মামলা তুলে নিতে জেলে বসেই অপহরণের হুমকি

রাঙামাটি বাঘাইছড়ি সাজেকের ছয়নালছড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ফারুক আহম্মেদ তালুকদার বিপু জেলে আটক আছেন। বুধবার সন্ধ্যায় এক ঠিকাদার দম্পতিকে মেরে ‘রক্তাক্ত ও শ্লীলতাহানীর’ মামলায় তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এবার জেলে বসেই সহযোগিদের দিয়ে ওই দম্পতিকে ‘মামলা তুলে না নিলে সন্তানকে বিদ্যালয় থেকে অপহরণ’ করার হুমকি পাঠিয়েছেন ।

আজ রোববার দুপুরে রাঙামাটি রিপোর্টাস ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে এমন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগি এমদাদুল ইসলাম ও তার স্ত্রী সাজিয়া পারভিন। একই সাথে ‘বখাটে স্কুল শিক্ষক বিপু ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর অত্যাচার নির্যাতন ও প্রাণনাশের হুমকি থেকে রেহাই পেতে’ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চেয়েছেন তারা।

সাজিয়া পারভিন বলেন, গত ২৭ মার্চ বুধবার সন্ধ্যায় রাঙামাটি শহরের বনরূপা এলাকায় ডাক্তার দেখাতে গিয়ে স্বামী এমাদুল ইসলামসহ তারা স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই বেধড়ভাকে মারধর করে। এছাড়া তাদের সঙ্গে থাকা ৭০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয় রাঙামাটি শহরের পুরান পাড়ার বাসিন্দা বিপু ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী।

এই ঘটনায় আহত হয়ে তারা রাঙামাটি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফেরার পর শুক্রবার সন্ধ্যায় বসতঘরে আবারো হামলা চালায় বিপু ও তার বাহিনীর সদস্যরা। এসময় কোতয়ালী থানা পুলিশের মাধ্যমে ফারুক তালুকদার বিপুকে হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়। এই ঘটনায় মামলা দায়ের করা হলে সেই মামলায় বিপুকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে প্রেরণ করলে আদালত আসামীকে জেল হাজতে প্রেরণ করে। এই ঘটনার পর হতেই বিপুর পিতা ও ক্যাডার বাহিনীর অব্যাহত হুমকিতে বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান এমাদুল দম্পতি।

এমদাদুল জানান, ফারুক আহাম্মেদ তালুকদার বিপু’র পিতা একজন মুক্তিযোদ্ধা এটাকে পূঁিজ করে সে বিগত ১০ বছর যাবৎ তার কর্মস্থল রাঙামাটির বাঘাইছড়ির সাজেকে ছয়নালছড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একদিনের জন্যেও যায়নি। এর প্রমাণ ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ উপজেলা শিক্ষা অফিসার নিজেই। বিপু রাঙামাটিতে থেকে অসামাজিক ব্যবসা, ফার্নিচারের পারমিট ব্যবসাসহ মাদকের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। কোতয়ালী থানায় তার বিরুদ্ধে অন্তত শতাধিক অভিযোগ রয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে উক্ত দম্পতি দাবি করেন।

বিপুর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ: সংবাদ সম্মেলনে এমাদুল দম্পতি বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হয়ে রাঙামাটি শহরে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে সন্ত্রাসী বিপু ও তার বাহিনীর সদস্যরা। শুধু তাই নয়, বিপু অন্যের স্ত্রীকে জোর করে তুলে নিয়ে বিয়ে করেছে। প্রথম স্ত্রীকে তালাক না দিয়ে আবারো দ্বিতীয় বিয়ে করা, বিভিন্ন মানুষের ছবি ও আইডি কার্ড সংগ্রহ করে সেগুলোর মাধ্যমে অবৈধ ফার্নিচারের পারমিটের ব্যবসা, দীর্ঘ অন্তত ১০ বছর যাবৎ নিজ কর্মস্থল বাঘাইছড়ির ছয়নালছড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে না গিয়ে বর্গা শিক্ষক দিয়ে চাকরি চালানো, প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারকে ছুরি দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে জোর করে বেতন উত্তোলন, শহরের আবাসিক হোটেলগুলোকে অসামাজিক কার্যকলাপ পরিচালনাসহ মাদকের ব্যবসা করা, নিজ রক্তের ছোট ভাইকে ভাড়াটে সন্ত্রাসীর মাধ্যমে হত্যার চেষ্টাসহ এলাকাবাসীকে ছুরি মেরে হত্যার চেষ্টার মতো অপরাধ করেও মুক্তিযোদ্ধা পিতার সাইনবোর্ড ব্যবহার করে এতোসব অপকর্ম করেও এই ফারুক আহাম্মেদ তালুকদার বিপু ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা বারংবার আইনের হাত থেকে পার পেয়ে যাচ্ছে।

এই সন্ত্রাসীকে জামিন না দিয়ে তার বিরদ্ধে প্রশাসনকে কঠোর অবস্থান নিয়ে আইনের সুষ্ঠ প্রয়োগের মাধ্যমে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানিয়েছেন নির্যাতনের শিকার এমাদুল ও তার স্ত্রী।
তবে ফারুক আহাম্মেদ তালুকদার বিপু জেলে থাকায় এই বিষয়ে তার বক্তব্য নেয়া যায়নি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!