রমজান আসার আগেই ছোলার বাজার চড়া, অথচ আমদানি চাহিদার বেশি

দেশের বাজারে রমজানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য ছোলা। দেশে উৎপাদন কম থাকায় বিদেশ থেকে শুল্কমুক্ত আমদানি করার সুযোগ রেখেছে সরকার। প্রতি কেজি ছোলা আমদানিতে খরচ পড়ে ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে দাম বেড়ে হয় ৭৮ থেকে ৮০ টাকা।

দ্রব্যমূল্য নাগালে রাখতে সরকার শুল্কমুক্ত ছোলা আমদানির সুযোগ দিলেও ভোক্তারা তার সুফল পাচ্ছে না। মধ্যস্বত্বভোগী পাইকার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের পকেটে যাচ্ছে এই দামের বড় অংশ।

আমদানি মূল্য ও খুচরা বাজারের মূল্য অস্বাভাবিক তফাৎ হওয়ায় প্রশ্ন তুলেছে ভোক্তারা। চাহিদার চেয়ে বেশি ছোলা আমদানি হলেও অদৃশ্য কারণে বেড়েছে ছোলার দাম।

গত বছর রোজার আগে অর্থাৎ মার্চ মাসে খাতুনগঞ্জে মণপ্রতি ছোলা বিক্রি হয়েছিল মানভেদে ১ হাজার ৮৫০ থেকে ২২০০ টাকা। অন্যদিকে চলতি বছর রোজার কয়েক মাস আগে থেকেই অস্থির ছোলার বাজার। বর্তমানে মণপ্রতি ছোলা মানভেদে ২৩০০ থেকে ২৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, অনেক সময় পর্যাপ্ত আমদানি হলেও গুদাম থেকে পণ্য কম আসে। তাছাড়া পাইকারি বিক্রেতারা একটু দাম বাড়িয়ে দেন। আবার বিক্রি একটু বেশি হলেও দাম বেড়ে যায়। তবে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি রমজানের আগে যেন আর দাম না বাড়ে— দাবি তাদের।

দেশে বছরে ছোলার চাহিদা ১ লাখ ৪০ হাজার টন। বিপরীতে গত বছরের জুলাই থেকে আমদানি হয়েছে ২ লাখ ২০ হাজার ৩৬৪ টন। চাহিদার বেশি ছোলা আমদানি হলেও ব্যবসায়ীদের কারসাজিতে বাড়ছে ছোলার দাম— এমনটাই বলছে ভোক্তারা।

ভোক্তাদের অভিযোগ, প্রতিবছর রমজান এলেই অজানা কারণে ব্যবসায়ীরা প্রায় প্রতিটি পণ্যের দাম বাড়িয়ে দেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। যথাযথ বাজার তদারকির অভাবে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতোই দাম হাঁকিয়ে নিচ্ছে। তবে রমজান ঘিরে দাম যাতে বাড়তে না পারে সেজন্য বাজারে কড়া নজরদারি রাখা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।

আমদানি-রপ্তানির সঙ্গে জড়িত সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের জুলাই থেকে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর হয়ে দেশে ছোলা এসেছে ২ লাখ ২০ হাজার ৩৬৪ টন। এসব ছোলা আমদানি হয়েছে দুটি দেশ থেকে। রমজান ঘিরে এ বছর সবচেয়ে বেশি ছোলা আমদানি হয়েছে অস্ট্রেলিয়া থেকে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের ডেপুটি কমিশনার আবদুল হান্নান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ছোলাসহ রমজান ঘিরে প্রচুর ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে। তাছাড়া এখনও আমদানি প্রক্রিয়া স্বাভাবিক রয়েছে।

চট্টগ্রাম কাস্টমস ও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে ছোলার বার্ষিক চাহিদা প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার টন। তবে প্রতি বছর চাহিদা বাড়ছে। ছোলার অভ্যন্তরীণ চাহিদার সিংহভাগ পূরণ হয় অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানির মাধ্যমে। রোজায় বাড়তি চাহিদার জেরে মাঝে মাঝে মিয়ানমার থেকেও অল্প পরিমাণ আমদানি করা হয়। এছাড়া দেশেও পণ্যটি অল্প পরিমাণ উৎপাদন হয়।

কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) চট্টগ্রাম অঞ্চলের সভাপতি এসএম নাজের হোসাইন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, বলেন, ৩ মার্চ জেলা প্রশাসনের সাথে ব্যবসায়ী নেতাদের বৈঠক হয়েছে। সেখানে ব্যবসায়ীরা বলছিল, ভোগ্যপণ্যের ব্যাপক আমদানি হয়েছে। তাই দাম বাড়বে না। কিন্তু এখন কেন বাড়ছে? মূলত দেশে বাজার তদারকির কোন ব্যবস্থা নেই। ২ বছর আগে পেঁয়াজ নিয়ে তারা (ব্যবসায়ীরা) তুঘলকি কাণ্ড ঘটিয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এজন্যই ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামত দাম বাড়ানোর সাহস পায়।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!