যাত্রী পারাপারের আয়োজন থেমে গেল কর্ণফুলীর সাম্পান মাঝিদের

কর্ণফুলী নদীর সাম্পান মাঝিদের বৈঠা আর চলছেনা। ঘাটে ভিড় করা সাম্পানের ঝাঁক থেকে যাত্রীদের ডাকাডাকি করছেনা মাঝি। মাঝিদের হাঁকডাকহীন ঘাট জুড়ে শুধুই এখন নিস্তব্ধতা।

সোমবার (১৩ এপ্রিল) সকালে কর্ণফুলী নদী পাড়ের সদরঘাট এলাকার চিত্র ছিল এমন। নদীর ওপারের মানুষদের প্রতিদিন এপারে ঘটা করে আনানেওয়ার আয়োজন থামিয়ে দিল করোনাভাইরাস!

জানা গেছে, চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস আক্রান্তের পর থেকে যানবাহন ও লোকজনের চলাচলের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও কর্ণফুলী নদী পাড়ের ঘাট ব্যবহার করে সাম্পানে যাত্রী পারাপার চালু ছিল এতদিন। ফিরিঙ্গীবাজারে করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ায় এবার বন্ধ করা হল সাম্পান চলাচল।

এরমধ্য দিয়ে কর্ণফুলীর তিন হাজার সাম্পান মাঝির আয়-রোজগারের পথও বন্ধ হয়ে গেল অনির্দিষ্টকালের জন্য।

সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি এসএম পেয়ার আলী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতি বিবেচনা করে সাম্পান চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে জরুরি সেবার জন্য কয়েকটি ঘাটে কিছু সংখ্যক সাম্পান চলাচল করবে। আগেই সাম্পান বন্ধের জন্য বলা হয়েছিল। কিন্তু মৌখিকভাবে বলায় কিছু কিছু সাম্পান চলাচল করতো। এখন যেহেতু ফিরিঙ্গিবাজারে করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে তাই আমরা আর কোন ঝুঁকি নিচ্ছি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষে সাম্পান বন্ধের বিজ্ঞপ্তি আমরা রোববার হাতে পেয়েছি। বিজ্ঞপ্তিতে দেওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী শুধুমাত্র জরুরী সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি এবং ঔষধ, খাদ্যদ্রব্য ও রপ্তানি পণ্য পারাপার করা যাবে। এ ক্ষেত্রেও সামজিক দূরত্ব বজায় রেখে পারাপার করতে হবে।’

জানা যায়, করোনার ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য চট্টগ্রামে যানবাহন চলাচলের নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সদরঘাট, অভয়মিত্রঘাট, কর্ণফুলীঘাটসহ ১৫ থেকে ১৬টি ঘাট দিয়ে প্রতিনিয়তই যাত্রী পারাপার চলছিল। ফিরিঙ্গীবাজারে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মচারীর বাড়ি কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ পাড়ে হওয়ায় সাম্পান মাঝিদের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। কারণ ওই পাড়ের লোকজন সাম্পান দিয়েই নদী পার হতো।

কয়েকজন মাঝি এ বিষয়ে বলেন, ‘নদীর দক্ষিণ পাড়ের লোকজনই ঘাট ব্যবহার করে এ পাড়ে আসেন। ফিরিঙ্গী বাজারে আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতিষ্ঠানের দুই কর্মচারীর বাড়ি ওই পাড়ে হওয়ায় আমাদের মধ্যে আতংক কাজ করছে। তাই সাম্পান মাঝি কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতির নির্দেশনায় রোববার থেকে সাম্পান চালানো আমরা বন্ধ রেখেছি।’

এদিকে নদীতে নৌযান চলাচল বন্ধের ফলে আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে সবচেয়ে বিপদে পড়বে সাম্পান মাঝিরা। তাদের কথা বিবেচনায় নিয়ে ইতোমধ্যে মাঝিদের অার্থিক সহায়তা প্রদান করেছে সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন।

সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি এস এম পেয়ার আলী এ বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের ফেডারেশনের অধীনে প্রায় তিন হাজার সাম্পান মাঝি আছে। তাদের মধ্যে ব্রীজঘাট সাম্পান মাঝিদের প্রত্যেককে ২ হাজার টাকা এবং কর্ণফুলী ঘাটের মাঝিদের দেড় হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হয়েছে। সামর্থ্য অনুযায়ী ফেডারেশনের পক্ষ থেকে সাহায্য করা হয়েছে।’

কয়েকজন মাঝি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রোজগার কতদিনের জন্য বন্ধ হল জানিনা। ফেডারেশনের পক্ষ থেকে কিছু টাকা দিয়েছে। এই টাকা দিয়ে কয়েকদিন হয়তো সংসার চলবে। এরপর কিভাবে পরিবারের খাবারের ব্যবস্থা করবো সেটাই এখন চিন্তার বিষয়।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!