‘ভাইয়ের লোকে’ ভরা যুবলীগের নতুন কমিটি— তৃণমূলে ক্ষোভ-হতাশা

‘বিএনপি পরিবারের লোকও পেছনের দরজায় ঠাঁই পেয়েছেন’

বেশ ঢাকঢোল পিটিয়ে ‘শুদ্ধি অভিযানের’ নামে লম্বা সময় নিয়ে যুবলীগের কমিটি গঠন করা হলেও বিতর্ক এড়াতে পারেনি বহুল আলোচিত এই কমিটিও। বরাবরের মতই ‘ভাই-রাজনীতি’ ঘরানার লোকদের নিয়েই এবারের কমিটি করা হয়েছে— এমন অভিযোগও তুলেছেন কেউ কেউ। পাশাপাশি চট্টগ্রাম মহানগর থেকে কাউকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান না দেওয়া নিয়েও সমালোচনায় মুখর হয়েছেন কেউ কেউ।

চট্টগ্রাম থেকে যুবলীগের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পাওয়ার বিষয়ে শুরু থেকেই আলোচনায় ছিলেন করোনা আইসোলেশন সেন্টার চট্টগ্রামের উদ্যোক্তা মোহাম্মদ সাজ্জাত হোসেন। তবে শেষমেশ পদ পাচ্ছেন না— এমন অনুমান থেকেই শুক্রবার রাতে নিজের ফেসবুক টাইমলাইনে এক লাইনের একটি স্ট্যাটাসে সাজ্জাত হোসেন লিখেছেন, ‘আমার কাছে টাকা ছিল না।’

যুবলীগের কমিটিতে পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে টাকার লেনদেনের অভিযোগ উঠা এমন প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে করোনাকালে আইসোলেশন সেন্টার করে আলোচনায় থাকা এই সংগঠক বলেন, ‘ওটা আমি আসলে যুবলীগের বিষয় নিয়ে লিখি নাই।’ প্রথমে অস্বীকার করলেও নিজেও খারাপ লাগা চেপে না রেখে তিনি বলেন, ‘তবে যুবলীগের কমিটি নিয়ে দুঃখবোধ তো থাকবেই— এটা স্বাভাবিক। কারণ নেত্রী বারবার বলেছেন, করোনাকালে যারা মানবিক কাজ করেছেন তাদের যেন মূল্যায়ন করা হয়। যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান নানক ভাই এবং বর্তমান চেয়ারম্যান পরশ ভাইও বারবার এই কথা বলছিলেন। কিন্তু বাস্তবে তার প্রতিফলন হলো না।’

বরাবরের মত ‘ভাইয়ের’ পেছনে হাঁটা লোকদের নিয়ে কমিটি করা হয়েছে মন্তব্য করে সাজ্জাত বলেন, “যুবলীগের যারা নেতা হয়েছে, আমি সিনিয়রদের কথা বলবো না তারা কে কোথায় কাজ করছে? তাদের দলের প্রতি দেশের প্রতি কন্ট্রিবিউশন কী? এখানে বেশিরভাগ হলো ‘ভাইয়ের’ রাজনীতি করা লোক। যারা ‘ভাইয়ের’ রাজনীতি করে, তাদের নামই আসছে। এটা মূলত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যুবলীগ কমিটি হয়েছে। যুবলীগে আসার মত সারা চট্টগ্রাম মহানগরে কি একটা লোকও ছিল না?”

