মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির ‘ডাবল ডিজিটে’ চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগ

২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর ইমরান আহমেদ ইমুকে সভাপতি ও নূরুল আজিম রনিকে সাধারণ সম্পাদক করে এক বছরের জন্য চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর কেটে গেছে ৯ বছর। এখনও ভাঙেনি সেই ‘এক বছরের কমিটি’। এরমধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের ক্ষমতা বদল হয়েছে তিনবার। কিন্তু চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগ চলছে প্রায় এক দশক আগের কমিটি দিয়ে। কবে ফুরাবে এই কমিটির মেয়াদ—এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন নগরের পদপ্রত্যাশীরা।

ইমু-রনি দায়িত্ব নেওয়ার পর ২৯১ জনের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর বিভিন্ন সময় আরও বেশ কয়েকজনকে কমিটিতে পদ দেওয়া হয়। সেই হিসেবে কমিটির সদস্য সংখ্যা তিনশ’ ছাড়িয়েছে। তবে এ কমিটির বেশিরভাগ নেতাই অছাত্র। অনেকে রাজনীতি ছেড়ে করছেন চাকরি। প্রায় একশ’র মতো নেতা বিয়ে করে হয়েছেন সংসারী।

নগর ছাত্রলীগের কমিটিতে থাকা অনেকে এখন দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন যুবলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের পদবির জন্য। অনেকে পদত্যাগপত্রও জমা দিয়েছেন। তাদের জন্য নগর ছাত্রলীগের পদ এখন ‘গলার কাঁটা’।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও তাঁতী লীগের সম্মেলন হয়েছে। ক্ষণগণনা চলছে নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনেরও। কিন্তু নগর ছাত্রলীগের কমিটি ভাঙার কোনো সাড়া নেই।

এদিকে একাধিকবার নতুন কমিটি পেয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ। নগর ছাত্রলীগের একাধিক কর্মী জানান, নতুন নেতৃত্ব আসতে পারছে না। অনীহা তৈরি হচ্ছে পদবঞ্চিতদের মধ্যে। বর্তমান কমিটির বেশিরভাগেরই ছাত্রত্ব নেই, সংসারি হয়েছেন অনেকে। সংসার সামলাতে ও নিজের কর্মে মনোযোগ দিতে গিয়ে সময় দিতে পারছেন না সংগঠনকে।

গত ১০ বছরে নগরের ১৫টি থানার মধ্যে ১৩টির আংশিক কমিটি ঘোষণা করেছে নগর ছাত্রলীগ। বাকি রয়েছে খুলশী ও ইপিজেড থানা কমিটি। এর আগে ১, ২, ১০ এবং ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া হয়। তবে বেশিরভাগ কমিটির বিপরীতে দেওয়া হয়েছে পাল্টা কমিটি। সরকারি সিটি কলেজ, মহসিন কলেজ, চট্টগ্রাম কলেজ, কমার্স কলেজ ও ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের কমিটি দেওয়া হলেও রাজনীতির আঁতুড়ঘর খ্যাত এমইএস কলেজে কমিটি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন নগরের নেতারা।

সভাপতি-সম্পাদকের পদত্যাগ ছাড়া কমিটি বিলুপ্ত হবে না বলে জানিয়েছেন নগর ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ওয়াহেদ রাসেল। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রীয় সভাপতি মো. সাইফুর রহমান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক এসএম জাকির হোসাইনের সময় থেকে আমরা ৯০ থেকে ৯৫ জন পদত্যাগপত্র জমা দিয়ে আসছি। বর্তমান কমিটিকে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছি। কিন্তু সভাপতি-সম্পাদকের পদত্যাগ ছাড়া কমিটি বিলুপ্ত হবে না বলে জানানো হয়েছে। বিপুল পরিমাণ নেতৃবৃন্দের পদত্যাগে কমিটি বিলুপ্ত হয় কি-না বা সংগঠনের গঠনতন্ত্রে এমন কিছু আছে কি-না তা আমার জানা নেই।’

চট্টগ্রাম নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীর বলেন, ‘অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে সম্মেলনের দিন ঠিক করবে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। তবে আমরা সকল নির্দেশনা মেনে সম্মেলনের জন্য প্রস্তুত রয়েছি। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ যতদিন কমিটি বিলুপ্ত করছে না ততদিন দায়িত্ব পালন করে যাবো।’

চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ চৌধুরী বলেন, ‘সাংগঠনিক রিপোর্ট কেন্দ্রীয় সভাপতি-সম্পাদককে জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবেন। যে সকল কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ, সেসব কমিটির বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত এসেছে। পর্যায়ক্রমে কমিটিগুলো করা হবে। তবে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্রলীগের সম্মেলন হবে।’

এ বিষয়ে জানতে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি আল নহিয়ান খান জয় ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্যের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ফোন কল রিসিভ করেননি।

২০১৩ সালের ৩০ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের অনুমোদনে ইমরান আহমেদ ইমুকে সভাপতি এবং নূরুল আজিম রনিকে সাধারণ সম্পাদক করে ২৪ জনের আংশিক কমিটি দেওয়া হয়। ২০১৪ সালের ১১ জুলাই এসে ২৯১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটির অনুমোদন পায়। তবে ২০১৮ সালের ২০ এপ্রিল নূরুল আজিম রনির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তাকে অব্যাহতি দিয়ে স্থলাভিষিক্ত করা হয় জাকারিয়া দস্তগীরকে।

কেন্দ্রীয় কমিটির ২০১১ থেকে ২০১৫ মেয়াদে সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমের কমিটির পর ২০১৫ থেকে ২০১৮ মেয়াদে মো. সাইফুর রহমান সোহাগ সভাপতি ও এসএম জাকির হোসাইন সাধারণ সম্পাদক হন। এ কমিটির কার্যক্রম শেষে ২০১৮ থেকে ২০১৯ মেয়াদে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন সভাপতি ও মো. গোলাম রাব্বানী সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পর বর্তমানে আল নহিয়ান খান জয় সভাপতি ও লেখক ভট্টাচার্য সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!