রেলের নিয়োগ কমিটিতে দুর্নীতি মামলার ২ আসামি, রেলমন্ত্রীর ‘জিরো টলারেন্সকে’ বুড়ো আঙুল

রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা দিলেও তা বাস্তবে রূপ পায়নি। বরং দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা নিয়োগ দুর্নীতি মামলার দুই আসামিকে আবারও নিয়োগ কমিটির আহ্ববায়ক করা হয়েছে।

নিয়োগ দুর্নীতি মামলার দুই আসামি হলেন রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) পূর্বাঞ্চলের চিফ কমান্ড্যান্ট মো. জহিরুল ইসলাম ও পশ্চিমাঞ্চলের চিফ কমান্ড্যান্ট মোহা. আশাবুল ইসলাম।

২০২২ সালের ৩০ জুন উপসচিব তৌফিক ইমাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তাদের আবারও আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

ওই দুই চিফ কমান্ড্যান্ট দুদকের মামলায় বর্তমানে জামিনে রয়েছেন। এর মধ্যে চিফ কমান্ড্যান্ট (পূর্ব) জহিরুল ইসলামকে পূর্বাঞ্চলের ৮০৬ জন সিপাহী নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক এবং চিফ কমান্ড্যান্ট (পশ্চিম) আশাবুল ইসলাম পশ্চিমাঞ্চলের ২৪ জন (৪ জন এসআই ও ২০ জন এএসআই) নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক করা হয়।

অথচ আগামী ৩০ মার্চ দুই চিফ কমান্ড্যান্টের বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা ১৮৫ জন সিপাহী নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় হাজিরার দিন রয়েছে। ওইদিন মামলার চার্জশিট দেওয়া সম্ভবনা আছে বলেও নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, দুর্নীতির মামলায় আলোচিত হওয়ার পর বর্তমান নিয়োগ বিষয়ক আহ্বায়ক কমিটি যাতে বাতিল করা না হয় সেজন্য তারা গোপনে চালিয়ে যাচ্ছেন তদবির। তবে রেল ভবনে অন্যান্য নিয়োগ কমিটির সদস্যরা আরএনবি রিক্রুটমেন্ট রুলস ১৯৮৫ সংশোধন শেষে নিয়োগে আগ্রহী। এজন্য তারা আগে এটি সংশোধন করে পরে নিয়োগ দিতে চাওয়ায় অভ্যন্তরীণ একটা কোন্দলের সৃষ্টি হয়েছে।

এর আগে ২০১৮ সালে ১৮৫ জন সিপাহী নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সেই নিয়োগ কমিটির আহ্বায়ক মো. ইকবাল হোসেন ও সদস্যসচিব মোহা. আশাবুল ইসলামকে ডাকে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এরপর থেকে সেই অভিযোগের অনুসন্ধান করে আসছিল দুদক। এছাড়া ওইসময় তার বিরুদ্ধে চার এসআই নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগও অনুসন্ধান করে দুদক। কিন্তু সেটিতে কোনো সত্যতা না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এরপর দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর নিয়োগ দুর্নীতিতে তাদের জড়িত থাকার সত্যতা পায় দুদক। ওই ঘটনায় দুদকের উপ-পরিচালক সিরাজুল হক গত ২৮ আগস্ট রেলের পাঁচজনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আশাবুলসহ চারজন ঢাকার উচ্চ আদালত হতে ছয় সপ্তাহের অস্হায়ী জামিন নেন। পরে গত ২৭ অক্টোবর চট্টগ্রামে নিম্ন আদালত থেকে জামিন পান।

ওই দুই চিফ কমান্ড্যান্ট ছাড়া মামলার অন্য আসামিরা হলেন নিয়োগ কমিটির সদস্য বর্তমানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব ফুয়াদ হাসান পরাগ, নিয়োগ কমিটির সদস্য সাবেক সিস্টেম প্রোগ্রাম অফিসার (এসপিও, বর্তমানে অবসরে) মো. সিরাজ উল্যাহ এবং নিয়োগ অনুমোদনকারী পূর্ব রেলের সাবেক জিএম সৈয়দ ফারুক আহমেদ।

এদের মধ্যে জহিরুল ইসলাম সেসময় আরএনবির ঢাকা বিভাগের কমান্ড্যান্ট, আশাবুল ইসলাম চট্টগ্রাম বিভাগের কমান্ড্যান্ট এবং ফুয়াদ হাসান পরাগ রেলওয়ে পশ্চিমাঞ্চলের কমান্ড্যান্ট পদে কর্মরত ছিলেন।

এছাড়া পূর্ব রেলের আরএনবির সাবেক চিফ কমান্ড্যান্ট ইকবাল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলেও তিনি মারা যাওয়ায় মামলায় তার নাম রাখা হয়নি।

দুর্নীতিতে অভিযুক্ত ব্যক্তি কিভাবে আহ্বায়ক হয়েছেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি সংশোধন হওয়ার কথা। যাই হোক, এই বিষয়ে আমার বিস্তারিত জানা নেই।’

এই বিষয়ে জানতে রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসানের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। পরে তার নম্বরে ক্ষুদেবার্তা দিয়ে এই বিষয়ে জানতে চাইলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!