যেখানে পল্লী চিকিৎসকই এফসিপিএস ডাক্তার!

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার কাঞ্চনা ইউনিয়নের প্রধান স্টেশন ফুলতলায় অবৈধভাবে গড়ে ওঠেছে হেলথ ডায়াগনস্টিক সেন্টার নামের একটি ক্লিনিক। ওই ক্লিনিকে নেই কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তবে নামমাত্র কয়েকজন এমবিবিএস ডাক্তার মাসে দু’একবার আসলেও মূলত চিকিৎসা দিয়ে থাকেন মোহাম্মদ ইউসুফ নামের একজন পল্লী চিকিৎসক।

রোগীদের অভিযোগ- মোহাম্মদ ইউসুফ পল্লী চিকিৎসক হলেও তিনি কখনও পরিচয় দেন এমবিবিএস ডাক্তার আবার কখনও এফসিপিএস ডাক্তার। এমনকি তিনি অন্য ডাক্তারের রেখে যাওয়া প্যাড ব্যবহার করে রোগীও দেখছেন নিয়মিত। মূলত ক্লিনিকটি ২৪ ঘন্টা খোলা রেখে তিনি অচেনা-অজানা রোগীদের বিসিএস ডিগ্রিধারী বলে ক্লিনিকে ভর্তি করিয়ে নিজেই চিকিৎসা দিচ্ছেন। রোগীর অবস্থা যখন একটু অবনতি হয় তখন তিনি তাকে দ্রুত চট্টগ্রামের যেকোনো হাসপাতালে রেফার করে দেন। এমনকি তার ভুল চিকিৎসায় মারা গেছেন দু’একজন রোগীও।

সর্বশেষ গত ১০ জুন তার ভুল চিকিৎসায় মারা গেছেন কাঞ্চনার টেন্ডুল পাড়ার প্রবাসী আবু বক্করের এক শিশু সন্তান। বিষয়টি জানাজানি হলে ভুয়া চিকিৎসক ইউসুফ ও ওই ক্লিনিকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ উঠে সাতকানিয়ার সর্বমহলে। প্রতিবাদের এক পর্যায়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন পল্লী চিকিৎসক ইউসুফ।

মৃত শিশুর মামা মো. মিজান অভিযোগ করে বলেন, হেলথ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের প্রভাবশালী এক পরিচালক ও স্থানীয় ইউপি সদস্য শহিদ মেম্বার ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

ভুল চিকিৎসায় শিশুর মৃত্যু এবং এফসিপিএস পরিচয় দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে অভিযুক্ত পল্লী চিকিৎসক মো. ইউসুফ বলেন, আমি আসলেই পল্লী চিকিৎসক। আমি কাউকে এমবিবিএস বা এফসিপিএস ডাক্তার পরিচয় দিই না। আমি মূলত চিকিৎসক। তবে ঐ শিশু আমার কাছে চিকিৎসা নেওয়ার আগে সাতকানিয়া আলফা হাসপাতালেও চিকিৎসা নিয়েছিল। বাকিটা আমি জানি না।

এ বিষয়ে কাঞ্চনা ফুলতলার হেলথ ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আবুল কালাম বলেন, মো. ইউসুফ কোন পাস করা ডাক্তার নয়, এটা সত্য। তবে সে আমার হাসপাতালের পরিচালক। শিশুটিকে সে নিজের তত্ত্বাবধানে রেখে চিকিৎসা দেয়। এটার জন্য আমার পরিচালনাধীন ক্লিনিক দায়ী নয়।

ক্লিনিকের অনুমোদন আছে কিনা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আসলে আমি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে অনুমোদন নিয়েছি। সেটা হচ্ছে ট্রেড লাইসেন্সের মাধ্যমে। আর কোথা থেকে অনুমোদন নিতে হয় আসলে আমার জানা নেই।

অবৈধ অনুমোদন ও ভুয়া ডাক্তারের বিষয়ে সাতকানিয়ার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আল বশিরুল ইসলাম বলেন, বিষয়টি অবশ্যই স্পর্শকাতর। শীঘ্রই ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালানো হবে। ভুয়া ডাক্তার পরিচয় দিয়ে কেউ পার পাবে না।

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!