও।আমিন।’

এমন ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব হয়েছেন অনেকেই। তারা বলছেন, এসব ক্ষেত্রে গোপনীয়তা রক্ষা করেই সবকিছু করা উচিত। নইলে নিরপরাধ মানুষও সামাজিকভাবে হেনস্তার শিকার হবেন।

কিছুদিন আগেও সরকারের জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) পরীক্ষা করার জন্য যাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে বা হবে তাদের নাম-ঠিকানা এবং ছবি প্রকাশ না করার আহ্বান জানিয়েছিল। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা ওই সময় বলেন, গোপনীয়তা রক্ষা করতে না পারলে যাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে তারা সামাজিকভাবে হেনস্তার শিকার হতে পারেন। প্রচার-প্রচারণার কারণে কেউ যেন সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন না হয়।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!