রেলে ৮০ লাখ টাকার দরপত্রে গুরুতর অনিয়ম

অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে রেলওয়ে ৫টি দরপত্রের কাজ একতরফাভাবে ছিনিয়ে নেয় সেখানকার ছয় ঠিকাদারদের একটি কথিত সিন্ডিকেট। সাম্প্রতিক সময়ে রেলওয়ের ৫টি দরপত্র থেকে প্রায় ৮০ লাখ টাকার কাজ ভাগিয়ে নেন তারা— এমন অভিযোগ করেছেন সেখানকার একাধিক ঠিকাদার।

তারা অভিযোগ করে বলেন, ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর ৫টি প্যাকেজ সর্বনিম্ন দরপত্র পাওয়ার পরও কাজ পায়নি মেসার্স আনোয়ার ইন্টারপ্রাইজসহ বেশ কয়েকটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। তারা বলেন, রেলওয়ে কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজশ করে ওই সিন্ডিকেট সদস্যরা সারাদেশের রেলওয়ে থেকে নানান কৌশলে দরপত্রগুলো সর্বনিম্ন দরদাতা না হলেও কাজ পেয়ে যায় ওই সিন্ডিকেটের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান।

এদিকে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রথম স্থানে থাকার পরও কাজ পায়নি সেখানকার ঠিকাদার ও প্রতিবন্ধী মো. আলী হোসেন। ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের চিফ কমান্ড্যান্ট কর্মকর্তা ও মহা-ব্যবস্থাপক (জিএম) বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ করেন তিনি।

রেলওয়ে সূত্রে বলছে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর (৫৪.০১.১৫০০.১১৬.০৪.২১৭.১৭) এর একটি দরপত্র আহ্বান করে রেলওয়ের (পূর্বাঞ্চল) চিফ কমান্ড্যান্ট (পূর্ব)। ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর এই দরপত্র খোলা হয়। ৪০১১ মিটারের জলপাই রঙের সবুজ কাপড়, ৩১০৬ মিটারের নেভি ব্লু কাপড়, বুট জুতা-মোজা, রেইনকোর্ট ও পিটি সু-টুপি-নেইমব্যাজ সহ ৫টি প্যাকেজে প্রায় ৮০ লাখ টাকার দরপত্র আহ্বান করে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে ৫টি প্যাকেজের এই দরপত্রে মেসার্স আনোয়ার এন্টারপ্রাইজ ১২ লাখ ৪৩ হাজার ৪১০ টাকা, হানিফ এন্ড সন্স ১৬ লাখ ৪৪ হাজার ৫১০ টাকা ও এসএম ট্রেডার্স ১৯ লাখ ৮৫ হাজার ৪৪৫ টাকার দরপত্র ডাকে তিন প্রতিষ্ঠান। সেখানে সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে মেসার্স আনোয়ার এন্টারপ্রাইজ দরপত্র পাওয়ার কথা থাকলেও সেখানে ওই প্রতিষ্ঠানকে না দিয়ে কৌশলে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দিয়ে দেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। একই নিয়ম অনুসরণ বাকি দরপত্রগুলো এইভাবে কৌশলে সিন্ডিকেটের লোকজনকে দেওয়া হয়।

জানতে চাইলে মেসার্স আনোয়ার এন্টারপ্রাইজ মো. আলী হোসেন বলেন, ‘২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর এ আমার প্রতিষ্ঠান থেকে ২টি দরপত্রের কোটেশন জমা দেওয়া হয়। ১২ লাখ ৪৩ হাজার ৪১০ টাকায় সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রথম অবস্থানে থাকার পরও আমার প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়নি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। ওইদিন সময়মতো দরপত্রের নমুনাও সংগ্রহ করে সেখানে জমা দেওয়া হয়। পরে দরপত্রে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা দরদাতাকে কাজটি দেওয়া হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘এই দরপত্রে অন্য প্যাকেজের ৩১০৬ মিটারের নেভি-ব্লু কাপড়েরও দরপত্রে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা হিসেবে প্রতিয়মান হলেও সেখানে যথাসময়ে কাপড়ের নমুনাও জমা দেওয়া হয়। কিন্তু ওই কাজটি আমাকে দেয়নি ।’

জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ে মহা-ব্যবস্থাপক (পূর্ব) নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এ বিষয়টি ভাল বলতে পারবেন দরপত্রের সংশ্লিষ্ট বিভাগ। সেখানে দরপত্রের বিষয়ে কোন অনিয়ম হলে খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!