এদিকে কমিটিতে চট্টগ্রাম মহানগর থেকে কারও স্থান না হওয়া নিয়ে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ করে নগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি এক ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে চট্টগ্রাম থেকে ঠাঁই পেয়েছেন দৃশ্যত সংখ্যা দশজন। দশজনের মধ্যে ৬ জনের বাড়ি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলায়। তবে এদের মধ্যে একজন শুধু জেলা-উপজেলাভিত্তিক রাজনীতি করে নেতা হয়েছেন। অন্যরা যুবলীগের কেন্দ্রীয় রাজনীতির সাথে আগে থেকে সম্পৃক্ত ছিলেন অথবা কেন্দ্রীয় বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের রাজনীতিতে নেতৃত্বে ছিলেন। বাকিদের বাড়ি চট্টগ্রাম উত্তর জেলায়। তবে কথা হচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগরের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকা কেউ এ কমিটিতে ঠাঁই পায়নি। সম্ভবত চট্টগ্রাম মহানগরের ভেতরে চট্টগ্রাম দক্ষিণ ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয় অবস্থিত হওয়ার কারণে চট্টগ্রাম নগরে যে রাজনৈতিক কার্যক্রম পরিচালিত হয় এটা ভুলে গেছেন অনেকে।’

কমিটিতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলার বিএনপি পরিবারের একজনকে বিশেষ কারণে পদ দেওয়া হয়েছে দাবি করে তিনি লিখেছেন, ‘অপর একজন জন্মসূত্রে বিএনপি পরিবারের সন্তান। ইতিপুর্বে কোন রাজনৈতিক মিটিং মিছিলে তাকে দেখা না গেলেও কথিত আছে, চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যে ভীষণ প্রভাব রাখা এই ব্যক্তি ঢাকায় গিয়ে অথবা চট্টগ্রাম কক্সবাজারে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা বেড়াতে আসলে লাল বোতলে আপ্যায়নের কাজটি করেন তিনি।’

গত বছরের সেপ্টেম্বরে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ। ব্যাপকভাবে সমালোচনার মুখে পড়ে যুবলীগ। সংগঠনের তৎকালীন চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। বেশ কয়েকজন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। কেউ কেউ গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে যান।

পরে শুদ্ধি অভিযানের কথা বলে সংগঠনটির জাতীয় সম্মেলন করা হয় ওই বছরের ২৩ নভেম্বর। সম্মেলনে নতুন চেয়ারম্যান হন শেখ ফজলে শামস পরশ ও সাধারণ সম্পাদক হন মাইনুল হোসেন খান নিখিল। এরপর থেকে ছেঁকে-বেছে যোগ্য ও প্রতিশ্রুতিশীল তরুণদের নিয়ে ‘নতুন এক যুবলীগ’ গড়ার কথা বলে আসছিলেন সংশ্লিষ্টরা। তবে দৃশ্যত এই কমিটি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উল্লেখযোগ্য অংশকে হতাশ করেছে।

চট্টগ্রাম থেকে যারা পদ পেলেন
শনিবার (১৪ নভেম্বর) ঘোষিত যুবলীগের ২০১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে স্থান পেয়েছেন চট্টগ্রামের নয়জন নেতা। এদের মধ্যে তিনজন যুবলীগের গত কেন্দ্রীয় কমিটিতেও ছিলেন।

চট্টগ্রামের পটিয়ার সন্তান যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম নতুন কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন। সিটি কলেজ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক আবু মুনির মো. শহীদুল হক রাসেল নতুন কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন।

যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক উপ কৃষি ও সমবায় সম্পাদক মীর মো. মহিউদ্দিন নতুন কমিটিতে পেয়েছেন তথ্য ও গবেষণা সম্পাদকের পদ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি আদিত্য নন্দী নতুন কমিটির উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন। দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী সদস্য ও পটিয়া উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান যুবলীগের নতুন কমিটিতে উপ-ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও সাতকানিয়া পৌর আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন মিন্টু যুবলীগের নতুন কমিটিতে সহ-সম্পাদক মনোনীত হয়েছেন। এছাড়া কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সদস্য মো. মোনায়েম খান, চন্দনাইশের গাছবাড়িয়া কলেজের সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ এবং আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য নিয়াজ মোর্শেদ এলিট নতুন কমিটিতে নির্বাহী সদস্য পদে স্থান পেয়েছেন।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!