বিএমএসহ তিন সংগঠন হঠাৎ কেন বিবৃতিতে— বিস্ময় ছাত্রলীগ নেতাদের

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ক্যাম্পাসকে যারা গত দুই যুগে বারবার রক্তাক্ত করার নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারা আবারও এ ধরনের কর্মকাণ্ড ঘটানোর পাঁয়তারা করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন চমেক ছাত্রলীগের সাত নেতা।

বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) গণমাধ্যম পাঠানো এক বিবৃতিতে এ অভিযোগ করেন তারা।

এছাড়া একটি সন্ত্রাসী কর্মকান্ডকে সমর্থন জানিয়ে মেডিকেল এসোসিয়েশন চট্টগ্রাম (বিএমএ), ইন্টার্নি ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) ও চমেক ছাত্রসংসদ তাদের ভাবমূর্তিতে কালিমা লেপন করেছে বলেও ওই বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়।

বিবৃতিতে তারা বলেন, গত ১২ জুলাই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কোভিড রোগীদের চিকিৎসা সহায়তায় দুটি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা প্রদান শেষে স্থানীয় সাংসদ ও শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ক্যাম্পাস ত্যাগের পরপরই চমেকের বিভিন্ন বর্ষে পড়ুয়া ছয়জন ছাত্রের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা চালানো হয়। ওই শিক্ষার্থীদের আহত করার প্রকাশ্য সন্ত্রাসী ঘটনাকে ভিন্নখাতে রূপ দেওয়ার অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (১৬ জুলাই) বিভিন্ন গণমাধ্যমে চট্টগ্রাম বিএমএ, আইডিএ ও চমেক ছাত্রসংসদের পৃথক কিন্তু একই বক্তব্য সম্বলিত বিবৃতি এ সংগঠনগুলোর ভাবমূর্তিতে কালিমা লেপন করেছে।

বিবৃতিতে তারা বলেন, ওই দিন সংঘটিত বিচ্ছিন্ন সন্ত্রাসী ঘটনার সাথে এই তিন সংগঠনের বক্তব্যের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। এটি পুরোপুরি একটি পরিকল্পিত সন্ত্রাসী ঘটনা। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহোদয়ের চমেক হাসপাতালে আগমন ও উপস্থিতিকে অহেতুক বিতর্কিত করার লক্ষ্যে আগে থেকেই সিক্রেট ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে ওই দিনের সন্ত্রাসী ঘটনার জন্ম দেওয়া হয়েছে। ম্যাসেঞ্জার গ্রুপের যাবতীয় স্ক্রিনশট আমাদের কাছে সংরক্ষিত আছে। গ্রুপ চ্যাট ও ওই দিনের চমেক ও চমেক হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করলেই আমাদের বক্তব্য ও দায়েরকৃত মামলার প্রতিটি শব্দ সত্য বলে প্রমাণিত হবে।

তারা আরও বলেন, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে গত দুই যুগে সংঘটিত যাবতীয় হত্যাকান্ড, রক্তক্ষয়ী সন্ত্রাসী ঘটনার নায়ক ও মামলাগুলোর মূল আসামিরাই ওই দিনের ঘটনার মূল কুশীলব। আমরা যারা হামলার শিকার তারা সবাই চমেকের ছাত্র। আর যারা হামলা করেছে তাদের বেশিরভাগই বহিরাগত এবং বিভিন্ন কর্মস্থলে কর্মরত। কিন্তু পরিকল্পিতভাবে ওই দিন ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে তারা আরেকটি রক্তক্ষয়ী ঘটনার জন্ম দিতে চেয়েছেন।

বিবৃতিদাতারা বলেন, বিএমএর নামে যিনি বিবৃতির স্বাক্ষরদাতা তিনি শিক্ষক হয়েও অধ্যক্ষ কার্যালয়ে অবস্থান করে পুরো ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করেছেন। ১৯৯২ সালে সংঘটিত ট্রিপল মার্ডারের তিনিও মূল আসামি। ২০১১ অক্টোবরের আরেক হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ও আসামিরাই এবারের ঘটনারও মূল নায়ক। এটাই প্রমাণ করে, যারা গত দুই যুগে বারবার উত্তপ্ত ও রক্তাক্ত করার নেতৃত্ব দিয়েছেন তারাই তাদের তালুক রক্ষায় আবারও এ ধরনের কর্মকাণ্ড ঘটানোর চেষ্টা করছেন।

বিবৃতিদাতা হলেন পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী খোরশেদুল ইসলাম ও ইমন শিকদার, তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী অভিজিত দাশ, ফাহাদুল ইসলাম, হোজাইফা বিন কবির, কনক দেবনাথ এবং দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাজেদুল ইসলাম। এরা সকলেই চমেকে গত ১২ জুলাই সিটি মেয়র আজম নাছির উদ্দিনের অনুসারীদের হামলায় আহত হন।

এর আগে গত ১২ জুলাই সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শিক্ষা উপমন্ত্রী ও বাকলিয়া-কোতোয়ালী আসনের সাংসদ মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল চমেক হাসপাতাল পরিদর্শন যান। তিনি হাসপাতাল থেকে ফিরে যাওয়ার পরপরই নওফেলের অনুসারী শিক্ষার্থীদের উপর সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারীরা হামলা চালায়। এ হামলায় নওফেলের অনুসারীদের মধ্যে ৭ জন আহত হন।

শিক্ষা উপমন্ত্রীর হাসপাতাল পরিদর্শনকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে আ জ ম নাছির উদ্দিন ও ডা. ফয়সাল ইকবালের অনুসারীরা এই হামলা চালিয়েছে বলে অভিযোগ নওফেল অনুসারীদের।

এদিকে আ জ ম নাছির উদ্দিন অনুসারীরাও এ ঘটনায় তাদের ৫ কর্মী আহত হয় বলেও দাবি করে।

১৩ জুলাই রাতে চমেকের ছাত্র খোরশেদুল ইসলাম বাদি হয়ে পাঁচলাইশ থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এতে ১৬ জনকে আসামি ও অজ্ঞাত ২০ জনের কথা উল্লেখ করা হয়।

মামলার আসামিরা হলেন চমেকের ৪৯ তম ব্যাচের ডা. সোহেল পারভেজ সুমন, বিডিএস ১৮ তম ব্যাচের ডা. হিমেল চাকমা, বিডিএস ২৫ তম ব্যাচের ডা. সায়েম তানভীর, ৫৬ তম ব্যাচের ডা. ওয়াসিম সাজ্জাদ তানা, ৫৭ তম ব্যাচের ডা. হাবিবুর রহমান, ৫৭ তম ব্যাচের ডা. এম আউয়াল রাফি, ৫৭ তম ব্যাচের ডা. ওসমান গনি, ৫৭ তম ব্যাচের ডা. ফয়সাল আহমেদ, ৫৭ তম ব্যাচের ডা. তাজুয়ান রহমান অয়ন, ৫৭ তম ব্যাচের শাহরিয়ার মো. রাহাতুল ইসলাম, ৫৮ তম ব্যাচের আল আমিন ইসলাম শিমুল, ৫৮ তম ব্যাচের শোয়েব আলী খান, ৫৯ তম ব্যাচের ওয়াহিদ মুরাদ শাহীন, বিডিএস ২৮ তম ব্যাচের মাহাদি বিন হাশিম, ৫৪ তম ব্যাচের ডা. আরমান উল্লাহ চৌধুরী, ৫৩ তম ব্যাচের ডা. নাভিদ তানভীর। এরা সকলেই চট্টগ্রাম সিটি মেয়র আজম নাছির উদ্দিনের অনুসারী।

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!